জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারীদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবং তথ্য উপদেষ্টা যখন আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়া হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন তখন ১৯০ ডিগ্রি ঘুরে তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা জানিয়েছেন আগামী সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নেবে কিনা সেটি সিদ্ধান্ত ওই দলের।
বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার এই সাক্ষাৎকার প্রকাশ করে বিবিসি। ব্রিটিশ এই গণমাধ্যম শিরোনাম করেছে “শেখ হাসিনা সরকারকে ‘১৬ বছরের ভয়ঙ্কর টর্নেডোর’ সঙ্গে তুলনা করেছেন বাংলাদেশের এক নেতা”।
বিবিসির সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবাবে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “তারাই (আওয়ামী লীগ) সিদ্ধান্ত নেবে, তারা নির্বাচনে অংশ নেবে কি না। আমি তো তাদের হয়ে এই সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। নির্বাচনে কে অংশ নেবে, তা নির্বাচন কমিশন ঠিক করবে।”
যদিও তার সরকারের তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম হুমকি দিয়ে আসছেন, আওয়ামী লীগকে আর নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়া হবে না।
উপদেষ্টা মাহফুজ বলেছেন, “বাংলাদেশে দিল্লিপন্থীরা আর সুযোগ পাবে না। বিএনপি জামায়াতসহ বাংলাদেশপন্থীরাই এদেশে রাজনীতি করবে। এই দেশে আর কোনো বাকশালের সুযোগ দেওয়া হবে না।’
একই কথা একাধিকবার জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। বলেছেন, “মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় স্বীকার না করা পর্যন্ত তারা (আওয়ামী লীগ) রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় ফিরতে পারবে না।”
এদিকে রীতিমত হুমকি দিয়েছে রেখেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম। তিনি বলেছেন, “ শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের বিচার না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের কোনো মানুষ, কোনো রাজনৈতিক দল ভুল করেও যেন নির্বাচনের কথা না বলে। যতদিন না আমরা খুনি হাসিনাকে ওই ফাঁসির মঞ্চে না দেখছি এই বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হবে না।”
আগামী ডিসেম্বরেই জাতয়ি সংসদ নির্বাচন হওয়া নিয়ে দোদুল্যমান মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। বিবিসিকে বলেন, “প্রত্যাশা অনুযায়ী সংস্কার দ্রুত হলে নির্বাচন হবে ডিসেম্বরে, আর সংস্কারের বেশি দরকার হলে নির্বাচন হতে আরও কয়েকমাস লাগতে পারে।”
এদিকে, ড. ইউনূসের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। ফেব্রুয়ারিতে শেখ হাসিনার এক ইউটিউব ভাষণের ঘোষণার পর আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার বাড়িতে হামলা হয়। এমনকি শেখ হাসিনার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িও ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের শিকার হয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করা এক পোস্টে আওয়ামী লীগ অভিযোগ করেছে, অন্তর্বর্তী সরকার এই সহিংসতাকে ন্যায়সংগত বলে উপস্থাপন করছে। এ বিষয়ে বিবিসি ড. ইউনূসের কাছে জানতে চাইলে, তিনি তার সরকারের অবস্থানকেই সমর্থন করেন।
ড. ইউনূস বলেন, “আদালত আছে, আইন আছে, থানায় অভিযোগ করা যায়। আপনি কেবল বিবিসির প্রতিবেদকের কাছে অভিযোগ জানিয়ে বসে থাকবেন না, থানায় গিয়ে অভিযোগ করুন এবং দেখুন আইন কীভাবে কাজ করে।”
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি গেলো বছরের একই সময়ের সঙ্গে তুলনা করলে পরিস্থিতি ঠিক আছে বলে মত দেন প্রধান উপদেষ্টা।