অতিমারির ধাক্কা ও নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ভ্রমণমুখী হয়ে উঠেছে মানুষ। ২০২৪ সালে প্রায় দেড় বিলিয়ন মানুষ আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে ভ্রমণ করায় অতিমারির আগের জায়গায় ফিরে গেছে পর্যটন খাত।
কার্যত বিমানবন্দরে নিরাপত্তা লাইনে ভিড় বেড়ে গেছে কিংবা হোটেলের জন্য নিবন্ধন একটু আগেভোগেই করতে হচ্ছে।
জাতিসংঘের বিশ্ব পর্যটন সংস্থার (ইউএসডব্লিউটিও) পরিসংখ্যানও সেকথাই জানান দিচ্ছে।
গত বছর প্রায় ১.৪ বিলিয়ন বা ১৪০ কোটি মানুষ আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে ভ্রমণ করেছে, যা ২০১৯ সালে কোভিড সংক্রমণের পূর্ববর্তী সময়ের প্রায় কাছাকাছি।
আর পর্যটন শিল্পে ২০২৪ সালে ১.৯ ট্রিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে, যার মানে প্রতি পর্যটক গড়ে এক হাজার ডলার বা তার বেশি খরচ করেছেন।
কোথায় ছিল গন্তব্য?
২০২৪ সালে সবচেয়ে বেশি পর্যটক দেখেছে ইউরোপ। মহাদেশটিতে ৭৪৭ মিলিয়ন পর্যটক আসে বলে ইউএনডব্লিউটিও’র হিসেব বলছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে কিছু অঞ্চল পর্যটকদের জন্য বন্ধ থাকার পরও এ সংখ্যা অভাবনীয় বলে সংস্থাটির ভাষ্য।
ইউরোপের মধ্যে সবেচেয়ে বেশি পর্যটক গিয়েছে ফ্রান্সে। দেশটিতে একশ’ মিলিয়ন পর্যটক ভ্রমণ করেছে। আর দ্বিতীয় স্থানে স্পেন; যেখানে ৯৮ মিলিয়ন পর্যটক ভ্রমণে গিয়েছিল গেল বছর।
ফ্রান্সের জাতীয় পর্যটন বিপণন বিভাগ অ্যাটাউট এক বিবৃতিতে জানায়, ফ্রান্সের পর্যটনে ২০২৪ সাল একটি ব্যতিক্রমী বছর ছিল, যা ২০২৫ সালেও আশা দেখাচ্ছে।
২০২৪ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক, প্যারিসের আইকনিক নটর ডেম ক্যাথেড্রালের উদ্বোধন এবং নর্ম্যান্ডিতে ডি-ডে অবতরণের ৮০তম বার্ষিকীর কারণে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পর্যটক ফ্রান্সে গিয়েছিল বলেও তারা বিবৃতিতে জানিয়েছে।
পক্ষান্তরে ২০২৪ সালে ৩১৬ মিলিয়ন ভ্রমণকারীর দেখা পেয়েছে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল।
এছাড়া ২১৩ মিলিয়ন পর্যটক আমেরিকা মহাদেশ, ৯৫ মিলিয়ন মধ্যপ্রাচ্য এবং ৭৪ মিলিয়ন আফ্রিকা ভ্রমণ করেছে। অবশ্য অ্যান্টার্কটিকার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
বড় দেশের বড় অর্জন
শুধু বড় পর্যটন অঞ্চলগুলোতেই ভ্রমণকারী বাড়ছে এমনটি নয়। মধ্যপ্রাচ্যের কাতারে গত বছর ১৩৭ শতাংশ পর্যটক বেড়েছে, যা মূলত দেশটির অবকাঠামোতে বিনিয়োগের ফলে হয়েছে।
এছাড়া কাতার এয়ারওয়েজ ২০২৪ সালে সেরা এয়ারলাইন এবং দোহার হামাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বিশ্বের সেরা বিমানবন্দরের খেতাব জিতেছে।
ফ্রান্স-স্পেন সীমান্তবর্তী অ্যান্ডোরা, ডমিনিকান রিপাবলিক, কুয়েত এবং এল সালভেদরেও প্রচুর পর্যটক দেখেছে।
২০২৫ ও সামনের লক্ষ্য
দেখে মনে হচ্ছে বিশ্বব্যাপী পর্যটন শুধু আগের জায়গায় ফিরছে না; আরও ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে।
২০২৪ সালে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্যটক পাওয়া স্পেনে বেশ কয়েকটি পর্যটন বিরোধী আন্দোলনও হয়েছে। বার্সেলোনায় পর্যটকদের ওপর ওয়াটার পিস্তল দিয়ে আক্রমণ, সেভিলে এন্ট্রি ফি আরোপ এবং ক্যানারি আইল্যান্ডসে বিক্ষোভ হয়েছে।
পর্যটকের ভিড় ঠেকাতে ইতালির ভেনিস ও ফ্লোরেন্সে বড় দলের ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এছাড়া রাতে সাঁতারকাটার ওপরও আরোপিত হয়েছে বিধিনিষেধ।
এসব বিষয়কে এড়িয়ে যাওয়ার জন্য ২০২৫ সালে পর্যটকদের তুলনামূলক কম জনপ্রিয় দর্শনীয় অঞ্চলে ঝুঁকতে পরামর্শ দিয়েছে ইউএসডব্লিউটিও।