ইম্প্যাক্ট অফ স্টাম্পের বাইরে কিন্তু মাঠে মোহামেডানের খেলোয়াড়দের আচরণ দেখে মনে হচ্ছিল নিশ্চিত আউট দিচ্ছেন না আম্পায়ার তানভীর আহমেদ। বোলার ইবাদত হোসেন চৌধুরি অনেকটা দূরে গিয়ে ক্ষোভ দেখালেন, অধিনায়ক তাওহিদ হৃদয় যেন ক্ষোভে ফেটে পড়লেন। পরিস্থিতি শান্ত করতে উল্টো ঝামেলায় পড়ে গেলেন শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ সৈকত। আইসিসি এলিট প্যানেলভুক্ত আম্পায়ারের দিকে তেড়ে যান হৃদয়। এই ঘটনায় এক ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছেন তিনি। শাস্তি হয়েছে পেসার ইবাদতেরও।
ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে প্রাথমিক পর্বের শেষ রাউন্ডে শাস্তি পেয়েছেন হৃদয়। তাই সুপার সিক্সের প্রথম ম্যাচে খেলতে পারবেন না এই তরুণ ব্যাটসম্যান।
মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শনিবার আবাহনী লিমিটেডের ইনিংসের এক পর্যায়ে আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে অসন্তোষ প্রকাশ করেন ইবাদত ও হৃদয়। পরে আনুষ্ঠানিক শুনানিতে দুজনের শাস্তির সিদ্ধান্ত জানান ম্যাচ রেফারি নেয়ামুর রশিদ রাহুল।
“টুর্নামেন্টের আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় ইবাদত হোসেনকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা ও এর সঙ্গে ৩টি ডিমেরিট পয়েন্ট দেওয়া হয়েছে। এছাড়া তাওহিদ হৃদয়কে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও এক ম্যাচ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।”
“ক্রিকেটার ও মোহামেডানের পক্ষ থেকে শাস্তি কমানোর অনুরোধ করা হয়েছিল। পরবর্তীতে তাই জরিমানার অর্থ মওকুফ করা হয়েছে। তবে পরের ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখা হয়েছে।”
হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ায় আগেই টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে গেছেন মোহামেডানের নিয়মিত অধিনায়ক তামিম ইকবাল। হৃদয়ও নিষিদ্ধ হওয়ায় সুপার লিগের প্রথম ম্যাচে তাই নতুন অধিনায়ক নিয়ে খেলতে হবে মোহামেডানের।
ঘটনার সুত্রপাত আবাহনীর ইনিংসের অষ্টম ওভারে। ইবাদতের প্রথম বল পা বাড়িয়ে ব্যাটে খেলতে লাগাতে পারেননি মোহাম্মদ মিঠুন। জোরাল আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার তানভীর আহমেদ। সিদ্ধান্ত মেনে নিতে না পেরে তীব্র রাগে ফেটে পড়েন পেসার ইবাদত। নিজের হাতে সোয়েট ব্যান্ড খুলে প্রবল আক্রোশে মাটিতে ছুড়ে মারেন গতিময় এই পেসার।
পরিস্থিতি সামাল দিতে এগিয়ে আসেন লেগ আম্পায়ার শরফৌদ্দুল্লা। মোহামেডানের ক্রিকেটারদের বুঝিয়ে পুনরায় খেলা শুরুর ইঙ্গিত দেন তিনি।
সেই সময় ফের রেগে উঠতে দেখা যায় হৃদয়কে। এসময় আঙুল উঁচিয়ে শরফৌদুল্লাকে কিছু একটা বলতে বলতে বিপজ্জনকভাবে এগোতে থাকেন তিনি। দ্রুত এগিয়ে এসে তাকে সরিয়ে নেন মেহেদী হাসান মিরাজ। আম্পায়ারকে জড়িয়ে ধরে সরিয়ে নেন অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম। ক্রিজে থাকা আবাহনী অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তও জাতীয় দলের সতীর্থ হৃদয়কে শান্ত করার চেষ্টা করেন।
হৃদয় ও শরফৌদুল্লার উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ে খেলা শুরু হতে আরও কিছুটা সময় লেগে যায়।
পরে টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, ইবাদতের ওই বলে ‘ইমপ্যাক্ট’ অফ স্টাম্পের বাইরে।
পুনরায় খেলা শুরু হলে পরের ডেলিভারি ওয়াইড করেন ইবাদত। বল গ্লাভসে নিয়েই থ্রো করে বসেন মাহিদুল ইসলাম। যা অল্পের জন্য মিঠুনের গায়ে লাগেনি। এটি নিয়ে আম্পায়ারদের কাছে অভিযোগ করেন আবাহনীর কিপার-ব্যাটসম্যান।
ইবাদতের ওই ওভারের আগে মিরাজের বলে শান্তর একটি এলবিডব্লিউর আবেদনেও সাড়া দেননি আম্পায়াররা। সেটি নিয়েও ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া দেখান মোহামেডানের ক্রিকেটাররা।
ম্যাচ শেষে আম্পায়ারদের কাঠগড়ায় তুলেন হৃদয়।
“ঘটনা… হ্যাঁ… যেটা হয়েছে টোটালি… সবকিছু এক্সপ্লেইন করতে পারব না। কিন্তু হিট অব দ্য মোমেন্টে অনেক কিছুই হয়। তারাও মানুষ তারাও ভুল করে। কিন্তু আমার কাছে যেটা মনে হয়েছে যে তারা ভুল করতেই পারে, মানুষ মাত্রই ভুল, আমরাও ভুল করব। বা আপনার প্রফেশন থেকে আপনিও ভুল করতে পারেন। কিন্তু আমার কাছে যেটা মনে হয়, ভুলটা স্বীকার করা উচিৎ। আমি যদি ভুল করি আমি স্বীকার করব। ভুলটা স্বীকার না করে… আপনি যদি মনে করেন… এটা ভুল না, তাহলে এটা হয় না। অবশ্যই তাকে আমরা রেসপেক্ট করি, তিনি ইন্টারন্যাশনাল আম্পায়ার, আমরাও ইন্টারন্যশনাল প্লেয়ার। তো এখানে আজকে যারা ছিল ম্যাক্সিমামই ইন্টারন্যাশনাল প্লেয়ারই ছিল। তো… এরকম বড় ম্যাচে একটা দুইটা ভুল ডিসিশন অনেক কিছু… বড় একটা ব্যবধান তৈরি করে দিতে পারে। তো এটা নিয়ে কি হয়েছে এটা আমি বলব না… কিন্তু যদি অন্যদিকে যায় তাহলে অবশ্যই এটা নিয়ে মুখ খুলব ইনশাল্লাহ, আমি খুলব।”
“হ্যাঁ ইন্টারন্যাশনালে তো অহরহ হয়। ডোমিস্টিকে এর চেয়েও বাজে হতো। এখন তো এটাও হয় না। এখন তো ডে বাই ডে আমরা প্লেয়াররাও অনেক… রেসপেক্ট করে। শুধু আমাদের প্লেয়ারদের ওপর দোষ দিলেই হবে না।… আপনারা দেখেন… আমাদের আম্পায়ারিং… তারাও তাদের ডিপার্টমেন্ট থেকে দেখেন… এক দুইজন ছাড়া তারাও যে খুব ভালো করে এরকম না। তো… যখন… জাস্টিফাই করবেন তখন আমার মনে হয় দুই সাইড থেকেই জাস্টিফাই করা উচিৎ আমার কাছে যেটা মনে হয়।”