শেখ হাসিনার রায় ঘিরে শঙ্কা-আতঙ্ক, আওয়ামী লীগের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’

আদালতের আশপাশের এলাকায় বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা। ছবি: দ্য সান টোয়েন্টিফোর ডটকম
আদালতের আশপাশের এলাকায় বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা। ছবি: দ্য সান টোয়েন্টিফোর ডটকম

বাংলাদেশে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ সোমবার গড়িয়েছে দ্বিতীয় দিনে। এর মধ্যেই ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের’ মামলায় রায়ের মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রায় ঘিরে নাশকতার আশঙ্কায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার কারা হলেও শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, এই রায় যে পূর্বনির্ধারিত তা তারা জানেন, তাই তোয়াক্কা করছেন না।

আওয়ামী লীগ অবশ্য শুরু থেকেই বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, যেখানে শেখ হাসিনাসহ তিন জনকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে, সেই আদালতকে ‘ক্যাাঙ্গারু কোর্ট’ হিসেবে আখ্যায়িত করে আসছে।

ট্রাইব্যুনালের রেজিস্টার অফিস জানিয়েছে, সোমবার বেলা ১১টায় রায় দিতে আদালত বসবে। রায় সরাসরি সম্প্রচার করবে বাংলাদেশ টেলিভিশন।

এ মামলার অন্য দুই আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। মামুন রাজসাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন, যা এ ধরনের মামলায় প্রথমবারের মতো ঘটল।

ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ভারতে আশ্রয় নেওয়া শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে ‘দ্রুততার’ সাথে এ মামলার কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া হয়েছে। তবে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে সাবেক প্রধানমন্ত্রী তার বিরুদ্ধে আনা ‘হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা’র অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

ট্রাইব্যুনালের শুনানিতে তার পছন্দের আইনজীবী নিয়োগ করার অনুমতি না মিললেও রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবীও তাকে নির্দোষ দাবি করেছেন।

এদিকে, এই রায়কে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের ডাকা কর্মসূচির মধ্যে বাসে আগুন ও ককটেল বিস্ফোরণ, নগরজুড়ে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর টহল, তল্লাশি আর গ্রেপ্তারের ঘটনায় তৈরি হয়েছে শঙ্কার পরিবেশ।

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: পিটিআই

শনিবার মধ্যরাত থেকে রোববার রাত মধ্যরাত পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্নস্থানে ককটেল বিস্ফোরণ হয়েছে। ঢাকার হাজারীবাগে বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে গত সাত দিনে পুড়ল ৩৯টি যানবাহন।

বিভিন্ন জেলায় ও উপজেলায় মুহাম্মদ ইউনূসের মালিকানাধীন গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটেছে।

এ অবস্থায় হামলাকারীদের ঠেকাতে ঢাকার পুলিশের নানা উদ্যোগ ব্যর্থ হওয়ার পর, এবার গুলির নির্দেশনা নিয়ে মাঠে রয়েছেন বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা।

ট্রাইব্যুনালের নিরাপত্তায় সেনাবাহিনীর সদস্যরাও রয়েছেন অন্যান্য বাহিনীর পাশাপাশি।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, “দেশে যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত আছে।”

উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার মধ্যে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার নোটিশ দিয়েছে, বাতিল করা হয়েছে সকল ধরনের পরীক্ষা। ঢাকার অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বহুজাতিক কোম্পানি কর্মীদের নিরাপত্তায় ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ করতে বলেছে।

রায় ঘিরে উত্তেজনার মধ্যে তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “আমরা স্পষ্ট জানি রায় কী হবে। তারা টেলিভিশনে দেখাচ্ছে। তারা তাকে দোষী সাব্যস্ত করবে এবং সম্ভবত মৃত্যুদণ্ড দেবে। কিন্তু আমার মায়ের কিছুই করতে পারবে না। তিনি ভারতে নিরাপদ আছেন।”

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম দ্য সান টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, “এই ক্যাাঙ্গারু কোর্টে অবৈধ বিচারের নামে নাটকের রায় কী হবে তা সবাই জানে; জাতি আজ ক্ষুব্ধ। জনগণ এই বিচার মানে না বলেই তারা পুরো দেশ কমপ্লিট শাটডাউন করে দিয়েছে।”

ওদিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, হাসিনার গণহত্যার রায়কে কেন্দ্র করে একটা মহল দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করার জন্য পাঁয়তারা করছে। মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে জামায়াতসহ আট দল।

গত পহেলা জুন শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। এরপর নানা আইনি প্রক্রিয়া শেষে বৃহস্পতিবার ট্রাইব্যুনাল ১৭ নভেম্বর রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণ করে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর:

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ads