‘হাইব্রিড যুদ্ধ’ সম্পর্কে যারা কমবেশি খোঁজ রাখেন তারা জানেন এর প্রকৃতি কেমন। ধারণা করা হচ্ছে, তেমনই একটি ‘হাইব্রিড যুদ্ধ’ শুরু করেছে রাশিয়া, যেখানে ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন দুর্বল করতে রাশিয়ার অনুদানে আঘাত হানা হচ্ছে ইউরোপীয় অবকাঠামোতে।
আর এর নতুন সামদ্রিক রূপ ‘শ্যাডো ফ্লিট’ বা ‘ছায়া বহর’ বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত।
রাশিয়ার সঙ্গে সংযোগ রয়েছে ‘ঈগল এস’ নামে এমন একটি জাহাজ সম্প্রতি ফিনল্যান্ড ও এস্তোনিয়ার সাগরতলের বিদ্যুৎ লাইন কেটে দিয়েছে বলে ফিনিশ কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে জানিয়েছে এনপিআর।
‘অজ্ঞাত মালিকানার’ ট্যাঙ্কারটি তথাকথিত শ্যাডো ফ্লিটের অংশ বলে সন্দেহ করা হচ্ছে; যা তেল নিষেধাজ্ঞা এড়াতে রাশিয়ার সহায়তায় ব্যবহৃত হয়।
কিন্তু এই ‘ঈগল এস’ কোথা থেকে এলো? কুক দ্বীপপুঞ্জে নিবন্ধিত হলেও ওই সাগরতলের লাইনটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আগের দিন রাশিয়া থেকেই কিন্তু এটি রওয়ানা হয়েছিল।
ফিনল্যান্ডের জাতীয় নিরাপত্তা কলামনিস্ট ইয়ানে রিইহেলাইনেন যেমন এর মাঝে রাশিয়ার ‘হাইব্রিড যুদ্ধের’ ছায়া দেখতে পাচ্ছেন।
তিনি বলেন, “রাশিয়া পশ্চিমের উপর চাপ বাড়াচ্ছে।”
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতির প্রধান কায়া কাল্লাস পলিটিকোকে দেওয়া মন্তব্যেও একই সন্দেহের সুর।
“শ্যাডো ফ্লিট ইউরোপের নিরাপত্তা এবং পরিবেশের জন্য হুমকি, যা প্রকারন্তরে রাশিয়ার যুদ্ধ বাজেটকেই অর্থায়ন করছে।”
ফিনল্যান্ড-এস্তোনিয়া এবং ফিনল্যান্ড-জার্মানির মধ্যে চারটি টেলিকম ক্যাবল ক্ষতিগ্রস্ত করার পর ফিনিশ কর্তৃপক্ষ এই ‘ঈগল এস’ জব্দ করেছে। এস্তোনিয়ান বাড়িয়েছে নৌ-টহল।
উদ্ভুত পরিস্থিতিতে ন্যাটোর সেক্রেটারি জেনারেল মার্ক রুট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোস্টে বাল্টিক সাগরে তাদের সামরিক উপস্থিতি বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন।
শ্যাডো ফ্লিট কী?
‘কার্নেগি এনডাওমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসে’ সের্গেই ভাকুলেঙ্কো জানান, ২০২২ সালে ইউক্রেন আক্রমণ করার পর রাশিয়ার রাজস্ব সীমিত ও নিয়ন্ত্রণ করতে ইউক্রেনের পশ্চিমা মিত্ররা রাশিয়ার তেল রপ্তানির উপর একটি মূল্যসীমা আরোপ করে।
এই মূল্যসীমা রুখতে রাশিয়া শত শত পুরানো ট্যাঙ্কার ব্যবহার শুরু করে যেগুলোর মালিকানা পশ্চিমা জোটের বাইরে।
ভাকুলেঙ্কো বলেন, নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর জন্য জাহাজ মালিকদের ‘জাহাজ ভাঙতে’ বাধ্য করা হতে পারে। তাই সম্ভাব্য ক্ষতি সীমিত করতে ‘কম দামের পুরনো ট্যাঙ্কার’ ব্যবহার হচ্ছে।
রাশিয়ার তেলের আয় ঠিক রাখার জন্য বহরটির নকশা করা হলেও ‘ক্রেমলিনকে অপ্রতিরোধ্য প্রমাণের জন্য ব্যবহার’ হতে পারে বলে মনে করছেন নিউ ইয়র্ক টাইমসের মাইকেল শুইর্টজ।
‘ঈগল এস’ ঘটনার পর রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমের উত্তেজনা বৃদ্ধি পাবে এবং ইউরোপ জুড়ে চলমান উত্তেজনার ব্যপ্তী আরও বাড়বে।
টাইমস-এ এস্তোনিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লাউরি ল্যানেমেটস বলেন, রাশিয়া এর প্রতিবেশী ন্যাটো/ইউ দেশগুলোর বিরুদ্ধে পদ্ধতিগতভাবে ‘হাইব্রিড যুদ্ধ’ পরিচালনা করছে।
বহরটি থামনো যাবে কি?
আটলান্টিক কাউন্সিলের এলিজাবেথ ব্রো বলেন, শ্যাডো ফ্লিট একটি ‘বিরক্তিকর চ্যালেঞ্জ’। এটা যতদিন পরিচালিত হবে এবং যত বড় হবে ততই ‘বৈশ্বিক সামুদ্রিক শৃঙ্খলার কার্যকারিতা’ হুমকির মুখে ফেলবে।
এর একটিই বিকল্প- সমুদ্রগামী দেশগুলোকে ‘পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠা, যা শ্যাডো ফ্লিটের জাহাজ শনাক্ত এবং পর্যবেক্ষণ করবে নিয়মিত।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) শ্যাডো ফ্লিটের ৭৯টি জাহাজের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে বলে জানিয়েছে বিজনেস ইনসাইডার।
এই জাহাজগুলোকে ‘ইইউর বন্দরে প্রবেশ এবং সেবা প্রদানে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।’
এই তালিকা আরও বড় হতে পারে এবং জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক এ নিষেধাজ্ঞা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত জাহাজগুলো ‘প্রায় প্রতি মাসে বাল্টিক সাগরে প্রধান সাবমেরিন ক্যাবলগুলোর ক্ষতি করছে।’
ফিনল্যান্ড-এস্তোনিয়া বৈদ্যুতিক সরবরাহতের জন্য তা ‘জরুরি সতর্ক সংকেত’ বলেও মনে করেন তিনি।