বঙ্গবন্ধু ভবন গুঁড়িয়ে দেওয়ায় ভারতের নিন্দা, পাকিস্তানির উল্লাস

ঢাকার বঙ্গবন্ধু ভবন ভাংচুর-অগ্নিসংযোগ করে পরে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।
ঢাকার বঙ্গবন্ধু ভবন ভাংচুর-অগ্নিসংযোগ করে পরে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় যে সমীকরণে ছিল ভারত ও পাকিস্তান, অর্ধ শতক পরে আবার সেই সমীকরণেই দাঁড়িয়েছে।

শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়া ভারত সরকার ঢাকায় বঙ্গবন্ধু ভবন গুঁড়িয়ে দেওয়ার নিন্দা জানিয়েছে। ভারতের সংবাদপত্রগুলোও গুরুত্বের সঙ্গে ছাপিয়েছে ঐতিহাসিক এই বাড়িটি মাটিতে মিশিয়ে দেওয়ার খবর। অন্যদিকে পাকিস্তান থেকে উল্লাসের খবর পাওয়া যাচ্ছে সোশাল মিডিয়ায়।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের আগেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পাকিস্তান ভাঙার কারিগর হিসেবে চিহ্নিত করেছিল ইসলামাবাদ সরকার। ২৫ মার্চ রাতে গণহত্যা শুরুর পর বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গিয়েছিল পশ্চিম পাকিস্তানে।

অদম্য বাঙালি তখন ঝাঁপিয়ে পড়েছিল স্বাধীনতা যুদ্ধে। নয় মাসের সেই যুদ্ধে বিজয় অর্জনে বন্ধু হয়ে পাশে দাঁড়িয়েছিল ভারত। যুদ্ধে সহায়তা, কোটি শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়ার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করে ফিরিয়ে আনতেও রেখেছিল ভূমিকা।

স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের শিকার হলে তার মেয়ে শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছিল ভারত। অর্ধশতক পর শেখ হাসিনা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর সেই ভারতই এখন তার আশ্রয়স্থল।

এদিকে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার যখন পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে তৎপর, তখন অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতাদের আহ্বানে বুধবার রাতে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িটি।

ভারতে থাকা শেখ হাসিনার ভার্চুয়াল ভাষণের প্রতিক্রিয়ায় ‘ফ্যাসিবাদের চিহ্ন’ মুছে দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে বুলডোজার নিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় ঐতিহাসিক বাড়িটি। শুধু তাই নয়, ঢাকায় শেখ হাসিনার বাড়ি সুধা সদনসহ বিভিন্ন জেলায় আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িতেও চলে ভাংচুর-অগ্নিসংযোগ।

অন্তর্বর্তী সরকার এই ঘটনার জন্য ভারতে থেকে শেখ হাসিনার ‘উসকানিমূলক’ বক্তব্যকে দায়ী করার পর নয়া দিল্লি থেকে বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে বঙ্গবন্ধু ভবন গুঁড়িয়ে েদেওয়ার নিন্দা জানানো হয়।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়ালকে উদ্ধৃত করে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “শেখ মুজিবুর রহমান, যিনি দখলদার বাহিনী ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষের বীরোচিত প্রতিরোধের মূর্ত প্রতীক ছিলেন, তার ঐতিহাসিক বাসভবনটি যেভাবে পাঁচই ফেব্রুয়ারি ধ্বংস করা হয়েছে, তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।”

বাংলাদেশের জাতীয় চেতনা গঠনের ক্ষেত্রে এই বাসভবনটির গুরুত্ব তুলে ধরে বিবৃতিতে বলা হয়, এই হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ভীষণভাবে নিন্দনীয়।

ভারতের বিভিন্ন সংবাদপত্রের প্রতিবেদনেও বঙ্গবন্ধু ভবন গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘটনাটি বড় শিরোনাম হয়ে এসেছে।

আনন্দবাজার পত্রিকা শিরোনাম করেছে- মুজিবের বাড়ি গুঁড়িয়ে শিক্ষা’ হাসিনাকে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “ঠিক ছয় মাস আগে অগাস্টের পাঁচ তারিখ সন্ধ্যায় আগুনে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল ঢাকায় ৩২ নম্বর রোডে শেখ মুজিবুর রহমানের বসতবাড়িটি। টিকেছিল কংক্রিটের কাঠামোটুকু।

“অর্ধেক বছর পরে আচমকা কর্মসূচি নিয়ে সেই কাঠামো ক্রেন, ড্রিল ও ভ্যাকুয়াম মেশিন দিয়ে মাটিতে মিশিয়ে দিল ছাত্র-জনতার নাম দিয়ে ‘নারা-এ-তকবির’ স্লোগান দেওয়া একদল তরুণ।”

‘মুজিবের বাড়িতে হামলা’ শিরোনামে দ্য টেলিগ্রাফ এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “বাংলাদেশের নৈরাজ্যের পরিস্থিতির বিষয়টি সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ পায় যখন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মুজিবুর রহমানের ঢাকাস্থ ৩২ নম্বর ধানমণ্ডির বাড়িতে একদল মানুষ সহিংস হামলা চালায়।”

বর্তমান পত্রিকা শিরোনাম করেছে- ‘নতুন বাংলাদেশ! গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো বঙ্গবন্ধুর বাড়ি’।

এই সময় এ প্রকাশিত প্রতিবেদনের শিরোনাম- ‘ঢাকায় তাণ্ডব মুজিব-ঘরে, অ্যাকশনে বুলডোজারও’।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের শিরোনাম ছিল- ‘হাসিনার অনলাইন বক্তৃতার সময় মুজিবুরের বাড়িতে আগুন দিল বিক্ষোভকারীরা’।

ভারতে এমন প্রতিক্রিয়ার মধ্যে পাকিস্তান থেকে পরিচালিত ‘ডিফেন্স পাকিস্তান’ নামে একটি এক্স একাউন্ট থেকে উল্লাসের খবর ছড়িয়ে পড়ে সোশাল মিডিয়ায়।

সেই পোস্টে বঙ্গবন্ধু ভবনের ছবি-ভিডিও যুক্ত করে লেখা হয়, “বিশ্বাসঘাতকের লিগ্যাসির অবসান, বাংলাদেশের বিপ্লবীরা শেখ মুজিবুর রহমানের ঢাকার বাড়িটি গুঁড়িয়ে দিয়েছে।”

এই বাড়িতে বসেই শেখ মুজিব ভারতের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে পাকিস্তান ভেঙেছিলেন বলে দাবি করা হয় সেই পোস্টে। তাতে আরও বলা হয়, এই ভবনের অস্তিত্ব বিলীন করে দেওয়ায় বাংলাদেশে মুজিবের আর কোনো চিহ্ন রইল না।

এক্স এ ভ্যারিফাইড একাউন্টটির নাম ‘ডিফেন্স পাকিস্তান’ হওয়ায় একে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একাউন্ট ভাবছিলেন অনেকে।

তবে ফ্যাক্টচেকিং প্ল্যাটফর্ম রিউমর স্ক্যানার বাংলাদেশ অনুসন্ধান করে জানিয়েছে, এটি পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পরিচালিত অফিসিয়াল কোনো একাউন্ট নয়। অ্যাকাউন্টটি একজন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক ও সাংবাদিক চালান। এক্সের পেইড সাবস্ক্রিপশনের মাধ্যমে এটি ভ্যারিফাইড চিহ্ন পেয়েছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ads