অন্তবর্তী সরকারের গত ছয় মাসে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পুলিশের ওপর ২২৫টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে ৭০টি হামলা হয়েছে মব তৈরির মাধ্যমে। পাশাপাশি থানায় হামলা এবং আসামি ছিনতাইয়ের মতো ঘটনাও ঘটছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ছয় মাসে দায়িত্ব পালনকালে পুলিশ সদস্যের ওপর হামলার ২২৫টি ঘটনার মধ্যে গত বছরের সেপ্টেম্বরে ২৪টি, অক্টোবরে ৩৪, নভেম্বরে ৪৯, ডিসেম্বরে ৪৩, জানুয়ারিতে ৩৮ এবং ফেব্রুয়ারিতে ৩৭টি হামলার ঘটনা ঘটে। এরমধ্যে ৭০টি হয়েছে মব তৈরি করে। এসব মব তৈরির পেছনে ভূমিকা রাখছে পেশাদার অপরাধী ও রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা।
দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পুলিশের ওপর এ ধরনের হামলার ঘটনা নতুন নয়। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পুলিশের ওপর হামলার ৩২১টি ঘটনা ঘটেছে। তবে সেই সময়ে মব তৈরি করে হামলার ঘটনা বর্তমান সময়ের মতো ছিল না।
মব তৈরি এবং হামলার ঘটনায় পুলিশের সদস্য তো বটেই সরকারের বিভিন্ন পর্যায়েও আলোচনা হয়েছে। সোমবার পুলিশের ক্যাডার কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকেও এসব ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
গত ৫ আগস্টের পর পুলিশ ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে, তখন এ ধরনের হামলা বাহিনীর মনোবলের ওপর বড় ধরনের আঘাত হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
বৃহস্পতিবার রংপুরে এক অনুষ্ঠানে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেন, “নাগরিক সমাজের প্রতি আমার অনুরোধ, পুলিশকে আপনারা আবার কাছে টেনে নিন। পুলিশকে কাজ করতে সহায়তা করেন।”
পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মো. আনিসুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, “নতুন সময়ে আমরা নতুনভাবে মানবিক পুলিশ গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। এই সময়ে মব তৈরি করে হামলা করে মনোবল না ভেঙে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহযোগিতা করুন।”
মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিচালক (জনসংযোগ) ফয়সল হাসান সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, “কেউ যেন আইন নিজের হাতে তুলে না নেয়। মবের প্রতিটি ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় এনে বিচার করতে সরকার বদ্ধপরিকর।”
শুধু হামলার ঘটনাতেই সীমাবদ্ধ নয়, বিভিন্ন স্থানে থানায় হামলা এবং আসামি ছিনতাইয়ের মতো ঘটনাও ঘটছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে পুলিশের কাছ থেকে অন্তত ১৩টি আসামি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। কোথাও কোথাও থানায় ঢুকে পুলিশ সদস্যদের শাসানো এবং রাজনৈতিক মঞ্চে প্রকাশ্যে পুলিশকে হুমকি দিতেও দেখা গেছে।
বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের ওপর হামলা ও আসামি ছিনতাইয়ের ২০টি ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এসব ঘটনার ছয়টিতে বিএনপির নেতা-কর্মী, তিনটিতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী পরিচয় দেওয়া ব্যক্তি, ছয়টিতে মাদক কারবারি, দুটিতে চাঁদাবাজিতে জড়িত ব্যক্তি, একটিতে শীর্ষ সন্ত্রাসীর অনুসারীরা, একটিতে অটোরিকশাচালক এবং একটিতে সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকেরা জড়িত ছিলেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের মাঠপর্যায়ের সদস্যরা জানান, আগামী জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এমন ধারণা তাদের তৈরি হয়েছে। এ কারণে মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্যরাও বিএনপি নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন। এই সুযোগে একশ্রেণির বিএনপির নেতা-কর্মী মামলা ও গ্রেপ্তারসহ থানার কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করছেন।
আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার অধিকাংশ ঘটনায় পুলিশ নীরব থাকছে। এ ক্ষেত্রে পুলিশ সদস্যদের আশঙ্কা, তারা সক্রিয় হলে নতুন করে হয়রানির মুখোমুখি হতে পারেন।
সংস্থাটির ডিআইজির (অপারেশন) পক্ষ থেকে বুধবার সন্ধ্যায় মাঠপর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে পাঠানো বার্তায় বলা হয়েছে, যদি কোনো পুলিশ সদস্য জনসাধারণের হাতে মারধর বা লাঞ্ছিত হন, তবে পুলিশ সর্বোচ্চ শক্তি ব্যবহার করবে। প্রতিটি জেলার এসপি এই বিষয়ে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নিবেন।