ছিলেন আওয়ামী লীগের পক্ষে সরব, এখন শিবিরের নেতা

আবরার ফারাবীর ফেইসবুক আইডি থেকে নেওয়া।
আবরার ফারাবীর ফেইসবুক আইডি থেকে নেওয়া।

রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ছাত্রলীগের পদধারী অনেককেই ছাত্র শিবিরের শীর্ষ পদে দেখা গেছে, যাকে শিবির নেতারা বর্ণনা করেছেন নিজেদের কৌশল হিসেবে। এ নিয়ে হয়েছে শোরগোল; ‘গুপ্ত সংগঠনের’ যে তকমা ছিল শিবিরের গায়ে তা আরও পোক্ত হয়েছে গতে কয় মাসে।

সর্বশেষ দেখা গেল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সোহরাওয়ার্দী হল শাখায় যিনি সভাপতি হয়েছেন তিনিও যুক্ত ছিলেন ছাত্রলীগের কার্যক্রমে, ছিলেন শেখ হাসিনার পক্ষে সরব।

আবরার ফারাবীকে সভাপতি স্থান পাওয়ার ঘটনা ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। সেইসঙ্গে ছড়িয়ে পড়েছে অতীতে তার দেওয়া জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরবিরোধী বেশ কয়েকটি পোস্ট।

ভাইরাল হওয়া পোস্টগুলোতে দেখা যায়, এন ইউ আবরার ফারাবী নামের ফেসবুক আইডি থেকে ছাত্রলীগসংশ্লিষ্ট বেশ কিছু পোস্ট ও জামায়াত-শিবিরবিরোধী পোস্ট করেছেন তিনি।

আওয়ামী লীগের পক্ষে ফেইসবুকে দেওয়া আবরার ফারাবীর বিভিন্ন পোস্ট।

ফেসবুক ওয়ালে শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের সঙ্গে ছবিওে রয়েছে শিবিরের এই বর্তমান নেতার।

শেখ হাসিনাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েও পোস্ট দিয়েছেন তিনি।

আবরার ফারাবী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক আরবি বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপপক্ষ ভার্সিটি এক্সপ্রেসের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে জানা গেছে।

শিবিরের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা যে ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ে জায়গা নিয়ে রেখেছিলেন তা নতুন কিছু নয়। ক্ষমতার পালাবদলের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিবিরের নেতৃত্বে যারা এসেছেন তাদের মধ্যে অনেকেই ছাত্রলীগের পদধারী নেতা ছিলেন।

২০২১ সালের ২৯ ডিসেম্বর তিনি জামায়াত-শিবিরকে ‘খুনি’ আখ্যায়িত করে করে ফেসবুকে পোস্ট দেন। এ ছাড়া ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর আবরার তার ফেসবুক পোস্টে ছাত্রলীগের নেতা ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া (সাবেক প্রক্টর) শিবিরের মিথ্যা মামলায় জেল খেটেছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

আবরার ফারাবী এ বিষয়ে দাবি করেন, ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এর পর থেকে ছাত্রলীগের সব ধরনের রাজনীতি ছেড়ে পুরোদমে ছাত্রশিবিরে যুক্ত হয়েছিলেন।

তিনি বলেন, “শিবিরে যোগ দেওয়ার পর থেকে আর হলে থাকিনি। পরে শিবিরের সদস্য হয়ে দায়িত্বশীল পদ পাই।”

আবরার ফারাবী আরও বলেন, ‘যখন জুলাই গণ-অভ্যুত্থান শুরু হয়, তখন থেকেই মূলত আমি আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হই এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন নামে যে গ্রুপ আছে, সেটা খুলি। ছাত্রলীগ করেছি, এটা আমি অস্বীকার করি না। কিন্তু ২০২২ সালের জুনের পর থেকে ছাত্রলীগের কোনো ধরনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে আমি সম্পৃক্ত ছিলাম না।’

চবি শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, “তার বিরুদ্ধে এখন যে বিষয়গুলো নিয়ে আসা হয়েছে, সবগুলো ২০২১-২২ সালের পোস্ট। তখন তিনি ছাত্রলীগে যুক্ত ছিলেন। এরপর তিনি ইসলামী ছাত্রশিবিরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সংগঠনের নিয়ম অনুযায়ী মানোন্নয়ন করেন এবং দায়িত্বশীল পর্যায়ে আসেন।”

এ বছর জানুয়ারি থেকে তাকে সোহরাওয়ার্দী হল শাখার সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি আলাউদ্দিন মহসিন অভিযোগ করেছেন, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ছাত্রশিবির আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে। ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যারা জড়িত ছিলেন, ক্ষমতার পালাবদলের সঙ্গে তাদের আশ্রয় দিয়ে ছাত্রশিবির নিজেদের নেতা-কর্মী বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ads