মিডিয়া ওয়াচ: বর্তমান নৈরাজ্যের জন্য কে দায়ী?

সিনিয়র সাংবাদিক আরশাদ মাহমুদ।
সিনিয়র সাংবাদিক আরশাদ মাহমুদ।

বাংলাদেশ ও বিশ্ব নিয়ে নিয়মিত লিখে আসছেন সিনিয়র সাংবাদিক আরশাদ মাহমুদ, যিনি সাংবাদিকতা শুরু করেছিলেন এনায়েতুল্লাহ খানের প্রখ্যাত সাপ্তাহিক হলিডে দিয়ে। এরপর সাংবাদিকতার দীর্ঘ ক্যারিয়ারে দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে কাজ করে গেছেন কয়েকযুগ। সর্বশেষ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে ছিলেন জ্যেষ্ঠ সম্পাদক হিসেবে। সাম্প্রতিককালে সোশাল মিডিয়ায় ‘মিডিয়া ওয়াচ’ শিরোনামে সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নিজের মতামত ও পর্যবেক্ষণ তুলে ধরছেন এই অভিজ্ঞ সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক। পাঠকের জন্য তার সর্বশেষ লেখাটি হুবুহু তুলে দেওয়া হলো।

বর্তমান নৈরাজ্যের জন্য কে দায়ী? আমার সোজাসাপ্টা জবাব হচ্ছে মুহাম্মদ ইউনূস; অন্য কেউ না।

ব্যাপারে বিশদভাবে বলার আগে একটা ভিন্ন প্রসঙ্গ বলি। আমি দেশের বাইরে ছিলাম ১৬ দিন। পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পাঁচ দেশ এবং ছয় শহর ভ্রমণ শেষে ফিরেছি গতকাল বিকেলে। প্রথমে যাই ইন্দোনেশিয়ার বালিতে; এরপর তাইপেই; টোকিও; সিউল; পাতায়া এবং ব্যাংকক।

সত্যি কথা বলতে কি দু সপ্তাহ বেশ ভালো কেটেছে। এই শহরগুলো এত উন্নত যে চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। এর মধ্যে আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউল। এই ভ্রমণ নিয়ে আরো লিখব কয়েকদিনের মধ্যেই।

এবার আসি মূল প্রসঙ্গে। যেমনটা বলছিলাম যে বর্তমান যে সংকট বা নৈরাজ্যকর অবস্থা এর জন্য এককভাবে দায়ী আমাদের নোবেল লরিয়েট বর্তমান প্রধান উপদেষ্টা। তার সীমাহীন লোভ লালসা এবং ব্যক্তি স্বার্থ আজকে এই অবস্থা সৃষ্টি করেছে।

হাসিনার সীমাহীন লুটপাট, স্বৈরাচারী ব্যবস্থা যে আগস্টের ৫ তারিখে অবসান হবে সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত ছিলাম না। যা হোক দেশবাসীর সঙ্গে আমি ব্যক্তিগতভাবে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেছি।

এরপর ভেবেছিলাম যে ছাত্ররা জনতার সঙ্গে মিশে এই অসম্ভব কাজটি করেছে তারা এবার দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। ইউনূস সাহেবের প্রধান উপদেষ্টার পদ গ্রহণ ছিল আমাদের জন্য একটা বড় পাওয়া। তিনি শপথ গ্রহণের পর আমি অন্তত চারটা লেখা লিখেছি তাকে সমর্থন জানিয়ে।

কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে বাধ্য হচ্ছি যে তিন মাসের মধ্যেই বুঝতে পারলাম ইউনূস সাহেব খুব একটা সুবিধার লোক না।

দেশের মূল সমস্যাগুলোর থেকে তার কাছে ব্যক্তিস্বার্থ বড় হয়ে দেখা দিল। তিনি ক্ষমতায় বসার সঙ্গে সঙ্গে তার বিরুদ্ধে যত মামলা মকদ্দমা ছিল সব একে একে নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে প্রত্যাহার করে নিলেন। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত হলো ৬৬৬ কোটি টাকার কর মওকুফ এবং ১৫০০ কোটি টাকার কর ফাঁকির মামলা।

