আওয়ামী লীগের পর বিএনপিও নামছে মাঠে : কী হবে ফেব্রুয়ারিতে?

AL-BNP-TheSun24

শেষ কবে বিএনপি আর আওয়ামী লীগ দুই দলই একই অবস্থান থেকে আন্দোলনের কর্মসূচি দিয়েছে মনে করতে পারবেন কি? ১৯৯০ সালের পরে যাদের জন্ম, তারা অন্তত দেখেননি।

১৯৯১ সাল থেকে যখন বিএনপি ক্ষমতায়, তখন আওয়ামী লীগের কর্মসূচি থাকত বিএনপির সরকারের বিরুদ্ধে। আবার যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়, তখন বিএনপির কর্মসূচিও ছিল আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে।

২০০৭-০৮ সালে জরুরি অবস্থার সময় বাংলাদেশের প্রধান দুই দলই ছিটকে পড়ে ক্ষমতার বাইরে। তবে একসঙ্গে কর্মসূচি দিতে হয়নি তাদের। সেনা সমর্থিত ফখরুদ্দীন আহমদ সরকারের সঙ্গে আলোচনাতেই নির্বাচনের পথ প্রশস্ত হয়েছিল।

গত বছরের আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাছাড়া হওয়ার পর বিএনপি আসেনি ক্ষমতায়, এসেছে ২০০৭ সালের মতোই একটি অন্তর্বর্তী সরকার।

ফলে অবস্থানগত দিক থেকে দুই দলই ক্ষমতার বাইরে, তা ঠিক। তবে সেবারের চেয়ে এবারের ভিন্ন প্রেক্ষাপটে পাল্লা বিএনপির দিকেই ভারী। দেড় দশক পর চাপ থেকে বেরিয়ে এসেছে তারা, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছেও পাচ্ছে গুরুত্ব।

অন্যদিকে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেয়া, অন্য নেতাদের জেলে কিংবা বিদেশে পালিয়ে থাকার মধ্যে আওয়ামী লীগ রয়েছে তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সঙ্কটে।

এর মধ্যেই সাড়ে পাঁচ মাস পর ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। ফেইসবুকের মাধ্যমে দেওয়া বিবৃতিতে ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে বিক্ষোভের পাশাপাশি হরতাল-অবরোধও রয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

স্বাভাবিকভাবেই এই আন্দোলন ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে। সংবিধানের বাইরে গিয়ে গঠিত এই সরকারের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তাদের পদত্যাগ চেয়েছে তারা।

আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ঘোষণার ঠিক আগের রাতেই বিএনপির নীতি-নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি বৈঠকে বসে। সেখানে আন্দোলন নিয়ে আলোচনা হয়।

কিন্তু কাদের বিরুদ্ধে, আর কেনইবা আন্দোলন? বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার তো বিএনপির প্রতিপক্ষ নয়। অভ্যুত্থানের পর গঠিত এই সরকারকে পূর্ণ সহযোগিতা করার ঘোষণা তো বিএনপির দণ্ডমুণ্ডের কর্তা তারেক রহমানই দিয়েছিলেন।

তবে নির্বাচন প্রশ্নে হালে ইউনূস সরকার এবং তাদের ‘নিয়োগকর্তা’ জুলাই আন্দোলনের ছাত্রনেতাদের সঙ্গে বিএনপির এক ধরনের দূরত্ব যে তৈরি হয়েছে, তা অনেকটাই স্পষ্ট।

আর সেই প্রেক্ষাপটেই বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন বলেছেন, সরকারকে ‘সঠিক’ পথে রাখতে ফেব্রুয়ারিতে তারাও আন্দোলন নিয়ে মাঠে নামবেন।

ফলে দেখা যাচ্ছে, বিএনপি ও আওয়ামী লীগ উভয়ের লক্ষ্যবস্তুই ইউনূস সরকার। এখন তাদের দুই পথ সামনে এক হয়ে যায় কি না, তা রাজনৈতিক মহলে কৌতূহলের জন্ম দিয়েছে।

আওয়ামী লীগ কী চাইছে?

