অপারেশন সিঁদুরের পরেই ভারতের একাধিক সেনা ক্যাম্পে হামলার পরিকল্পনা করেছিল পাকিস্তান। তবে পাকিস্তানের কয়েকটি জায়গার ‘এয়ার ডিফেন্স রেডার সিস্টেম’ ধ্বংস করে দিয়েছে ভারত।
বৃহস্পতিবার ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বিবৃতিতে দিয়ে এই দাবি করেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, বুধবার রাতে এবং বৃহস্পতিবার সকালে ভারতের কয়েকটি জায়গায় সেনা ক্যাম্পে ড্রোন এবং মিসাইল হামলার পরিকল্পনা করেছিল পাকিস্তান। এর মধ্যে রয়েছে শ্রীনগর, পঠানকোট, অমৃতসর, লুধিয়ানা এবং চণ্ডীগড়। কিন্তু পাক সেনার সেই পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে ভারতীয় সেনাও তার জবাব দিয়েছে। তাতে লাহোর-সহ পাকিস্তানের একাধিক জায়গায় এয়ার ডিফেন্স রেডার সিস্টেম ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। এ কাজে ‘ইন্টিগ্রেটেড কাউন্টার ইউএএস গ্রিড’ সিস্টেম ব্যবহার করেছে ভারত।
ভারতীয় সেনা সূত্রের খবর, পাকিস্তানের হামলা ব্যর্থ করেছে ভারতের ইউএএস গ্রিড এবং এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম। ভারতের আকাশসীমা রক্ষার কাজে মূল হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে এস-৪০০ সুদর্শন চক্র। বিশ্বের প্রথম সারির সুরক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে অন্যতম এই সিস্টেম। অন্তত ৬০০ কিলোমিটার দূর থেকে উড়ে আসা ক্ষেপণাস্ত্র চিহ্নিত করতে পারে এই সুদর্শন চক্র। ৪০০ কিলোমিটার দূর থেকে ক্ষেপণাস্ত্র নিষ্ক্রিয় করতে পারে এই সিস্টেম।
পাকিস্তান যে ড্রোন এবং মিসাইলগুলো দিয়ে হামলা চালানোর চেষ্টা করেছিল, সেগুলো কার্যত ধ্বংস হয়েছে ওই সুদর্শন চক্রের প্রভাবে।
বুধবার সকালে ভারতের অমৃতসর-সহ একাধিক শহরে পাক ড্রোন এবং মিসাইলের ধ্বংসাবশেষও পাওয়া গেছে। বিনা প্ররোচনায় পাকিস্তানের এই হামলাকে কার্যত যুদ্ধাপরাধ হিসাবে বিবেচনা করছে নয়াদিল্লি। সঙ্গে সঙ্গেই যার উপযুক্ত এবং পরিমিত আঘাত করা হয়েছে ভারতীয় সেনার পক্ষ থেকে।
পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমের খবর বলছে, সে দেশের অন্তত ১৫টি শহরে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ড্রোন বিস্ফোরণ হয়েছে। ঘুরিয়ে ভারতীয় সেনাই সেই হামলার দায় নিল। তবে ভারতীয় সেনা স্পষ্ট জানিয়েছে, “শান্তিরক্ষায় আমরা বদ্ধপরিকর। কিন্তু আমাদের শান্তিরক্ষার প্রয়াসকে সম্মান করা উচিত পাক সেনারও।”
ভারতীয় সেনার বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অপারেশন সিঁদুরের পর থেকেই সীমান্তে গুলিবর্ষণ বাড়িয়ে দিয়েছে পাকিস্তান। যার জেরে পাঁচ শিশু ও ৪ নারী-সহ ১৬ জন নিরীহ নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। তাই বাধ্য হয়েই জবাব দিল ভারতীয় সেনা।
ভারতের কাশ্মীরে পেহেলগামে জঙ্গিদের হামলায় ২৬ জনের মৃত্যুর পরে জঙ্গিদের জবাব দিতেই মঙ্গলবার রাতে ‘অপারেশন সিঁদুর’ অভিযান চালায় ভারত। মাত্র ২৫ মিনিট অভিযানে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর এবং পাকিস্তানের মূল ভূখণ্ডে মোট ৯টি জঙ্গি শিবির গুঁড়িয়ে দেয় ভারত। সেগুলো মধ্যে রয়েছে পাকিস্তানের মূল ভূখণ্ডে থাকা বাহাওয়ালপুরে জইশ-ই-মহম্মদের মূল ঘাঁটি এবং মুরিদকে-তে লশকর-এ-ত্যায়বার মূল ঘাঁটি।
জইশের মূল ঘাঁটিতে হামলায় প্রাণ হারিয়েছে সেই জঙ্গি গোষ্ঠীর প্রধান মাসুদ আজহারের পরিবারের ১০ জন, যাদের মধ্যে রয়েছে তার ভাই, বোন ও ভাইপো। সব মিলিয়ে কমপক্ষে ১০০ জন জঙ্গি নিহত হওয়ার তথ্য দিয়েছে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী।
ওই ঘটনার পর বুধবার রাতেই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন ভারতকে। বলেছিলেন, ‘‘ভারতকে এই হামলার মাসুল দিতে হবে।’’ প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে জানানো হয়েছিল, ভারতের আকাশপথে হামলার জবাবে ‘আত্মরক্ষার অধিকার’ আছে পাকিস্তানের। নিজেদের পছন্দের সময়, স্থান ও পদ্ধতিতে এর জবাব দেবে পাকিস্তান।
সেই সঙ্গে দাবি করা হয়, নিরীহ পাকিস্তানি নাগরিকদের লক্ষ্য করে ‘নগ্ন আগ্রাসন’ চালিয়েছে ভারত। শাহবাজের বক্তব্য, “পাকিস্তানের উপরে এই ঘৃণ্য হামলার জন্য ভারত শাস্তি পাবে। ভারত একতরফা ভাবে আক্রমণ করেছে। প্রতিরোধের অধিকারবশত পাকিস্তানে প্রত্যাঘাতের প্রস্তুতি চলছে।”