এরপর জাতি দেখল তার স্বজনপ্রীতি কতটা নির্লজ্জ। ক্ষমতায় বসার পাঁচ দিনের মাথায় তিনি তার আপন ভাইপোকে ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি বানালেন। এরপর ইউনূস সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক লামিয়া মোর্শেদকে তিনি সিনিয়র সচিবের পদমর্যাদায় তার দপ্তরে নিয়োগ দিলেন চিফ কো-অরডিনেটর ফর সাস্টেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস বা এসডিজি, হিসেবে। আপনারা হয়তো অনেকে জানেন এটা জাতিসংঘ ঘোষিত একটা লক্ষ্যমাত্রা। জাতিসংঘসহ এই ধরনের আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্ম হয়েছে পশ্চিমা বিশ্বের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য। এ নিয়ে ভবিষ্যতে আরো লিখব; আগেও লিখেছি।

যাহোক এবার আসি লামিয়ার নিয়োগের ব্যাপারে। এখানে বলে নেই তার বাবা কায়সার মোর্শেদ ছিলেন আমার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ একজন মানুষ। কিছুদিন আগে তিনি এই দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন। খুব অল্প সময়ের জন্য পররাষ্ট্র সচিবের দায়িত্বে ছিলেন।

যাহোক লামিয়ার নিয়োগের পর পত্রপত্রিকায় দেখলাম যে সে সর্বক্ষণ ইউনূস সাহেবের সঙ্গেই থাকেন; তার বিভিন্ন মিটিং নোট নিচ্ছেন। প্রশ্ন হল তার পদবী হল চীফ কো-অর্ডিনেটর ফর এসডিজি। আপনারা কেউ কেউ বলতে পারেন যে আজ পর্যন্ত গত ১০ মাসে সে এসডিজি নিয়ে কোন মিটিং করেছে কিনা? আমি অন্তত এ ব্যাপারে ওয়াকিবহাল নই।

এছাড়াও তিনি গ্রামীণ ব্যাংক থেকে তার আগের সহকর্মী নুরজাহান বেগমকে এনে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বানিয়েছেন। তিনি কি উল্লেখযোগ্য কাজ করেছেন সেটা আমরা ঠিক এখনো বুঝতে পারছি না।

এরপর তিনি একের পর এক নিজ স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যবসা, লাইসেন্স নিয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো গ্রামীণ ইউনিভার্সিটি এবং ম্যানপাওয়ার ব্যবসা। এরপর দেখলাম তিনি স্টারলিংক এই দেশে আনার ব্যবস্থা করেছেন। এগুলো আনার আগে খুব জোরেশোরে প্রচার প্রচারণা চালানো হয় যে এতে বাংলাদেশ রাতারাতি উন্নত বিশ্বের পর্যায়ে চলে যাবে। এই স্টারলিংকের ব্যাপারে আমার প্রথম থেকেই মনে প্রশ্ন জাগছে যে এর লোকাল এজেন্ট কে বা কারা হবে? দেখা গেল ইউনূসেরই প্রতিষ্ঠান এই কাজে নিয়োজিত হয়েছে।

অর্থাৎ এটা পরিষ্কার যে তার নিজের স্বার্থেই তিনি এগুলো করছেন। এখন অনেকে বলেন যে গ্রামীণ ব্যাংকে তার কোন ব্যক্তিগত মালিকানা নেই; তার কোন শেয়ার নেই। কথা সত্য।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে যে তার তো মালিকানা বা শেয়ারের কোন প্রয়োজন নাই। তিনি যেটা চাচ্ছেন সেটাই হচ্ছে এবং সব সুযোগ সুবিধা ভোগ করছেন।

এ প্রসঙ্গে সর্বজন শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর সঙ্গে একবার কথা বলেছিলাম; তখন জিয়াউর রহমান ক্ষমতায়। আমি বললাম স্যার উনি তো খুব সৎ মানুষ। তিনি বললেন শোনো আরশাদ তার তো অসৎ হওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। সমস্ত বাংলাদেশিই তো তার সম্পত্তি।

ঠিক একইভাবে আমার মনে হল ইউনূস সাহেবের তো মালিকানার দরকার নাই। তার কারণ পুরো গ্রামীণ ব্যাংক এবং যত অঙ্গ প্রতিষ্ঠান আছে সবগুলোরই তিনি ডিফেক্টো মালিক।