আওয়ামী লীগ মঙ্গলবার তাদের ফেইসবুক পাতায় বিবৃতিতে ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে নানা কর্মসূচি ঘোষণা করে। তার মধ্যে ১৬ ফেব্রুয়ারি অবরোধ এবং ১৮ ফেব্রুয়ারি হরতালও রয়েছে।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাদেল চৌধুরী দ্য সান ২৪ কে বলেন, “আগস্টের পর থেকে আমরা কোনো কর্মসূচিতে যাইনি। আমাদের নেতা-কর্মীরা অনেক নিপীড়ন, নির্যাতন সহ্য করেছেন। নির্মমভাবে খুন করা হয়েছে। পালিয়ে বেড়াচ্ছেন লাখো নেতাকর্মী। আমরা তাদের সুরক্ষার কথা ভেবে এতদিন মাঠে নামিনি।

“তবে এভাবে আর চলতে দেওয়া যায় না। আওয়ামী লীগ রাজপথের দল, আমরা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীদের রাজপথেই মোকাবেলা করতে চাই।”

ঢাকায় আওয়ামী লীগের এমন সমাবেশ ৫ আগস্টের পর থেকে আর দেখা যায়নি।

ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, ১ ফেব্রুয়ারি শনিবার থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি বুধবার পর্যন্ত সারাদেশে প্রচারপত্র বিলি করবেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। ৬ ও ১০ ফেব্রুয়ারি জেলা, উপজেলা, ওয়ার্ডে প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ করবে দলটি।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে হত্যাসহ সব মামলা প্রত্যাহার এবং ‘প্রহসনমূলক বিচার’ বন্ধ করার দাবি জানিয়েছে আওয়ামী লীগ।

গত ৫ আগস্টের পর নতুন সরকার গঠিত হলেও বিবৃতিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকেই ‘প্রধানমন্ত্রী’ হিসাবে উল্লেখ করা হয়। অবৈধ ও অসাংবিধানিক ইউনূস সরকারের পদত্যাগের দাবিও তুলেছে দলটি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির প্রতিবাদও করছে আওয়ামী লীগ।

নাদেল চৌধুরী বলেন, “এ কর্মসূচি শুধু আওয়ামী লীগের কর্মসূচি নয়, এটি জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন। অবৈধ ও অসাংবিধানিক ক্ষমতা দখলকারী খুনি-ফ্যাসিস্ট ইউনূস সরকারের পদত্যাগ ছাড়া আমাদের নেতাকর্মীরা ঘরে ফিরবে না।”

তবে ঘোষিত কর্মসূচি আওয়ামী লীগ সফল করবে কীভাবে, তা নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন। কারণ দলটি এখন দেশে নেতৃত্বশূন্য অবস্থায় রয়েছে।

গত ৫ আগস্টের পর যে গুটিয়কয়েক কর্মসূচি আওয়ামী লীগ দিয়েছিল, তা পালনে গিয়ে দলটির সমর্থকরাও মারধরের শিকার হয়েছিলেন। উত্তেজনা থিতিয়ে আসার পর পালিয়ে থাকা স্থানীয় পর্যায়ের যেসব নেতা-কর্মী এলাকায় ফিরতে শুরু করেছিলেন, তারাও এখন উদ্বেগে পড়েছেন।

ইউনিয়ন পর্যায়ের এক নেতা বিবিসি বাংলাকে বলেন, “মামলা-হামলার ভয়ে আমরা এমনিতেই বাড়িঘরে থাকতে পারতেছি না। এর মধ্যে দলীয় কর্মসূচি পালন করতে যাওয়া মানে নিশ্চিত গ্রেপ্তার।

“দেশের বাইরে বসে নেতারা তো কর্মসূচি দিয়েই খালাস। তাদের তো মাঠেও নামা লাগবে না, গ্রেপ্তার-নির্যাতনের শিকারও হতে হবে না। যা কিছু যাবে সব আমাদের ওপর দিয়ে।”

