বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।
সোমবার সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) অধ্যাদেশ অনুযায়ী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে এই প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারকার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তাদের যেকোনো ধরনের প্রকাশনা, গণমাধ্যম, অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেকোনো ধরনের প্রচারণা, মিছিল, সভা-সমাবেশ, সম্মেলন আয়োজনসহ যাবতীয় কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো।
এর আগে রোববার সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত ব্যক্তি বা সত্তার (সংগঠন) যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার বিধান যুক্ত করে সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ জারি করে ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার।
আগের আইন অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি বা সত্তা সন্ত্রাসী কাজের সঙ্গে জড়িত থাকলে সরকার প্রজ্ঞাপন দিয়ে ওই ব্যক্তিকে তফসিলে তালিকাভুক্ত করতে পারত বা নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে পারত। সত্তার কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার বিধান ছিল না।
নতুন অধ্যাদেশে বলা হয়, সত্তার যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা যাবে।
সন্ত্রাসবিরোধী আইন অনুযায়ী, ‘সত্তা’ বলতে কোনো আইনি প্রতিষ্ঠান, সংবিধিবদ্ধ সংস্থা, বাণিজ্যিক বা অবাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, গোষ্ঠী, অংশীদারি কারবার, সমবায় সমিতিসহ এক বা একাধিক ব্যক্তির সমন্বয়ে গঠিত যেকোনো সংগঠনকে বোঝায়।
গত বৃহস্পতিবার রাতে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে এনসিপি, জামায়াতে ইসলামীসহ ইসলামপন্থী ও বাংলাদেশে নিষিদ্ধ কয়েকটি সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ শুরু করে। এর তিন দিনের মধ্যে ছুটির দিনে নজিরবিহীন সভা করে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করাসহ তিনটি সিদ্ধান্ত নেয় ইউনূসের উপদেষ্টারা।
ওই সিদ্ধান্তের আলোকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধন আনা হয়। সংশোধনী অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কোনো রাজনৈতিক দল, তার অঙ্গসংগঠন বা সমর্থক গোষ্ঠীকে শাস্তি দিতে পারবে।
এ ছাড়া একইদিন উপদেষ্টা পরিষদের সভায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও দলটির নেতাদের বিচার কার্যসম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জুলাই আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের সুরক্ষার জন্য সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে সাইবার স্পেসসহ আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
পাশাপাশি জুলাই ঘোষণাপত্র ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে চূড়ান্ত করে প্রকাশ করার সিদ্ধান্তও উপদেষ্টা পরিষদের সভায় নেওয়া হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার নেতাদের বিচার কার্যসম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দলটির যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করল ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে ক্ষমতায় অসীন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার।
এদিকে, ওই প্রজ্ঞাপন জারির পর বৈঠকে বসেছে নির্বাচন কমিশন, যেখান থেকে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিলের সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সোমবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের কক্ষে বৈঠক শুরুর খবর দিয়েছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।
সকালেই প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বলেছিলেন, আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন হওয়ার পর দলটির নিবন্ধন বাতিল প্রশ্নে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।