সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর থানায় পুলিশের মামলায় এমন ১২ প্রবাসীকে আসামি করা হয়েছে যারা গত দেড় থেকে দুই বছরের মধ্যে বাংলাদেশেই যাননি।
গত ২৯ অক্টোবর ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে জগন্নাথপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শাহীন মিয়া ওই মামলাটি করেন।
আসামিদের মধ্যে প্রবাসী তানিউর রহমান শাওন ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে যুক্তরাজ্যে,মিটুন দেব ২০২৩ সালের জুন থেকে কানাডা, হুমায়ুন খাঁন ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে যুক্তরাজ্যে, সাইদুল হক পাপ্পু ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে রোমানিয়া, ফরহাদ আহমেদ ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে যুক্তরাজ্যে, লিপন আহমেদ ২০২৩ সালের মে মাস থেকে যুক্তরাজ্যে, আমির খান সাব্বির ২০২৩ সালের মার্চ মাস থেকে যুক্তরাজ্যে, রুহেল আহমেদ ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে যুক্তরাজ্যে, সৈয়দ আরিফ ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে যুক্তরাজ্যে, মিনহাজ আফ্রিদি ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে যুক্তরাজ্যে ও আমিনুল ইসলাম মিজু ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন।
দেশে থাকাকালীন ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এই প্রবাসীরা।
মামলার এজাহারে ঘটনার বর্ণনায় বলা হয়েছে, গত ২৮ অক্টোবর রাতে জগন্নাথপুর স্বরূপ চন্দ্র সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন একটি শপিং কমপ্লেক্সের অফিস রুমে ১১০ থেকে ১১৫ জন নেতাকর্মী গোপন বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন।
খবর পেয়ে পুলিশের দুটি টহল দল আসামিদের আটকের চেষ্টা করলে একজন ছাড়া সবাই পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
আটক হওয়া আসামি জগন্নাথপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি আজিজুল হক সুমন।
পরদিন আজিজুল হক সুমনকে এক নম্বর আসামি এবং ৫২ জনকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত উল্লেখ করে মামলা দায়ের করে পুলিশ। এছাড়া ৫০ থেকে ৬০ জনকে করা হয় অজ্ঞাত আসামি।
পুলিশের দাবি, আসামিরা অর্ন্তবর্তী সরকারের পতন ও দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃস্টি করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও ক্ষয়ক্ষতি করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল।
এর মধ্য দিয়ে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫ (৩) ও ২৫ (ডি) ধারায় তারা অপরাধ করেছে বলে পুলিশের এজহারে উঠে এসেছে।
তবে দ্য সান ২৪ ওই এলাকার বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছে যে ৫২ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তাদের মধ্যে ১২ প্রবাসী দেশ ছাড়ার আগে জগন্নাথপুর উপজেলা ও বিভিন্ন ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেন, “কয়েক বছর ধরেই তারা প্রবাসী। তবে উপজেলা ছাত্রলীগ ও ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কমিটিতে তাদের নাম রয়ে গেছে।”
২০২১ সালের ২৬ অক্টোবর উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করা হয়েছিল, যে কমিটিকে ধরেই মামলা করা হয়েছে বলে ওই আওয়ামী লীগ নেতার ধারণা।
তিনি বলেন, “১২ জন প্রবাসীকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত দেখিয়ে মামলা করায় বুঝতে বাকি নেই এটি একটি মিথ্যা ও সাজানো মামলা।”
অথচ এই মামলায়ই একজনকে বিনা বিচারে দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে কারাগারে রাখা হয়েছে বলে জানান জগন্নাথপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের ওই নেতা।
কারাগারে থাকা আজিজুল হক সুমনের চাচাতো ভাই আব্দুল কাইউম অভিযোগ করেন, “আমার চাচাতো ভাইকে ২৮ অক্টোবর রাতে গ্রেপ্তার করে ২৯ অক্টোবর মামলা দায়ের করা হয়েছে। যে কক্ষে ১১০ থেকে ১১৫ জন গোপন বৈঠক করার কথা বলা হয়েছে সেখানে একসঙ্গে ২০ জন বসতে পারবে কি না সন্দেহ।”
কয়েকবার ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ও জজ আদালতে জামিন চাওয়া হলেও সুমনকে ওই মিথ্যা মামলায় জামিন দেওয়া হয়নি বলে জানান তিনি।
প্রবাসে অবস্থানরত কয়েকজন কথিত আসামির সঙ্গে কথা বলেছে দ্য সান ২৪-এর এই প্রতিবেদক।
পাঁচ নম্বর আসামি তানিউর রহমান শাওন জানিয়েছেন, তিনি ২০২৩ সালের ২০ জানুয়ারি হিথরো বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। তারপর থেকে যুক্তরাজ্যের কান্ট শহরে অবস্থান করছেন।
দেশ ছাড়ার আগে শাওন জগন্নাথপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি ছিলেন।
মামলার ৯ নাম্বার আসামি হুমায়ূন খান জানান, তিনি স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে ২০২২ সালের ১৩ অক্টোবর যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার এয়ারপোর্টে পা রাখেন। এর পর থেকে তিনি সেখানেই আছেন।
২০২১ সালে গঠিত জগন্নাথপুর উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটিতে ছিলেন বলেও জানান তিনি।
দ্য সান ২৪– এর পক্ষ থেকে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করার পর তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক মো. সাকিব হোসেনের সঙ্গে কথা বলতে সক্ষম হয় এই প্রতিবেদক। জানতে চাওয়া হয়েছিল মামলার বিষয়ে।
তার ভাষ্য, ঘটনার সময় তিনি অন্য থানায় ছিলেন, বদলি হয়ে নতুন এসেছেন জগন্নাথপুর থানায়।
“এ সম্পর্কে আমার বিস্তারিত জানা নেই। মামলা দায়ের হওয়ার সময় আমি এই থানায় ছিলাম না। তদন্ত কর্মকর্তা হিসাবে নতুন দায়িত্ব পেয়েছি। এখন বিষয়টি তদন্ত করে দেখব। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”