এ প্রসঙ্গে আরেকটা কথা বলি। প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার পর তিনি গ্রামীণ ব্যাংকে সরকারের থাকা ২৫% শেয়ার নির্বাহী আদেশে ১০ পার্সেন্ট নামিয়ে এনেছেন। অর্থাৎ এখন সেখানে তিনি যা খুশি তাই করতে পারবেন। আপনাদের হয়তো মনে আছে যে তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর থাকার জন্য উচ্চ আদালত পর্যন্ত গিয়েছিলেন। যদিও সবাই জানতো যে সরকারি ব্যাংক হিসেবে সেখানে এমডির অবসরে যাওয়া বাধ্যতামূলক একটা সার্টেন এজের পরে। কিন্তু তিনি কোন আইন-কানুনের ধার ধারেন না। তিনি সবাইকে ধারণা দিতে চান যে তিনি ইন্ডিস্পেন্সিবল।

সারা জীবন গরিবের জন্য কাজ করা এই মানুষটি কেন এ ধরনের আচরণ করছেন সেটা আমার কাছে পরিষ্কার না। উপদেষ্টা হওয়ার আগে তিনি থাকতেন গুলশানে এবং প্রাডো গাড়িতে চলাফেরা করতেন। অথচ তার আগে তার জীবন ছিল অত্যন্ত সাদামাটা। অন্তত এক ডজন বার আমি তার সাক্ষাৎকার নিয়েছি। অনেক লেখা লিখেছি। তখন তিনি থাকতেন মিরপুরে গ্রামীণ ব্যাংকের ফ্ল্যাটে। তার অফিস ছিল খুবই সাধারণ; তার অফিসে চেয়ার টেবিল ছিল কাঠের এবং কোন এয়ারকন্ডিশনার আমি দেখি নাই।

প্রশ্ন হচ্ছে যে তিনি দেশের স্বার্থের কথা চিন্তা না করে নিজের আখের গোছাতে গেলেন কেন? এবং এটা করতে যেয়ে তিনি নিজেকে বিতর্কিত করেছেন। আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি প্রথম প্রথম যে শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা সাধারণ মানুষ তাকে দিয়েছিল এখন সেটা আর নেই; অন্তত আমার ক্ষেত্রে নেই। খুব জোরেশোরে তার বিরুদ্ধে সমালোচনা দেখতে পাচ্ছি যেটা আমি আশা করিনি। কিন্তু তিনি নির্বিকার। তার আচার-আচরণ দেখে মনে হচ্ছে আর এক স্বৈরাচারের আবির্ভাব হয়েছে দেশে।

তিনি যদি সত্যিকার অর্থে এদেশের মঙ্গল চাইতেন তবে সবার আগে তিনি দুটো কাজ করতেন।

প্রথমত: প্রশাসনকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা এবং দুর্নীতিমুক্ত করা। এটা কীভাবে করবেন তার উপর আমি লিখেছিলাম। ভেবেছিলাম হয়তো তিনি সে পথে আগাবেন। আমার প্রস্তাব ছিল তিনি ক্ষমতায় এসেই তার সম্পদ বিবরণী জনসমক্ষে প্রকাশ করবেন এবং তার অন্যান্য উপদেষ্টা এবং সরকারি কর্মকর্তা যারা আছেন তারাও সেটা করবেন। জাতির উদ্দেশে প্রথম ভাষণে তিনি সেটার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত তিনি তার সম্পদ বিবরণী প্রকাশ করেননি। আমার কাছে মনে হয়েছে তিনি জাতির সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। তিনি যদি এটা করতেন তবে সরকারের অন্যান্যরা বাধ্য হত তাদের সম্পদ বিবরণী প্রকাশ করতে। স্বাভাবিকভাবে জনমনে, বিশেষ করে আমার কাছে বারবার মনে হচ্ছে, তার লুকানোর কি আছে। তিনি তো সৎ হিসেবে পরিচিত। এখন মনে হচ্ছে ‘ডাল মে কুচ কালা হায়’।

আর একটা ব্যাপার নিশ্চয়ই আপনারা লক্ষ্য করেছেন। সেটা হল যখনই তার কার্যকলাপ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হচ্ছে বা নির্বাচনের কথা বলা হচ্ছে তখনই তিনি কোন না কোন নাটক সৃষ্টি করে চলেছেন। উদ্দেশ্য একটাই যে তার সৃষ্টি করা বিতর্ক থেকে জনগণের চোখ অন্যদিকে সরানো। এর লেটেস্ট এক্সামপল হল তার পদত্যাগের হুমকি। এটাও একটা বড় ধরনের নাটক। এবং এই নাটকের শুধু মূল চরিত্রই না; এর রচয়িতা এবং নির্দেশক স্বয়ং মোহাম্মদ ইউনূস।

দ্বিতীয়ত: সত্যিকার অর্থে দেশের মঙ্গল করতে চাইলে তিনি বিচারবিভাগ সংস্কারের উপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতেন। কিন্তু নির্বাহী আদেশে একের পর এক তার মামলা তুলে নেওয়া ছিল বিচার বিভাগের উপর নির্লজ্জ হস্তক্ষেপ। প্রশ্ন হচ্ছে শেখ হাসিনা বা অন্যান্য স্বৈরশাসকরা যা করেছেন তিনি সেটা কেন করবেন?

