ঢাকা সেনানিবাসের চারদিকে সভা-সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা, সাবেক সেনাসদস্য গ্রেপ্তার

Bangladesh Army

একই দিনে দুই বিজ্ঞপ্তি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর, একটিতে সেনানিবাসের আশেপাশে রাজনৈতিক কর্মসূচি নিষিদ্ধ করার ঘোষণা, অন্যটিতে নাশকতা ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টির অভিযোগে বরখাস্ত হওয়া এক সেনা সদস্য ও তার দুই দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তারের খবর।

বরখাস্তকৃত ওই সৈনিক রোববার ঢাকা সেনানিবাসের প্রবেশপথে বিক্ষোভ সমাবেশের নামে বড় ধরনের নাশকতা সৃষ্টির পরিকল্পনা করছিলেন এবং বিভিন্ন সোশাল মিডিয়ায় এ সংক্রান্ত উসকানিমূলক প্রচারণা চালিয়ে আসছিলেন।

সেনানিবাসের আশেপাশে রাজনৈতিক কর্মসূচির ওপর নিষেধাজ্ঞা রোববার থেকে কার্যকর হবে বলে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর বা আইএসপিআরের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

এতে বলা হয়, “রোববার হতে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কচুক্ষেত সড়ক, বিজয় সরণী হতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় হয়ে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ জাহাংগীর গেট সংলগ্ন এলাকা, বিএএফ শাহীন কলেজ হতে মহাখালী ফ্লাইওভার সংলগ্ন এলাকা, সৈনিক ক্লাব মোড়, ভাষানটেক, মাটিকাটা, ইসিবি চত্বর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় সকল প্রকার সভা, সমাবেশ, মিছিল, শোভাযাত্রা, বিক্ষোভ প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা হলো।”

সর্বসাধারণের চলাচল ও জনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে আইএসপিআর জানিয়েছে।

দ্বিতীয় বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, নাশকতা ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টির অভিযোগে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বরখাস্তকৃত সৈনিক নাইমুল ইসলাম ও তার দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

শনিবার দুপুরে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট সংলগ্ন বটতলা এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে আইএসপিআর।

আইএসপিআর জানিয়েছে, বরখাস্তকৃত ওই সেনা সদস্য গত বছরের পাঁচই অগাস্টের পর থেকে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে বরখাস্ত/অব্যাহতিপ্রাপ্ত সাবেক সেনা সদস্যদের সাথে নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে উসকানিমূলক বক্তব্য দেয়াসহ বিভিন্ন ‘নাশকতামূলক’ কার্যক্রম চালানোর পরিকল্পনা করে আসছিলেন।

এরই ধারাবাহিকতায় নাইমুল রোববার (১৮ মে) ঢাকা সেনানিবাসের প্রবেশপথে বিক্ষোভ সমাবেশের নামে বড় ধরনের নাশকতা সৃষ্টির পরিকল্পনা এবং বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় এ সংক্রান্ত বিভিন্ন উসকানিমূলক প্রচারণাও চালিয়ে আসছিলেন।

এ ধরনের শৃঙ্খলা বহির্ভূত কর্মকাণ্ড থেকে নিবৃত্ত করতে সেনাবাহিনীর একটি প্রতিনিধি দল শনিবার দুপুর দুইটায় ঢাকার খিলক্ষেত বটতলা বাজার এলাকায় তার (নাইমুলের) সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলে, নাইমুল তার কিছু সহযোগীসহ উপস্থিত একজন সেনাসদস্যদের ওপর দেশীয় অস্ত্র নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায়।

তাৎক্ষণিকভাবে নিকটস্থ সেনা ক্যাম্প থেকে একটি টহল দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে নাইমুল ও তার দুই সহযোগীকে আটক করে ওই বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

স্ত্রীর কাছে যৌতুক দাবি, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন এবং বিভিন্ন সামরিক শৃঙ্খলাপরিপন্থি কাজে জড়িত থাকার অপরাধে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল নাইমুলকে।