তৃণমূলের বেশিরভাগে নেতা-কর্মীর বক্তব্যই এই রকম বলে বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়। তবে কেউ কেউ বলেন, কর্মসূচির কারণে কর্মীদের মনোবল বাড়বে, দলও চাঙা হবে।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতির কারণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সাধারণ মানুষের যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে, তাতে কর্মসূচি দিলে জনগণই তা সফল করবে বলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের ধারণা।

দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বিবিসি বাংলাকে বলেন, “দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, আইনশৃঙ্খলাসহ নানা কারণে দেশের মানুষ আজ অতিষ্ঠ। এই অবৈধ সরকারের হাত থেকে মানুষ মুক্তি চায়, বাঁচতে চায়।

“তাই মানুষকে রক্ষা করার জন্য, মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আমরা এই কর্মসূচি দিতে বাধ্য হয়েছি। আওয়ামী লীগ এদেশের মানুষের দল। জনগণের স্বার্থে, জনগণের দাবি আদায়ের জন্য এই আন্দোলন কর্মসূচি। ফলে সাধারণ মানুষই এই হরতাল-অবরোধ পালন করবে।”

বিএনপির কী চাওয়া?

আওয়ামী লীগের কর্মসূচি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার মধ্যে বিএনপির প্রভাবশালী নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ বুধবার ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় বলেন, ফেব্রুয়ারিতে তারাও যাচ্ছেন আন্দোলনে।

তিনি বলেন, “আমরা যদি সরকারকে সফল হতে দিতে চাই, তাহলে সরকারকে গাইড করার জন্য যথেষ্ট সমালোচনা করতে হবে। এমনকি আমাদের সড়কে আন্দোলনও করতে হতে পারে, সরকারকে সঠিক রাস্তায় নিয়ে আসার জন্য।”

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কিছু পদক্ষেপ নিয়ে বিএনপির সমালোচনা রয়েছে। বিশেষ করে বিএনপি নির্বাচন দ্রুত দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। সংস্কারের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার বেশি সময় নিতে চাইলেও তাতে বিএনপির রয়েছে আপত্তি। দৃশ্যত বিএনপি সেই চাপ বাড়াতেই আন্দোলনে নামতে চাইছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এখন বিএনপি সমাবেশ করতে পারছে অবাধে।

সালাহউদ্দিন বলেন, “আমরা সামনের দিনে কী কী সংস্কার চাই, কীভাবে নির্বাচন চাই, কখন নির্বাচন চাই, এই সরকারের সিদ্ধান্ত এবং সিদ্ধান্তহীনতার কারণে এগুলো নিয়ে এখন প্রশ্ন তৈরি হচ্ছে।

“সেই জায়গা থেকে আমরা এখন দলের পক্ষ থেকে চিন্তা করছি সরকারের কিছু ভুল শুধরিয়ে সঠিক রাস্তায় এনে গণতান্ত্রিক রাস্তা বিনির্মাণের জন্য এবং একটি নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকারের পথ পরিষ্কার করার জন্য আমরা কিছু পদক্ষেপ নেব। সরকার সেটাকে আন্দোলনও বলতে পারে, সমালোচনা বলতে পারে।”

দৈনিক কালের কণ্ঠ ও দেশ রূপান্তরে বুধবার প্রকাশিত আলাদা প্রতিবেদনে ফেব্রুয়ারি মাসে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে বিএনপির মাঠে নামার পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়।

তাতে বলা হয়, প্রথম পর্যায়ে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে সমাবেশ হবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে সমাবেশ হবে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র ফেরানোর দাবিতে। মূলত দ্রুত নির্বাচনের বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে চাপে রাখতে এই কৌশল নিয়েছে দলটি।

সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে তা নিশ্চিত হওয়ার কথা জানায় কালের কণ্ঠ। বৈঠকে তারেক রহমান ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে প্রথমে কর্মসূচি দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি শনিবার প্রথম কর্মসূচিতে সমাবেশ হতে পারে। একই সঙ্গে সারাদেশে বিভাগ ও জেলা পর্যায়েও একই কর্মসূচি হতে পারে।

