আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সেনানিবাসে আশ্রয় নেওয়া ৬২৬ জনের একটি তালিকা প্রকাশ করে বিভ্রান্তিমূলক অপপ্রচার থেকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে সেনাবাহিনী।
আশ্রয়প্রার্থীদের মধ্যে ২৪ জন রাজনৈতিক ব্যক্তি, পাঁচজন বিচারক, ১৯ জন অসামরিক প্রশাসনের কর্মকর্তা, ৫১৫ জন পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যের নাম রয়েছে।
বৃহস্পতিবার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য তুলে ধরা হয়।
এতে বলা হয়, পরিস্থিতি উন্নয়ন সাপেক্ষে আশ্রয় গ্রহণকারীদের বেশির ভাগই এক–দুই দিনের মধ্যে সেনানিবাস ত্যাগ করেন। এর মধ্যে পাঁচজনকে তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ বা মামলার ভিত্তিতে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
শুধু মানবিক দায়বদ্ধতার কারণে আইন বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড থেকে আশ্রয় প্রার্থীদের জীবন রক্ষা করার উদ্দেশ্যে তাদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল বলে সেনাবাহিনীর ভাষ্য।
এ বিষয়ে সেনাবাহিনীর তরফে বলা হয়েছে, “সেনানিবাসে আশ্রয়প্রার্থী এ সকল ব্যক্তি ও পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা ও জীবন রক্ষার্থে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সাময়িক আশ্রয় প্রদান করা হয়েছিল।”
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “জুলাই-আগস্ট ২০২৪ এর ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে বিগত সরকারের পতনের পর কতিপয় কুচক্রী মহলের তৎপরতায় সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হয়। ফলশ্রুতিতে, সরকারি দপ্তর, থানাসমূহে হামলা, রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ওপর আক্রমণ ও ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, মব জাস্টিস, চুরি, ডাকাতিসহ বিবিধ বিশৃঙ্খলা দেখা যায়।”
এ ধরনের সংবেদনশীল ও নাজুক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে দেশের নাগরিকদের মনে নিরাপত্তাহীনতার জন্ম নেয় বলে উল্লেখ করা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
“এমতাবস্থায়, ঢাকাসহ দেশের প্রায় সকল সেনানিবাসে প্রাণ রক্ষার্থে কতিপয় রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার নাগরিকগণ আশ্রয় প্রার্থনা করেন। উদ্ভূত আকস্মিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে সেনানিবাসে আশ্রয়প্রার্থীদের পরিচয় যাচাই-বাছাই করার চাইতে তাদের জীবন রক্ষা করা প্রাধান্য পেয়েছিল,” বলা হয়েছে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।
সেসময় ২৪ জন রাজনৈতিক ব্যক্তি, পাঁচজন বিচারক, ১৯ জন অসামরিক প্রশাসনের কর্মকর্তা, ৫১৫ জন পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যকে সেনানিবাসে আশ্রয় দেয়া হয়েছিল, পুলিশ সদস্যদের মধ্যে ৪৩২ জনই সাধারণ পুলিশ সদস্য এবং একজন এনএসআই সদস্য।
এছাড়া বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাসহ ১২ জন এবং ৫১ জন পরিবার পরিজনসহ (স্ত্রী ও শিশু) মোট ৬২৬ জনকে বিভিন্ন সেনানিবাসে আশ্রয় দিয়েছিল সেনাবাহিনী।
আইএসপিআরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পরিস্থিতির উন্নয়নের পর বেশিরভাগই দুই-একদিনের মধ্যেই সেনানিবাস ত্যাগ করেছে।
তবে পাঁচ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ বা মামলার ভিত্তিতে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর আগে গত ১৮ই অগাস্ট আইএসপিআর এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছিল বলেও এতে উল্লেখ করা হয়েছে।
আইএসপিআর জানিয়েছে, “তৎকালীন বিরাজমান নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে আশ্রয় প্রার্থীদের জীবন বিপন্ন হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু দুঃখজনকভাবে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিভ্রান্তিকর সংবাদ ছড়িয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার পাশাপাশি জনগণের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।”