আইএসপিআরের লোগো।

এ বিষয়ে জানতে বিবিসি বাংলার পক্ষ থেকে ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট ও খিলক্ষেত থানায় যোগাযোগ করা হলেও নাইমুলের আটকের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট থানায় তাদের কাছে কোনো ধরনের তথ্য নেই বলে জানানো হয়েছে।

এর আগে গত বুধবার গণমাধ্যমে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয় আইএসপিআরের পক্ষ থেকে। সেখানে সেনাবাহিনীর সাবেক সদস্যদের দাবি-দাওয়া নিয়ে নেতিবাচক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছিল বাহিনীর পক্ষ থেকে।

ওইদিন আইএসপিআরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “সাম্প্রতিক সময়ে কতিপয় সাবেক সেনাসদস্যের পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তি সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার কিছু আবেদন উত্থাপিত হয়েছে যা সেনাসদর সর্বোচ্চ গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করেছে। মানবিক ও প্রশাসনিক বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে এ সকল আবেদনসমূহ যথাযথভাবে পর্যালোচনার উদ্দেশ্যে ইতিমধ্যে সেনা সদরে উচ্চপর্যায়ের একটি পর্ষদ গঠিত হয়েছে এবং এই পর্ষদের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।”

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এ সংক্রান্ত মোট ৮০২টি আবেদন গৃহীত হয়েছে, যার মধ্যে ১০৬টি আবেদন চূড়ান্ত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট রেকর্ডে পাঠানো হয়েছে। বাকি ৬৯৬টি আবেদন পর্যায়ক্রমে যাচাই-বাছাই এবং মূল্যায়ন সাপেক্ষে নিষ্পত্তির কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

বিষয়টি সময়সাপেক্ষ হলেও সেনাবাহিনী সর্বোচ্চ আন্তরিকতা এবং দায়িত্ববোধের সাথে কাজ করে যাচ্ছে বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

“সরকার ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, সাবেক সেনাসদস্যদের প্রাপ্য সম্মান, মর্যাদা ও ন্যায্য দাবিসমূহের প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধাশীল এবং ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিশ্বাস করে—পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সহানুভূতি ও যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে চলার মাধ্যমেই প্রতিটি সমস্যা শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করা সম্ভব,” বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।

এ বিষয়ে যে কোনো ধরনের নেতিবাচক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার এবং যেকোনো পরিস্থিতিতে ধৈর্য্য, শৃঙ্খলা ও সহনশীলতা বজায় রাখার জন্য পরামর্শ প্রদান করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

গত বছর আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সেপ্টেম্বরে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে চাকরিচ্যুত সেনাসদস্যরা বকেয়া বেতন-ভাতাসহ চাকরি পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে একটি সংবাদ সম্মেলন করেন।

ওই একই সময় সময় অর্ধশতের বেশি চাকরিচ্যুত সেনাসদস্য প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে তাদের দাবি বাস্তবায়নের আহ্বান জানান।

‘সহযোদ্ধা’ নামে চাকরিচ্যুত সেনাসদস্যদের একটি প্ল্যাটফর্ম থেকে তারা এসব দাবি তুলে ধরেছিলেন।

ডিসেম্বর মাসে চাকরিতে পুনর্বহাল ও বিচার ব্যবস্থার সংস্কারসহ তিন দফা দাবিতে ঢাকা সেনানিবাসের শহীদ জাহাঙ্গীর গেটের সামনে অবস্থান নেন চাকরিচ্যুত ও বাধ্যতামূলক অবসরে যাওয়া সশস্ত্র বাহিনীর একদল সদস্য। পরে তাদের আবেদনের পরামর্শ দেয় কর্তৃপক্ষ।

৫ আগস্টের পর বিভিন্ন সময়েই সাবেক সেনাসদস্যদের জাহাঙ্গীর গেট বা রাওয়া ক্লাব এলাকায় নানা কর্মসূচি রেওয়াজে পরিণত হয়েছিল। গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের গড়া একটি দলের নেতাকেও সম্প্রতি ক্যান্টনমেন্টকে ইঙ্গিত করে বক্তব্য দিতে দেখা গেছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ads