প্রথম ম্যাচে হারের শোধ নিয়ে সমতায় বাংলাদেশ

প্রথম ম্যাচে হারের শোধ নিয়ে বাংলাদেশের উচ্ছ্বাস।
প্রথম ম্যাচে হারের শোধ নিয়ে বাংলাদেশের উচ্ছ্বাস।

প্রথম ম্যাচে বড় ব্যবধানে হারের পর দ্বিতীয় ম্যাচে ১৬ রানের জয় তুলে নিয়ে সিরিজে সমতা ফিরিয়েছে মেহেদী হাসান মিরাজের দল।

টাইগারদের দেয়া ২৪৯ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে শ্রীলঙ্কা অল আউট হয়েছে ২৩২ রানে। এর ফলে তৃতীয় ম্যাচটি হয়ে উঠল সিরিজ নির্ধারণের নিক্তি, যা অনুষ্ঠিত হবে আগামী মঙ্গলবার। 

বাংলাদেশের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দ্বিতীয় ওভারেই উইকেট খোয়ায় শ্রীলঙ্কা। পেসার তানজিম সাকিবের এলবিডাব্লিউর ফাঁদে পড়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন ওপেনার পাথুম নিসাঙ্কাকে। স্কোরবোর্ডে তখন ৬ রান। আর ব্যক্তিগত রান হিসেবে নিশাঙ্কার ছিল ৫ রান।

এরপর কুশল মেন্ডিস ও নিশান মাদুশকা ধরে খেলে দ্রুত রান তুলতে থাকেন। মাত্র ২০ বলে অর্ধশতক তুলে নেন কুশল। আট ওভারে ওভারে স্কোর পঞ্চাশ ছাড়িয়ে টাইগারদের খানিকটা ভাবনায় ফেলে দিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। তবে ৯.৩ ওভারে ৬৯ রানের জুটি ভাঙার পর স্বস্তি ফিরে আসে। তানভীর ইসলামের ফ্লাইটেড ডেলিভারিতে ধোঁকা খেয়ে মাদুশকা ক্যাচ তুলে দেন হৃদয়ের হাতে। ২৫ বলে ১৭ রান করেন মাদুশকা, ইনিংসে ছিল ৩টি চার।

মাদুশকার বিদায়ের পরও থেমে থাকেননি কুশল মেন্ডিস। একের পর এক বাউন্ডারি হাঁকিয়ে বাংলাদেশের বোলারদের চাপে রাখেন। কিন্তু ১১.৫ ওভারে আবারও আঘাত হানেন তানভীর ইসলাম। এই বাঁহাতি স্পিনারের বলে এলবিডাব্লিউ হন কুশল। যদিও শুরুতে আম্পায়ার আউট দেননি, বাংলাদেশের নেওয়া রিভিউয়ে সিদ্ধান্ত বদলায়। কুশল আউট হন ৩১ বলে ৫৬ রান করে, ইনিংসে ছিল ৯ চার ও ১ ছক্কা।

এরপর দ্রুত আরও একটি সাফল্য এনে দেন শামীম হোসেন। ইনিংসের ১৮.৪ ওভারে লঙ্কান অধিনায়ক আসালাঙ্কাকে (১৭ বলে ৬ রান) আউট করে বাংলাদেশকে ম্যাচে ফিরিয়ে দেন তিনি। তানভীর ইসলামের হাতে ক্যাচ বানিয়ে আসালাঙ্কাকে ফিরিয়ে দেন শামীম। এতে ৯৯ রানে শ্রীলঙ্কার পড়ে চতুর্থ উইকেট।

চতুর্থ উইকেট পতনের পর জুটি গড়ার চেষ্টায় ছিলেন জেনিথ ও কামিন্দু। ২৫তম ওভারে সেই জুটি ভাঙার সুযোগ এনে দিয়েছিলেন শামীম। কামিন্দুর ক্যাচ উইকেটের পেছনে গেলেও সেটা নিতে পারেননি জাকের। তবে পরের ওভারে তানভীর ইসলাম ঠিকই তুলে নেন কামিন্দুর উইকেট। বোলিংয়ে এসেই কামিন্দুকে আউট করেছেন তানভীর। কামিন্দু ৫১ বলে ৩৩ রানে বিদায় নেন। এরপর লিয়ানাগের সঙ্গে জুটি গড়ার চেষ্টায় ছিলেন ভেল্লালাগে। ২৯.৪ ওভারে ভেল্লালাগেকে (১) নিজের চতুর্থ শিকারে পরিণত করেছেন তানভীর ইসলাম।

১৩২ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর হাসারাঙ্গাকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন লিয়ানাগে। তবে ১৬ বলে ১৩ রানের বেশি করতে পারেননি হাসারাঙ্গা। তাকে ফিরিয়েছেন মিরাজ। মহেশ থিকসানাও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। তানভীরের বলে রিশাদের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি। এই উইকেট নিয়ে নিজের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ফাইফার পেয়েছেন এই স্পিনার।

সমতা ফেরানো ম্যাচে দর্শকরা দেখেছে বাংলাদেশের বোলারদের দাপট।

৪৬তম ওভারে ১৪ রান দিয়েছিলেন হাসান মাহমুদ। ৩০ বলে ৩৭ রানের সমীকরণ চলে এসেছিল শ্রীলঙ্কার জন্য। ১৭০ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে ফেলার পর খেলা বাংলাদেশের হাতেই ছিল ম্যাচ। কিন্তু লিয়ানাগে ভয় পাইয়ে দেন। ৫৩ বলে নবম উইকেটে ৫৮ রানের জুটি গড়ে ফেলেছিলেন লিয়ানাগে। একসময় সমীকরণ চলে এসেছিল ১৭ বলে ২১ রানে। তবে লিয়ানাগেকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে স্বস্তি এনে দেন মুস্তাফিজ। লিয়ানাগে ৮৫ বলে ৭৮ রান করে আউট হলেন।

এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ব্যাটিংয়ে দারুণ শুরু পেয়েছিল বাংলাদেশ। তবে ইনিংসের মাঝপথ থেকে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারানোর খেসারত দিতে হয়েছে তাদের। পারভেজ হোসেন ইমন ও তাওহিদ হৃদয়ের ফিফটির ওপর ভর করেই লড়াই করার মতো সংগ্রহ পায় টাইগাররা। তবে লোয়ার মিডল অর্ডারের ব্যর্থতায় কাঙ্ক্ষিত বড় স্কোর গড়া হয়নি। কলম্বোতে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশ অলআউট হয় ৪৫.৫ ওভারে ২৪৮ রানে। ওপেনার ইমন খেলেছেন ৬৭ রানের ইনিংস, হৃদয়ের ব্যাটে এসেছে ৫৬ রান।

বাংলাদেশ শুরুতেই হারায় তানজিদ তামিমকে। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে আসিথা ফার্নান্দোর অফস্টাম্পের বাইরের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে উইকেটকিপারের গ্লাভসে ধরা পড়েন তামিম। ১১ বলে ৭ রানেই থামে তার ইনিংস। এরপর ইনিংস মেরামতে নামেন পারভেজ ইমন ও শান্ত। কিছুটা ছন্দে থাকলেও শান্ত ইনিংস বড় করতে পারেননি। ১২তম ওভারে চারিথ আসালাঙ্কার বলে ক্যাচ তুলে ফেরেন ১৯ বলে ১৪ রানে। একপ্রান্তে আগলে রাখেন পারভেজ ইমন। গত ম্যাচে ফিফটি মিস করা এই বাঁহাতি আজ ব্যাট চালিয়েছেন বুঝেশুনে। ৪৬ বলে ফিফটি পূর্ণ করার পর খেলেন ৬৭ রানের ইনিংস, যার জন্য খেলেন ৬৯ বল।

অধিনায়ক মেহেদি হাসান মিরাজ আবারও ব্যর্থ হয়। ব্যাট হাতে দায়িত্বশীলতা দেখাতে পারেননি তিনি। ১০ বলে ৯ রান করে বাজে শটে উইকেট দিয়ে ফেরেন সাজঘরে। শামীম হোসেনকে এদিন নামানো হয় মিডল অর্ডারে। শুরুটা ভালো করলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি তিনিও। আসিথা ফার্নান্দোর বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ২৩ বলে ২২ রানে।

এরপর তাওহিদ হৃদয়কে সঙ্গ দিতে আসেন জাকের আলী। এই জুটিতে আসে ৪৫ রান। তবে জাকের ২৪ রান করে আউট হলে আবার ছন্দপতন হয়। একে একে ফিরে যান হৃদয় (৫৬), নাসুম, শরিফুল ও রিশাদ—সব মিলিয়ে ১৪ রানের ব্যবধানে ৪ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

শেষদিকে কিছুটা লড়াই করেন তানজিম সাকিব। ২১ বলে ৩৩ রানের ইনিংসে দুটি চার ও দুটি ছক্কা হাঁকান এই তরুণ। তবে তার সেই চেষ্টা বড় সংগ্রহ এনে দিতে পারেনি। মুস্তাফিজুর রহমান (০), তানভীর ইসলাম (৪), হাসান মাহমুদ (০) কেউই তাকে যোগ্য সঙ্গ দিতে পারেননি।

শ্রীলঙ্কার হয়ে সর্বাধিক চার উইকেট শিকার করেন আসিথা ফার্নান্দো। দারুণ বোলিংয়ে তিনটি উইকেট নেন ভানিন্দু হাসারাঙ্গা।

বাংলাদেশ: ৪৫.৫ ওভারে ২৪৮ (পারভেজ ৬৭, তানজিদ ৭, শান্ত ১৪, হৃদয় ৫১, মিরাজ ৯, শামীম ২২, জাকের ২৪, তানজিম ৩৩*, হাসান ০, তানভির ৪, মুস্তাফিজ ০; আসিথা ৯-০-৩৫-৪, থিকশানা ৭-০-৩২-০, চামিরা ৭-০-৩৭-১, আসালাঙ্কা ৩-০-২৪-১, ওয়েলালাগে ৮-০-৩২-০, হাসারাঙ্গা ৯.৫-১-৬০-৩, কামিন্দু ২-০-১৯-০)।

শ্রীলঙ্কা: ৪৮.৫ ওভারে ২৩২ (মাদুশকা ১৭, নিসাঙ্কা ৫, কুসাল মেন্ডিস ৫৬, কামিন্দু মেন্ডিস ৩৩, আসালাঙ্কা ৬, লিয়ানাগে ৭৮, ওয়েলালাগে ১, হাসারাঙ্গা ১৩, থিকশানা ১, চামিরা , আসিথা ১*; হাসান ৭-০-৪৩-০, তানজিম ৪.৫-০-৩৫-২, তানভির ১০-২-৩৯-৫, মুস্তাফিজ ৮-০-৫৬-১, মিরাজ ১০-০-৩৭-১, শামীম ৯-১-২২-১)।

ফল: বাংলাদেশ ১৬ রানে জয়ী।

সিরিজ: তিন ম্যাচ সিরিজের দুটি শেষে ১-১ সমতা।

ম্যান অব দা ম্যাচ: তানভির ইসলাম।

আরও পড়ুন