যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে দেশটির ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস)। ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ৯ দিনে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ৭ হাজার ৪১২ জন অবৈধ অভিবাসীকে গ্রেপ্তার করেছে সংস্থাটি।
গ্রেপ্তার এই অভিবাসীদের বিস্তারিত পরিচয় এখনও প্রকাশ করেনি আইস। ফলে কোন দেশের কতজন অভিবাসী গ্রেপ্তার হয়েছে, সে বিষয়ে এখনও পরিষ্কার তথ্য মিলছে না। তবে এই অভিবাসীদের মধ্যে অন্তত পাঁচজন বাংলাদেশি রয়েছে বলে সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমের খবর এসেছে।
ফক্স নিউজ জানিয়েছে, আইস কর্মকর্তারা বাড়ি, কর্মস্থল এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালাচ্ছেন। গ্রেপ্তার অভিবাসীদের মধ্যে যাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বা অপরাধমূলক কার্যক্রমে সম্পৃক্ততার তথ্য রয়েছে তাদের গুয়ানতানামো বে কারাগারে পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।
আইসের তথ্য অনুযায়ী, ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ৭ হাজার ৪১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে থাকার অভিযোগ রয়েছে। সংস্থাটি তাদের এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে প্রতিদিনের গ্রেপ্তারের পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। নিউইয়র্ক সিটি, শিকাগো এবং বোস্টনের মতো “অভয়াশ্রম শহরগুলোতে” বিভিন্ন অভিযানের বিবরণও প্রকাশ করা হয়েছে, যেখানে অপ্রাপ্তবয়স্কদের বিরুদ্ধে যৌন অপরাধ, ধর্ষণ, বন্দুক এবং মাদকদ্রব্য সংক্রান্ত অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত অবৈধ অভিবাসীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
দেশটির সীমান্ত বিষয়ক কর্মকর্তা টম হোমান বলেছেন, প্রশাসন বর্তমানে সহিংসতায় সম্পৃক্ততা আছে এমন অবৈধ অভিবাসীদের লক্ষ্য করে অভিযান পরিচালনা করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটির সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোয়েম আইসের কার্যক্রম তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি জানান, ফেডারেল অভিবাসন কর্তৃপক্ষের অভিযানে “সবচেয়ে খারাপ” অভিবাসীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এর ফলে রাস্তাঘাট এখন আগের চেয়ে বেশি নিরাপদ।
অনেক আইস অভিযান অন্যান্য ফেডারেল সংস্থা, যেমন ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট এজেন্সি (ডিইএ), ব্যুরো অব অ্যালকোহল, টোব্যাকো, ফায়ারআর্মস অ্যান্ড এক্সপ্লোসিভস (এটিএফ) এবং ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই)-এর সাথে যৌথভাবে পরিচালিত হয়েছে।
নিউইয়র্ক সিটিতে মঙ্গলবার সকালে একটি অভিযানে নোয়েম নিজে অংশ নেন, যেখানে ২৬ বছর বয়সী অ্যান্ডারসন জামব্রানো-প্যাচেকোকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি ট্রেইন ডি আরাগুয়া গ্যাংয়ের একজন কথিত নেতা। গত গ্রীষ্মে অরোরা, কলোরাডোর একটি অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সে সশস্ত্র ব্যক্তিদের একটি অ্যাপার্টমেন্টের দরজা ভেঙে দেওয়ার ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে জামব্রানো-প্যাচেকোকে দেখা গিয়েছিল।
১৯ বছর বয়সী গুয়াতেমালার নাগরিক এবং এমএস-১৩ গ্যাংয়ের সদস্য লুইস অ্যাডলফো গুয়েরা পেরেজকে গত সপ্তাহে ম্যাসাচুসেটসে আইস গ্রেপ্তার করে। তিনি অস্ত্র মামলায় অভিযুক্ত ছিলেন এবং এর আগে বোস্টন আদালত তাকে মুক্তি দেওয়ার আগে নির্বাসিত করার আদেশ দিয়েছিল।
আইস এখন পর্যন্ত ৬০টির বেশি মামলার বিবরণ প্রকাশ করেছে, অন্যদিকে হোয়াইট হাউসের এক্স অ্যাকাউন্ট কমপক্ষে ২০টির বিবরণ পোস্ট করা হয়েছে। তবে ৭ হাজার ৪১২ জনের মধ্যে বেশিরভাগের অপরাধের ইতিহাস সম্পর্কে এখনও বিস্তারিত তথ্য মেলেনি।
বাংলাদেশি কত
আইস গ্রেপ্তার অবৈধ অভিবাসীদের বিস্তারিত তথ্য এখনও প্রকাশ না করায় কোন দেশের কতজন অভিবাসী গ্রেপ্তার হয়েছে সে বিষয়ে নিশ্চিত করা বলতে পারছে না কেউ। ফলে গ্রেপ্তার ৭ হাজার ৪১২ জনের ঠিক কতজন বাংলাদেশি আছেন সে বিষয়েও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
তবে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম প্রথম আলো সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে পাঁচজন বাংলাদেশি অভিবাসীর গ্রেপ্তার হওয়ার খবর দিয়েছে।
সংবাদমাধ্যমটি গত ২২ জানুয়ারি এক প্রতিবেদনে জানায়, ওইদিন নিউইয়র্কের ব্রুকলিন বরোর ফুলটন এলাকা থেকে নথিপত্রহীন চার বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করে আইস।। তবে ওই চারজনের পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।
এরপর গত ৩০ জানুয়ারি প্রথম আলোর আরেকটি প্রতিবেদনে বলা হয়, নিউইয়র্ক শহরের কুইন্স ও ব্রঙ্কস বরো এলাকা থেকে গত ২৮ জানুয়ারি অন্তত ২০ জন নথিপত্রহীন অভিবাসীকে গ্রেপ্তার করেছে আইস, যাদের মধ্যে সাব্বির আহমেদ নামে এক বাংলাদেশিও রয়েছেন।
বাংলাদেশের সিলেটের বিয়ানীবাজার সদরের বাসিন্দা সাব্বির ব্রাজিল হয়ে মেক্সিকো বর্ডার দিয়ে ২০২২ সালের ২১ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছিলেন বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি।