ভারতের কাশ্মীরের পেহেলাগামে সন্ত্রাস ও ২৬ মৃত্যুর ঘটনায় দ্বিধাবিভক্ত বিশ্বকূটনীতি। এই ইস্যুতে চীন পাকিস্তানের পক্ষ নিতেই ভারতের পাশে দাঁড়াল আমেরিকা। দায়িত্বশীলভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলার বার্তা দিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের পাশে রয়েছে আমেরিকা।’
পেহেলাগামে সন্ত্রাসবাদী হামলায় যুদ্ধের দামামা বাজতেই রোববার পাকিস্তানের পক্ষ নিয়ে বিবৃতি দিয়েছিলেন চীনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই।
পাকিস্তানকে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই করা দেশ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি জানান, “পাকিস্তানের সন্ত্রাসবিরোধী পদক্ষেপকে সর্বদা সমর্থন করে আসছে চীন। বন্ধু দেশ হিসেবে এই কঠিন পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ আমরা বেজিং বোঝে। পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব ও স্বার্থরক্ষার বিষয়টিকে সম্পূর্ণ সমর্থন করে চীন।”
একইসঙ্গে ওয়াং বলেন, “গোটা পরিস্থিতির উপর কড়া নজর রাখছে। এবং এই ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্তের দাবিকে সম্পূর্ণ সমর্থন করছি আমরা। দুই দেশের উচিত শান্তি রক্ষার জন্য উদ্যোগ নেওয়া ও সংযম প্রদর্শন করা।”
পাকিস্তানের পক্ষ নিয়ে চীনের এই বিবৃতি প্রকাশ্যে আসার কয়েক ঘণ্টা পরই বিবৃতি দিল আমেরিকা। দেশটির মুখপাত্র বলেন, “সন্ত্রাসবাদী হামলাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে দুই দেশের মধ্যে। আমরা গোটা পরিস্থিতির উপর নজর রেখেছি। আমেরিকা উভয়পক্ষকে উৎসাহিত করছে দায়িত্বশীল সমাধানের পথ খুঁজে নেওয়ার জন্য।”
পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে ভারতের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে জানানো হয়, ‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের পাশে রয়েছে আমেরিকা।’
এর আগেও একই বার্তা দেওয়া হয়েছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্সের পক্ষে।
তবে যে আমেরিকা ৭১-এর যুদ্ধে পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছিল চীনের বার্তার পর সেই আমেরিকা ভারতের পক্ষ নেওয়ার কূটনৈতিক মহলের দাবি, ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর মার্কিন বিদেশনীতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গিয়েছে। বর্তমানে আমেরিকার মূল শত্রু হয়ে উঠেছে চীন। দুই দেশের মধ্যে চলা সাম্প্রতিক শুল্কযুদ্ধে চীনকে শিক্ষা দিতে ভারতকে পাশে চাইছে আমেরিকা।
ভারত মহাসাগরীয় এলাকায় চিনা আধিপত্য কমাতে আমেরিকার একমাত্র অবলম্বন ভারত। পেহেলগাম কাণ্ডে আমেরিকার ভারতের পক্ষ নেওয়ার নেপথ্যে সেই সমীকরণই দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তাই চীন পাকিস্তানের পক্ষ নিতেই ভারতের পাশে দাঁড়াল ট্রাম্প প্রশাসন।
এদিকে সোমবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেছেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। ভারত-পাকিস্তানের উত্তপ্ত সম্পর্কের আবহে এই সাক্ষাৎ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, পেহেলগাম হামলার পর তিন সেনার প্রস্তুতি কী রকম, তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে প্রতিবেদন জমা দিতেই গেছেন রাজনাথ সিং। এই রিপোর্টের ভিত্তিতেই কেন্দ্র বড় কোনও পদক্ষেপ করতে পারে ভারত।
এর আগে রোববার চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল অনিল চৌহানের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং।
প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত প্রস্তুতি, সীমান্তে সেনাবাহিনীর ক্ষমতাসহ একাধিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় ওই বৈঠকে।
পেহেলগামে হামলার পর পাকিস্তানকে কীভাবে জবাব দেবে, তা নিয়েই পরিকল্পনা করছে সরকার।
গত ২২ এপ্রিল পেহেলগামের বৈসরনে বেছে বেছে ২৬ জন হিন্দু পর্যটককে হত্যা করে জঙ্গিরা। এর পরেই উপত্যকায় সেনা বাড়িয়েছে ভারত। নৌসেনা ও বিমান বাহিনীর পক্ষ থেকেও লাগাতার মহড়া দেওয়া হচ্ছে।