বাংলাদেশকে উগ্রবাদী রাষ্ট্রে রূপ দিতেই নিষেধাজ্ঞা: ছাত্রলীগ

বাংলাদেশ ছাত্রলীগ লোগো।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ লোগো।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়া দল আওয়ামী লীগের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে দলটির সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগ, যেটিকে এরই মধ্যে নিষিদ্ধ সংগঠন হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করেছে মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার।

রোববার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভেরিফাইড ফেইসবুক পেইজে ওই বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। সংগঠনের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের স্বাক্ষর রয়েছে ওই বিবৃতিতে।

“বাংলাদেশের ছাত্রসমাজের প্রতিবাদ ও প্রত্যয়” শিরোনামে ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এদেশের অস্তিত্বের সাথে, মানুষের নিঃশ্বাসে মিশে থাকা নাম। পৃথিবী যতোদিন থাকবে ততদিন বাংলাদেশের সাথে আওয়ামী লীগের নাম অবিচ্ছেদ্যভাবে উচ্চারিত হবে।

১০ মে রাতে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের এক নজিরবিহীন বিশেষ সভায় আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের দেশত্যাগের খবর সামনে আসার পর এ নিয়ে টানা তিন দিন বিক্ষোভের প্রেক্ষিতে উপদেষ্টা পরিষদ ওই সিদ্ধান্ত নেয়।

এর আগে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালো রাতে পাকিস্তানের সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান বিচ্ছিন্নতাবাদী আখ্যায়িত করে আওয়ামী লীগকে প্রথম দফা নিষিদ্ধ করেছিল। এর ৫৪ বছরের মাথায় আবারও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলো দলটির কার্যক্রমে, মুহাম্মদ ইউনূসের জমানায়

এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া দলটি তাদের ৭৫ বছরের ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ল।

ছাত্রলীগের বিবৃতিতে বলা হয়, “বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ দল-মত-নির্বিশেষে অবৈধ-দখলদার-ফ্যাসিস্ট সরকারের বেআইনি সিদ্ধান্ত ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করে। এ সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ইতিহাসের কালো অধ্যায়, মৌলিক-নাগরিক-রাজনৈতিক অধিকার সম্পূর্ণ জলাঞ্জলি দেয়ার উপাখ্যান, গণমানুষের উপরে পরিচালিত গণহত্যা ও নির্যাতনের স্টিম রোলার বিস্তৃত করার অপপ্রয়াস।

“একইসাথে আমরা মনে করি এর চূড়ান্ত লক্ষ্য- বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের উপর আঘাত, উগ্রবাদী ধর্মান্ধ ও ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করা এবং গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তন কে বিলম্বিত করে ইউনূস গংদের দেশ-স্বাধীনতা-গণতন্ত্র বিক্রয়ের বিনিময়ে নিজেদের অবৈধ ক্ষমতা-সম্পদ-বৈভবের পরিসর বাড়ানো।”

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা করে রাখা হলেও সেসময়ও দলটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিষিদ্ধ করা হয়নি। দেশে না থাকায় সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া তার মেয়ে শেখ হাসিনা প্রায় ছয় বছর পর নির্বাসিত জীবনের ইতি টেনে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফেরেন। মূলত তার ফিরে আসার মধ্য দিয়েই আওয়ামী লীগের পুনর্গঠন ও রাজনৈতিক জীবনে নতুন এক অধ্যায় সূচিত হয়েছিল।

এরপর থেকে চারবার পূর্ণকালীন ক্ষমতার স্বাদ পেয়েছে আওয়ামী লীগ। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানোর আগে টানা ১৫ বছরের বেশি সময় শাসনভার সামলেছে দলটি।

ছাত্রলীগের আরও বলেছে, ইয়াহিয়া থেকে ইউনূস, প্রত্যেক ঘাতক ফ্যাসিস্টের বিচার করবে এদেশের জনগণ। আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করে নির্বিঘ্নে দেশ বিক্রির পাঁয়তারা মানুষ কড়ায়গণ্ডায় বুঝিয়ে দেবে। পৃথিবীর কোন অপশক্তিই ইউনূসকে রক্ষা করতে পারবে না, ইয়াহিয়াকেও যেমন পারেনি।

মাতৃভূমির স্বাধীনতা ও স্বার্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্য, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সবাইকে সম্মিলিতভাবে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানানো হয় ওই বিবৃতিতে।

এ সংক্রান্ত আরও খবর:

ইয়াহিয়ার ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী দল’ ইউনূসের জমানায় কাঠগড়ায়

বাংলাদেশের স্বাধীনতার নেতৃত্ব দেওয়া আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ads