তার উচিত ছিল ক্ষমতায় আসার পরই প্রকাশ্যে ঘোষণা দিতেন যে আল্লাহ আমাকে যে সুযোগটা দিয়েছে তার পরিপূর্ণ সদ্ব্যবহার ব্যবহার আমি করতে চাই।

কিন্তু কারণে-অকারণে একের পর এক বিদেশ ভ্রমণ এবং তার ব্যক্তি স্বার্থ উদ্ধার ছাড়া দেশ বা সাধারণ জনগণ তেমন কিছু পায়নি। আমার কাছে কেন জানি মনে হচ্ছে যে তার পুরো ফোকাসটা ছিল বিদেশিদের কীভাবে ইমপ্রেস করা যায় তার উপর এবং গ্রামীণ ব্যাংককে কীভাবে তার হস্তগত করা যায়।

এজন্য তাকে বারবার বিদেশে যেতে হবে জনগণের টাকা ব্যয় করে এবং তার অফিস থেকে বলা হবে যে যেখানেই তিনি যাচ্ছেন; রকস্টারের মত অভ্যর্থনা পাচ্ছেন। আমি বিদেশি পত্রপত্রিকা এবং টিভিতে এর কোন নজির দেখতে পেলাম না। গত দু সপ্তাহে আমি যেসব জায়গায় গিয়েছি সেখানে বাংলাদেশ নিয়ে বা ইউনূস সাহেব সম্পর্কে কোন আলোচনা শুনিনি। এই সফরের সময় আমার দুই জাপানি সাংবাদিক বন্ধু আমাকে লাঞ্চে আমন্ত্রণ জানায়। আমাকে জিজ্ঞেস করল শেখ হাসিনা তো এখন ক্ষমতায় নেই। এখন দেশ কে চালাচ্ছে? আমি কিছুটা অবাক হয়ে বললাম কেন ড. ইউনূসের নাম তোমরা শোনোনি? বলল, ও আচ্ছা তাই নাকি!

সপ্তাহ দুয়েক আগে ফেসবুকে ইউনূস সাহেবের একটা মন্তব্য দেখলাম। তিনি বলছেন যে “দেশের আইন আমাকে যে ক্ষমতা দিয়েছে তা আমি কেন দেশ এবং সাধারণ মানুষের উপকারের জন্য করবো না।” খুবই ভালো কথা। কিন্তু বাস্তবে দেখতে পাচ্ছি তিনি সব কিছুই করছেন ব্যক্তি স্বার্থে।

তিনি যদি সত্যিই দেশের মঙ্গলের জন্য কিছু করতে চাইতেন তাহলে সবার আগে উচিত ছিল প্রাইমারি শিক্ষার ব্যাপারে একটা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা। কীভাবে করবেন সেটা নিয়ে আমি খুব একটা চিন্তা এখনো করিনি। তবে মোটা দাগে বলতে পারি যে প্রাইমারি শিক্ষার মান উন্নয়ন এবং শিক্ষকদের বেতন ভাতা, মর্যাদা বৃদ্ধি এই দুটো পদক্ষেপ তিনি নিতে পারতেন। কিন্তু তিনি চাইলেন গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয় করার জন্য; কারণ ওখানে টাকা পাওয়া যাবে। আপনারা নিশ্চয়ই জানেন যে এই প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিগুলো টাকা বানানোর কারখানা।

এ প্রসঙ্গে আরও বলি তার উপর রাষ্ট্রের দেওয়া ক্ষমতায় তিনি দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি করার দিকে মনোযোগ দিতে পারতেন; বিশেষ করে সাধারণ মানুষ কিভাবে অল্প খরচে ভালো চিকিৎসা পেতে পারে সে ব্যাপারে।

পরিশেষে বলবো, সেনাবাহিনী প্রধানের সাম্প্রতিক পাবলিক স্টেটমেন্ট নিয়ে যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে এটার জন্য দায়ী ইউনূস সাহেব নিজেই।

