নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকের পর ট্রাম্প বললেন ‘গাজা নিয়ে নেব’

যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।

ওয়াশিংটনে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে এসে ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ড দখলে নেওয়ার পরিকল্পনা তুলে ধরেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি জানিয়েছেন, তার দেশ গাজা দখলে নেবে এবং সেখানে অর্থনৈতিক উন্নয়ন করবে।

একইসঙ্গে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার ফিলিস্তিনিদের মধ্যপ্রাচ্যে মিশর ও জর্ডানের মতো দেশগুলোতে গিয়ে আশ্রয় নেওয়া যে আহ্বান দিন দশেক আগে জানিয়েছিলেন তিনি, তা আবারও পুনর্ব্যক্ত করেছেন ট্রাম্প। অবশ্য ফিলিস্তিনি পক্ষ এবং মিশর ও জর্ডান ট্রাম্পের এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে।

এএফপি জানিয়েছে, ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের ওভাল অফিসে মঙ্গলবার বৈঠক শেষে ট্রাম্প ও নেতানিয়াহু যৌথ সংবাদ সম্মেলনে আসেন। ট্রাম্প বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র গাজা উপত্যকার দায়িত্ব নেবে এবং আমরা এটিকে সঠিকভাবে পরিচালনা করব। আমরা এর মালিক হব।”

তিনি আরও বলেন, গাজায় যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করে, অবিস্ফোরিত বোমাগুলো নিষ্ক্রিয় করে সেখানে অর্থনৈতিক উন্নয়ন করা হবে, যা স্থানীয় জনগণের জন্য অসংখ্য চাকরি ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করবে।

তবে ট্রাম্পের বক্তব্যে ইঙ্গিত মেলে যে, ফিলিস্তিনিরা সেখানে ফিরে যাবে না। তিনি বলেন, “যারা সেখানে লড়াই করেছে, বেঁচেছে এবং মারা গেছে, তাদের পুনরায় সেখানে ফিরে যাওয়ার প্রক্রিয়া চালানো উচিত হবে না।”

এই প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ট্রাম্পকে ‘ইসরায়েলের সর্বশ্রেষ্ঠ বন্ধু’ বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনা ‘ইতিহাস বদলে দিতে পারে’ এবং এটি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনার দাবি রাখে।

অন্যদিকে, মিশর ও জর্ডান ট্রাম্পের প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে। ফিলিস্তিনিদের ইচ্ছাকে সম্মান জানানোর জন্য বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের দূত। গাজাবাসীও ট্রাম্পের এই ধারণার নিন্দা জানিয়েছে। গাজার রাফাহ শহরের বাসিন্দা হাতেম আজম বলেন, “ট্রাম্প মনে করেন গাজা একটি আবর্জনার স্তূপ— এটি একেবারেই সত্য নয়।”

হামাসের ৭ অক্টোবর হামলায় ইসরায়েলি পক্ষে ১ হাজার ২১০ জন নিহত হয়। এর জবাবে সেদিন থেকেই গাজায় প্রতিশোধমূলক যে অভিযান  ইসরায়েল শুরু করে তাতে অন্তত ৪৭ হাজার ৫১৮ জন নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশুসহ বেসামরিক নাগরিক। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া এই পরিসংখ্যানকে নির্ভরযোগ্য বলে বিবেচনা করে জাতিসংঘ।

সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প দাবি করেন, ১৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধ ও বোমাবর্ষণের পর ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে প্রথম ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিশ্চিত করতে তিনি ভূমিকা রেখেছেন। তিনি নেতানিয়াহুকে আরও স্থায়ী শান্তির জন্য দ্বিতীয় ধাপে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। নেতানিয়াহু দ্বিতীয় ধাপে যাওয়া নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, “আমরা চেষ্টা করব।”

গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে সেখানে খাদ্য, জ্বালানি, চিকিৎসা ও অন্যান্য সাহায্য সরবরাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া যুদ্ধের কারণে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা গাজার উত্তরাঞ্চলে ফিরতে শুরু করেছে। তবে গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে এখনও অনেক চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ads