বিসিবি সভাপতি ফারুকের বিরুদ্ধে এক পরিচালকের অভিযোগ

নাজমূল আবেদনি
নাজমূল আবেদনি

রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালনায় যুক্ত হওয়া দুই জনের মধ‍্যে ঝামেলা সামনে আনলেন নাজমুল আবেদীন। বিসিবির এই পরিচালক এবং বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব অভিযোগ আনলেন বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদের বিরুদ্ধে।

বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছে না দেশের ক্রিকেটের নিয়ন্তা সংস্থা বিসিবির। বিপিএলের অব‍্যবস্থাপনা নিয়ে তীব্র সমালোচনার মধ‍্যে একটি টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ফারুকের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ করেছেন নাজমুল।

বিসিবি সভাপতিকে নিয়ে নিজের অসন্তোষের কথা বলেছেন অভিজ্ঞ এই কোচ। বোর্ড পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন না করলেই ভালো, এমন কথাও বলেছেন তিনি। বাংলাদেশের ক্রিকেটে এই ধরনের ঘটনা ঘটল এই প্রথম। বিপিএলের সিলেট অংশের প্রস্তুতি দেখতে এখন সেখানেই আছেন নাজমুল। তবে গণমাধ‍্যম কর্মীদের বারবার প্রশ্নের পরও এই বিষয়ে আর কিছু বলেননি তিনি।

যমুনা টিভিতে রোববার প্রচারিত সাক্ষাৎকারের পর ওঠা অনেক প্রশ্নেরই তাই জবাব মেলেনি। বিসিবি সভাপতির একটি মন্তব্য নিয়ে আক্ষেপ করেছিলেন নাজমুল, সেই মন্তব‍্য ঠিক কি ছিল তা এখনও স্পষ্ট নয়।

“ওরকম একটা মন্তব্য… আমি সুনির্দিষ্ট করে বলতে চাই না, মন্তব্যটি কী ছিল। তবে সেটি আমাকে খুবই হতাশ করেছে এবং সেটা বুঝিয়ে দিয়েছে, এই মুহূর্তে ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট হয়তো সেভাবে আমাকে তার কনফিডেন্সে নিচ্ছেন না। আমি জানি না, প্রেসিডেন্ট কেন মন্তব্য করেছেন আমার ব্যাপারে। এটা শুনে আমি খুব অবাকও হয়েছিলাম এবং স্বাভাবিকভাবেই, আমি মোটেও আশা করিনি এমন মন্তব্য। সেটা অনেকগুলো মানুষের সামনে… মন্ত্রণালয়ের মানুষ ছিল, বোর্ডের ও বাইরের লোকজনও ছিল।”

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পালাবদলের পথ ধরে ক্রিকেট বোর্ডেও পরিবর্তন আসে। গত ২১ অগাস্ট একই সঙ্গে বিসিবি পরিচালক হন ফারুক ও নাজমুল। সেদিনই সভাপতি নির্বাচিত হন ফারুক। তার আস্থা অর্জন করতে পারেননি বলেই মনে করেন নাজমুল।

“যেটা আমার কাছে মনে হয়েছে যে, বোর্ড প্রেসিডেন্ট হয়তো বোর্ড পরিচালকদের যে জায়গাটা দেওয়ার কথা, সেই জায়গাটা কতটা দিতে চান, সেটা… কিংবা আমার ব্যাপারটা হয়তো কিছুটা ভিন্ন হওয়ার কথা, কারণ যে দুজন আমরা সম্প্রতি এসেছি, বোর্ড প্রেসিডেন্ট একজন, আমি আরেকজন, আমাদের মধ্যে যে বোঝাপড়া থাকার কথা, একসঙ্গে কাজ করার যে ব্যাপারটি থাকার কথা, সেখানে এই ধরনের মন্তব্য করাটা কতটা সমীচীন হয়েছে…।”

ফারুক সভাপতি হওয়ার পর সাড়ে চার মাস পেরিয়ে গেলেও বোর্ডের কোনো স্থায়ী কমিটি গঠন করা হয়নি। মিলেছে শুধু আশ্বাস। এই ব‍্যাপারও ভালোভাবে নেননি নাজমুল। তার দাবি এতে যথাযথ কাজের সুযোগই পাচ্ছেন না তিনি।

“আমরা এখনও আমাদের স্ট্যান্ডিং কমিটিগুলোকে দাঁড় করাতে পারিনি। তাতে যেটা হয়েছে, কর্তৃত্ব নিয়ে কাজ করা… এই বিভাগ বা ওই বিভাগের পুরো দায়িত্ব আমার, সেই অধিকার নিয়ে কাজ করাটা হয়নি। তাতে যতটা গতিশীল হতে পারত, সেটি আসেনি। আমার যে ভূমিকা রাখার সুযোগ ছিল, সেভাবে আমি পারছি না। যেসব বিষয়ে আমার জানা প্রয়োজন, যেসবে আমার অবদান রাখার সুযোগ আছে, সেসব বিষয়ে যে করতে পারছি, তা নয়…।”

বিসিবিতে গেম ডেভেলপমেন্ট, উইমেন’স উইংসহ নানা ভূমিকায় দীর্ঘদিন কাজ করেছেন নাজমুল। বোর্ডের দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার পর নাজমুল হাসানের নেতৃত্বাধীন বোর্ডের নানা অনিয়ম-অসঙ্গতি নিয়ে তিনি বেশ সোচ্চার ছিলেন সংবাদমাধ্যমে। এখন তার মনে হচ্ছে, বোর্ড পরিচালক হওয়ার পর তার কথা বলা ও কাজ করার সুযোগ কমে গেছে।

“আমার অনেক সময় মনে হয়, বোর্ডে আমি না থাকলেই ভালো। কারণ বোর্ডের বাইরে থেকে যেভাবে ভূমিকা রাখতে পারি, যে ধরনের আলাপ-আলোচনা করতে পারি, বোর্ডের ভেতরে থেকে আমার পক্ষে করা সম্ভব নয়। আমি যদি বোর্ডে থাকি, আমাকে কাজ করতে হবে। কাজ করতে যদি না পারি, তার চেয়ে ভালো বাইরে থাকা। বাইরে থাকলে হয়তো কী হতে পারে, না পারে, কী হওয়া উচিত ছিল, এসব নিয়ে আলোচনা করতে পারি। বোর্ডে থাকা আমার জন্য খুব জরুরি নয়।”

“কাজ করতে যদি না পারি, নিজের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপার না থাকে… আমার জন্য খুব জরুরি স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করাটা। কারণ, নিজের চিন্তাভাবনা মেলে ধরার সুযোগ থাকাটা দরকার।”

আরও পড়ুন