মূল সংস্কারের দিকে না যেয়ে তিনি কেন খুবই সেনসিটিভ রাখাইনে মানবিক করিডর এবং চট্টগ্রাম পোর্ট ম্যানেজমেন্ট বিদেশিদের কাছে দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন। এটা তো কোনোভাবেই তার অগ্রাধিকারের মধ্যে পড়ে না।

আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে এগুলো করা হচ্ছে একটা বিশেষ এজেন্ডা নিয়ে এবং বিদেশ থেকে ভাড়া করে আনা কিছু তথাকথিত স্মার্ট, ধুরন্ধর লোকদের দিয়ে এটা বাস্তবায়ন করা। এদের মধ্যে খলিলুর রহমান অত্যন্ত বিতর্কিত। আজ থেকে ২৪ বছর আগে একটা মার্ডার সুইসাইডের মতো ভয়াবহ ঘটনায় তার সম্পৃক্ততা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। এ ব্যাপারে আমি তিনটি পোষ্ট লিখেছি। কিন্তু ইউনূস সাহেব এটা নিয়ে কোন তদন্ত করার প্রয়োজন অনুভব করেননি। আমি অবাক হই এত বড় ঘটনার পর যদি তার কোন অনুসন্ধান বা বিচার না হয় তবে দেশে আইনের শাসন কীভাবে প্রতিষ্ঠা হবে।

আবারো সেনাপ্রধানের বক্তব্যে ফিরে আসি। সত্যি কথা বলতে কি সেনাপ্রধানকে এই বক্তব্য কেন দিতে হলো পাবলিকলি সেটা ইউনূস সাহেব নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করতে পারেন। তিনি যদি সঠিক পথে দেশ চালাতেন এবং কোন রকম ধান্দাবাজির মধ্যে না যেয়ে শুধু দেশের মঙ্গলের উপর আলোকপাত করতেন তবে তো সেনাপ্রধান এই ধরনের বক্তব্য দিত না; বা দেওয়ার ধৃষ্টতা দেখাতো না।

গত ৪৫ বছর থেকেই দেখছি একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে বারবার। আর সেটা হল ক্ষমতাসীনদের স্বেচ্ছাচারিতা, দুর্নীতি ইত্যাদির কারণে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং তার সুযোগ নিয়ে সেনাবাহিনী বারবার ইন্টারভেন করছে।

আবারো বলবো ইউনূস সাহেবের ব্যক্তি স্বার্থ-কেন্দ্রিক যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে বা হচ্ছে সেটা থেকে দৃষ্টি ফেরানোই হল তার এই সমস্ত নাটকের অবতারণা। তার কিছু চামচারা এখন উঠে পড়ে লেগেছে সবকিছুর মধ্যে হাসিনা আর ভারতকে আনা যাতে করে সাধারণ মানুষের সিমপ্যাথি অর্জন করা যায়। আমার বিশ্বাস খুব বেশিদিন হাসিনা আর ভারত নিয়ে সাধারণ মানুষের সিনপ্যাথি অর্জন করা যাবে না। তারা রেজাল্ট দেখতে চায়।

এই চামচাদের উদ্দেশ্যে আমি একটাই কথা বলব আপনারা ইউনূস সাহেবকে জিজ্ঞেস করেন তিনি কেন এ বিতর্কিত কাজগুলো করছেন। তিনি কেন তার সম্পদের হিসাব জনগণকে জানাচ্ছেন না?

আমি এক উপদেষ্টাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে আপনারা যখন মিটিং করেন তখন এই প্রশ্নগুলো তাকে করেন কিনা? এর উত্তরে তিনি চুপ থাকেন।

ইউনূস সাহেব এখন বলছেন কাজ করতে না দিলে তিনি পদত্যাগ করে চলে যাবেন। অন্যান্যরা, বিশেষ করে তার যারা সমর্থক আছেন, তারা অনুনয়-বিনয় করছেন যে স্যার আপনি যেতে পারবেন না; আপনি গেলে দেশ মহা বিপদে পড়বে।

আমি শুধু একটাই কথাই বলবো এই দুনিয়াতে কেউ ইনডিসপেন্সিবল না। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি ইউনূস সাহেব চলে গেলে বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগরে ডুবে যাবে না। এবং দেশের অবস্থা যে এর থেকে খারাপ হবে সেটাও আমি বিশ্বাস করি না।

আরশাদ মাহমুদ: সিনিয়র সাংবাদিক, লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক

আরও পড়ুন