দেশে নৈরাজ্য সরকারের প্রশ্রয়ে, অভিযোগ তারেক রহমানের

লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ফাইল ছবি।
লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ফাইল ছবি।

পুরান ঢাকায় বিএনপির সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের নৃশংসতায় সারাদেশ যখন ক্ষোভে ফুঁসছে সেই সময়ে বর্তমান নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির জন্য সরকারের প্রশ্রয়কে দায়ী করলেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

তিনি প্রশ্ন রেখে বলেছেন, যারা ‘মব’ তৈরি করছে, তাদের কেন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না?

শনিবার রাজধানীর গুলশানে লেক শোর গ্র্যান্ড হোটেলে ছাত্রদলের এক অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন।

পুরান ঢাকার ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদের হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ফুটেজে যাকে দেখেছি হত্যা করতে, তাকে কেন সরকার এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করেনি? আমরা কী তবে ধরে নেব, বিভিন্নভাবে ‘মব’ সৃষ্টি করে একটি পরিস্থিতি তৈরি করতে চাচ্ছে।”

বুধবার যে কায়দায় ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে মো. সোহাগকে হত্যা করা হয়েছে তা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানায়। ব্যস্ত সড়কে প্রকাশ্যে হত্যা করা হয় তাকে। মৃত্যু নিশ্চিত করতে পাথর দিয়ে থেঁতলে দেওয়া হয় মাথা ও শরীর। বিবস্র করে মৃতদেহের উপর কয়েকজনকে লাফাতেও দেখা যায়।

দুই সন্তানের জনক সোহাগ একসময় যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি বরগুনা সদরে।

সব ধরনের হত্যার বিচার যেন সুষ্ঠুভাবে হয়, তার সর্বোচ্চ উদ্যোগ বিএনপির থাকবে বলে আশ্বাস দেন লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমান।

তিনি বলেন, “ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হচ্ছে অদৃশ্য শক্তি। বিভিন্নভাবে যারা স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, জনগণের বিপরীতে দাঁড়িয়েছে আমরা তাদের প্রশ্রয় দেব না। এই অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে জনগণের জানমাল হেফাজত করা।” 

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “নতুন করে আবার ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। আমাদের সবাইকে চোখ-কান খোলা রাখতে হবে। গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার আমাদের যে আন্দোলন, আমাদের যে যুদ্ধ ছিল- সেই যুদ্ধ কিন্তু এখনও শেষ হয়ে যায়নি।”  

তিনি দাবি করে বলেন, “আমাদের পক্ষ থেকে একবারও বলা হয়নি, অমুককে ধরা যাবে, তমুককে ধরা যাবে না। আমরা বরাবরই বলেছি, আইনের দৃষ্টিতে অন্যায়কারীর বিচার হবে। দলের সঙ্গে তার কী সম্পর্ক, কিছু যায়-আসে না তাতে। তাকে দল কোন রকম প্রশ্রয় দেবে না। কেউ যদি কোনো অন্যায় করে থাকে, তাহলে তাকে প্রশাসন ধরছে না কেন?” 

এ সময় সংস্কার বিষয়ে নিজের দলের অবস্থানও তুলে ধরেন তারেক রহমান, যিনি গেল মাসেই সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে লন্ডনে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন।

তারেক রহমান বলেন, “পত্র-পত্রিকায় দেখছি- বিএনপি সংস্কারের এটি মানছে না, ওটি মানছে না, সেটি মানছে না। অপরপক্ষে আমরা দেখছি, অনেকগুলো দল সবকিছু মেনে নিচ্ছে। এখানে তো আমরা এসেছি আলোচনা করার জন্য, যদি সব মেনেই নিতে হয় তাহলে আলোচনার দরকার কী ছিল? সরকার বলে দিতো যে, এই এই করতে হবে। কিন্তু আলোচনার জন্য ডাকা হয়েছে।

“সেই আলোচনায় দেখছি, কিছু ব্যক্তি, তারমধ্যে মিডিয়ার কিছু অংশ তুলে ধরার চেষ্টা করছে যে- বিএনপি এটা মানছে না, ওটা মানছে না। আর কেউ কেউ এটা মানছে, ওটা মানছে।”

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, “দেশ পরিচালনায় অভিজ্ঞতা বিএনপি ছাড়া কী ওখানে আর কারও আছে? কারও নেই। সুতরাং বিএনপি যেটা মানছে এবং যেটা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে, বিএনপি অভিজ্ঞতা থেকেই বলছে। কারণ বিএনপি জানে, বিএনপির ধারণা আছে। যে কোন কাজটি করলে দেশের জন্য ভালো হতে পারে, আর কোন কাজটি করলে দেশের জন্য ভালো না হতে পারে। বিএনপির দায়িত্ববোধ আছে। এজন্য বিএনপির আপত্তিগুলো তুলে ধরছে।”

ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিবের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল বক্তব্য রাখেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, “সরকারকে আহ্বান জানাব, যে ঘটনাগুলো ঘটছে অতিদ্রুত তদন্ত করে, প্রকৃত যারা অপরাধী তাদের বের করে শান্তির ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় জাতি আপনাদের ক্ষমা করবে না।” 

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনারা যারা ত্যাগ স্বীকার করেছে, আর কিছুদিন ধৈর্যের সঙ্গে আপনারা অপেক্ষা করুন গণতন্ত্রের জন্য। কেউ যেন অন্যায় কাজ করতে না পারে সেজন্য সবাইকে বিরত রাখুন। বিএনপি কোনোদিন কোনো অন্যায়কে সমর্থন করেনি।” 

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ads