২৪২ আরোহী নিয়ে আহমেদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান বিধ্বস্ত

বিধ্বস্ত বিমানের ধ্বংসাবশেষ।
বিধ্বস্ত বিমানের ধ্বংসাবশেষ।

ভারতের বিমান পরিবহন সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়ার লন্ডনগামী একটি যাত্রীবাহী বিমান ২৪২ আরোহী নিয়ে ওড়ার পরপরই বিধ্বস্ত হয়েছে।

আহমেদাবাদ বিমানবন্দর থেকে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার দুপুর ১টা ৩৯ মিনিটে উড্ডয়ন করেছিল বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার বিমানটি।

ভারতের বেসামরিক বিমান পরিবহন অধিদপ্তরের প্রধান ফয়েজ আহমেদ কিদওয়াই, এসোসিয়েটেডে প্রেসকে জানিয়েছেন, আহমেদাবাদে বিধ্বস্ত হওয়া উড়োজাহাজটিতে ২৩০ জন যাত্রী এবং ১২ জন ক্রু ছিলেন।

এদের মধ্যে ১৬৯ জন ভারতীয়, ৫৩ জন ব্রিটিশ, একজন কানাডীয় ও সাতজন পর্তুগিজ নাগরিক ছিল।

এর ফ্লাইট নাম্বার ছিল এআই ১৭১। উড়োযানটি একটি বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার। যার ধারণক্ষমতা ২৫৬ জন। স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ২৫ মিনিটে (গ্রিনিচ মান সময় ৫টা ২৫ মিনিটে) পৌঁছানোর কথা ছিল বিমানটির।

বিমান চলাচল পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত ওয়েবসাইট ফ্লাইটরাডার টোয়েন্টিফোর জানিয়েছে, রানওয়ে থেকে ওঠার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ৬২৫ ফুট উচ্চতায় বিমানটির সিগন্যাল বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বিধ্বস্ত হয়ে বিমানটি বিমানবন্দরের বাইরে একটি আবাসিক ভবনের উপর আছড়ে পড়ে।

এদিকে, বিমানটির পাইলটদের তথ্য প্রকাশ করেছে ভারতের বেসামরিক বিমান পরিবহন নিয়ন্ত্রক ডিরেক্টর জেনারেল অফ সিভিল অ্যাভিয়েশন বা ডিজিসিএ।

বিমানটি ডাক্তারদের একটি আবাসিক হোস্টেলে আছড়ে পড়ে।

ডিজিসিএকে উদ্ধৃত করে সংবাদ সংস্থা এএনআই জানিয়েছে যে, বিমানটির পাইলট “ক্যাপ্টেন সুমিত সাভারওয়াল একজন এলটিসি ছিলেন। তার ৮২০০ ঘণ্টা বিমান চালানোর অভিজ্ঞতা ছিল। কো-পাইলটের ১১০০ ঘণ্টা বিমান চালানোর অভিজ্ঞতা ছিল।

এলটিসির অর্থ হল লাইন ট্রেনিং ক্যাপ্টেন, অর্থাৎ তিনি অন্য পাইলটদের প্রশিক্ষণ দিতেন।

দুর্ঘটনার আগে বিধ্বস্ত বিমানটির পাইলট ক্যাপ্টেন সুমিত সাভারওয়াল বিপদসংকেত পাঠিয়েছিলেন বেলে জানিয়েছে আহমেদাবাদ এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল বা এটিসি। কিন্তু তারপরে এটিসির ডাকে কোনো সাড়া পাওয়া যায় নি।

আহমেদাবাদের এক পুলিশ কর্মকর্তা সংবাদ সংস্থা এএনআইকে জানিয়েছেন, চিকিৎসকদের একটি হোস্টেলে আছড়ে পড়ে বিমানটি। পুলিশ ও দমকল বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট নগরকর্মীরা কয়েক মিনিটের মধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়। উদ্ধার অভিযান চলছে।

ঘটনাস্থল থেকে বিবিসির সংবাদদাতা রক্সি গাড্ডেকার জানিয়েছেন, খুবই মর্মান্তিক দৃশ্য। সবাই দৌড়াদৌড়ি করছে, যাতে যত বেশি সম্ভব মানুষকে বাঁচানো যায়। যেখানে উদ্ধার তৎপরতা চলছে, সে এলাকাটি বিমানবন্দরের খুব কাছে।

চারদিকে শুধুই অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন বাজছে। সব রাস্তা বন্ধ। অগ্নিনির্বাপক দলের কর্মীরা এখনও কিছু জায়গায় আগুন নেভানোর চেষ্টা করছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, তারা হঠাৎ বিকট শব্দ শুনতে পাওয়ার পর কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখতে পায়।

রক্সি গাড্ডেকার আরও জানিয়েছেন, বহু মানুষ সেখানে জড়ো হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবকরা কাছাকাছি এলাকা থেকে এসে সাধ্যমতো সাহায্য করার চেষ্টা করছে। মৃতদেহগুলো সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

তবে হতাহতদের নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনও বিবৃতি এখনও আসেনি।

আহমেদাবাদের একজন উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএনআই জানিয়েছে, এয়ার ইন্ডিয়ার লন্ডনগামী বিমানটি ডাক্তারদের একটি হোস্টেলের ওপর বিধ্বস্ত হয়েছে।

ওই পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পুলিশ, দমকল কর্মী এবং অন্যান্য সংস্থার কর্মীরা অল্পক্ষণের মধ্যেই ঘটনাস্থলে ছুটে যান। উদ্ধারতৎপরতা চলমান রয়েছে বলে জানান তিনি।

উদ্ধারকর্মীদের পাশাপাশি স্থানীয় অধিবাসীরাও উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

আহমেদাবাদে বিমান দুর্ঘটনার পরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন।

তিনি এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, “আহমেদাবাদের এই দুর্ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করে দিয়েছে, দু:খিত করেছে। এটা কতটা হৃদয়বিদারক, তা কথায় বোঝানো যাবে না।

“যতজন মানুষ এই ঘটনায় প্রভাবিত, তাদর প্রত্যেকের কথাই আমার ভাবনা জুড়ে আছে এই দু:সময়ে। যেসব মন্ত্রী ও কর্মকর্তারা বিপদে পড়া মানুষদের সহায়তা করছেন, তাদের সঙ্গে আমি যোগাযোগ রাখছি,” লিখেছেন তিনি।

অন্যদিকে, গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র প্যাটেল আহমেদাবাদের বিমান দুর্ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন এবং সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ লিখেছেন, “আহমেদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়ার যাত্রীবাহী বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় আমি মর্মাহত। দুর্ঘটনায় তাৎক্ষণিক উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতা চালানোর পাশাপাশি যুদ্ধকালীন তৎপরতায় আহত যাত্রীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

“আহত যাত্রীদের হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়ার জন্য গ্রিন করিডরের ব্যবস্থা করা এবং হাসপাতালে চিকিৎসার সমস্ত ব্যবস্থা অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে নিশ্চিত করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে,” জানিয়েছেন মি. প্যাটেল।

আরও পড়ুন