গাজায় ইসারায়েলের হামলায় নিহত ৭৩, যুদ্ধবিরতি ভেস্তে যাবে?

Gaza War

একদিন আগেই যুদ্ধবিরতির ঘোষণায় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম জুড়ে ছিল গাজা ও ইসরায়েলে উল্লাসের চিত্র। সে চিত্র চব্বিশ ঘণ্টা না যেতেই মলিন। বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের হামলায় নিহত হয়েছে শিশু নারীসহ অন্তত ৭৩ ফিলিস্তিনি।

ফিলিস্তিনের সংগঠন হামাস চুক্তির কিছু অংশ থেকে সরে এসেছে অভিযোগ করে চুক্তি অনুমোদন স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে।

গাজায় যুদ্ধবিরতি ও বন্দিবিনিময়ের বিষয়ে ইসরায়েল ও হামাস সম্মত হওয়ার পর রোববার থেকে এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার কথা ছিল।

বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের মন্ত্রিসভায় চুক্তিটি অনুমোদন হওয়ার কথা থাকলেও হামাস শেষ মুহূর্তে চুক্তির কিছু অংশ থেকে সরে এসেছে এমন অভিযোগ তুলে মন্ত্রিসভার বৈঠক স্থগিত করার কথা জানায় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দপ্তর।

তার দপ্তর বলেছে, হামাস চুক্তির সব শর্ত মেনে নিয়েছে—মধ্যস্থতাকারীরা বিষয়টি না জানানো পর্যন্ত মন্ত্রিসভার বৈঠক আহ্বান করা হবে না।

তবে ইসরায়েলের অভিযোগের কোনো ‘ভিত্তি নেই’ বলে মন্তব্য করেছেন হামাসের রাজনৈতিক শাখার সদস্য সামি আবু জুহরি।

এর আগে এক বিবৃতিতে হামাসের রাজনৈতিক শাখার আরেক সদস্য ইজ্জাত আল-রিশেক বলেন, ‘মধ্যস্থতাকারীদের ঘোষণা করা যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিষয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ হামাস।’

আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, মূলত অভ্যন্তরীণ চাপের কারণে চুক্তি অনুমোদনের বিষয়টি ঝুলিয়ে দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী। তার জোট সরকারের উগ্র-ডানপন্থী অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মত্রিচ পদত্যাগের হুমকি দিয়ে বলেছেন, যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুমোদন দেওয়া হলে গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।

মিসর ও গাজা সীমান্তবর্তী ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ফিলাডেলফি করিডর থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে ইসরায়েল সম্মত হওয়ায় বিস্মিত হয়েছেন কাতার ইউনিভার্সিটির গালফ স্টাডিজ সেন্টারের গবেষক লুসিয়ানো জাকারা। এখন ইসরায়েলি নেতারা সেখান থেকে সেনা প্রত্যাহার না করার ইঙ্গিত দিচ্ছেন, যার ফলে চুক্তিটি ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।

জাকারা বলেন, নেতানিয়াহু যদি এখন সেনা উপস্থিতি ধরে রাখার ওপর জোর দেন, তাহলে চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার দায় হামাস নয়, ইসরায়েলের ওপর বর্তায়। কারণ, শেষ মুহূর্তে ইসরায়েল এই পরিবর্তন এনেছে।

এদিকে যুদ্ধবিরতির ঘোষণার পর ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ৭৩ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ২৩০ জন। গাজার জরুরি পরিষেবা বিভাগ এ কথা জানিয়েছে। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ২০ শিশু ও ২৫ নারী রয়েছেন।

অবশ্য গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আজ জানিয়েছে, আগের ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় গাজায় কমপক্ষে ৮১ ফিলিস্তিনি নিহত হন। এ নিয়ে ১৫ মাস ধরে চলা এই যুদ্ধে গাজায় ৪৬ হাজার ৭৮৮ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১ লাখ ১০ হাজার ৪৫৩ জন।

তবে গাজায় নিহতের সংখ্যা আরও বেশি বলে মনে করা হচ্ছে। সাধারণত হাসপাতালে আসা মরদেহের ভিত্তিতে নিহতের পরিসংখ্যান দিয়ে থাকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ইসরায়েলি হামলায় বিধ্বস্ত বাসাবাড়ি ও স্থাপনার নিচে এখনো অনেক মরদেহ পড়ে আছে।

সম্প্রতি চিকিৎসাবিষয়ক সাময়িকী ল্যানসেট-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়, ইসরায়েলি হামলার প্রথম ৯ মাসে গাজায় নিহতের প্রকৃত সংখ্যা উপত্যকাটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানের চেয়ে প্রায় ৪১ শতাংশ বেশি।

আরও পড়ুন