দ্বিতীয় কর্মসূচি হিসেবে সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার দাবিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। একই পর্যায়ে জেলায় জেলায় সমাবেশ করা হবে।

মার্চজুড়ে রোজা, তাই ফেব্রুয়ারি মাসেই কর্মসূচিগুলো শেষ করতে চায় বিএনপি।

বৈঠকে থাকা আরেক নেতা বলেন, বৈঠকে অধিকাংশ নেতা অভিমত দেন যে নির্বাচনের জন্য এত সময়ের দরকার নেই। ন্যূনতম সংস্কার করে একটি অবাধ-সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আগামী জুলাই-আগস্টেই করা সম্ভব।

তবে জুলাই-আগস্টে নির্বাচনের দাবিটা মূলত সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য করছে বিএনপি। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হলে বিএনপির আপত্তি থাকবে না বলে জানান ওই নেতা।

সরকার কী করবে?

অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের বিষয়ে সরকার ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নেওয়াই রয়েছে।

এর আগে ১৫ আগস্ট শোক দিবস ও নূর হোসেন দিবসে কর্মসূচি দিলেও রাস্তায় নামতে পারেনি আওয়ামী লীগ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা দুই বারই প্রতিরোধের ঘোষণা দিয়ে অবস্থান নেয়।

অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর পোড়ানো হয় বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়।

সামনেও আওয়ামী লীগ মাঠে নামার চেষ্টা করলে প্রতিহত করা হবে বলে জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ।

তিনি বিবিস বাংলাকে বলেন, “তারা যদি আবার এখানে এসে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা করে, কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম করার চেষ্টা করে, তাহলে এদেশের মানুষই তাদের প্রতিহত করবে।

“এদেশের জনগণ আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করেছে সেই ৫ই আগস্টে। সুতরাং তারা রাস্তায় নামলে এদের মানুষই পিটিয়ে তাদের রাস্তাছাড়া করবে। এজন্য আলাদা কর্মসূচি ঘোষণার প্রয়োজনীয়তা আছে বলে আমরা মনে করি না।”

সরকারেরও একই অবস্থানের কথা জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, আওয়ামী লীগের বিচার না হওয়া পর্যন্ত তাদের কোনো ধরনের কর্মসূচি পালন করতে দেওয়া হবে না, এটা সরকারের স্পষ্ট অবস্থান।

এক ফেইসবুক পোস্টেও তিনি লিখেছেন, অতীতের ভূমিকার জন্য আওয়ামী লীগ ক্ষমা চেয়ে তাদের সংশোধন না করা পর্যন্ত তাদের বিক্ষোভ করার অনুমতি দেওয়া হবে না। এরপরও তারা কর্মসূচি পালনে নামলে তাদের কঠোরভাবে দমন করা হবে।

প্রেস সচিব বলেন, “পৃথিবীর কোনও দেশ কি একদল খুনি এবং দুর্নীতিবাজ চক্রকে আবার ক্ষমতায় আসতে দেবে? কোনও দেশই জবাবদিহি ছাড়া স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফেরার অনুমতি দেয় না।

“বাংলাদেশের জনগণ এই খুনিরা কোনো প্রতিবাদ-সমাবেশ করলে তার বিরুদ্ধে কঠিন জবাব দেবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাংলাদেশের জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে। আমরা দেশকে সহিংসতার দিকে ঠেলে দেওয়ার কোনো ধরনের প্রচেষ্টাকে সুযোগ দেব না। আওয়ামী লীগের পতাকাতলে কেউ যদি অবৈধ বিক্ষোভ করার সাহস করে, তবে তাকে আইনের মুখোমুখি হতে হবে।”

অর্থাৎ আওয়ামী লীগের কেউ নামলেই তাকে ধরা হবে, এই বার্তা দিয়েছেন তিনি।

কিন্তু বিএনপি যদি আন্দোলনে নামে? তাহলে বাধা পাবে না, তা প্রেস সচিবের ফেইসবুক পোস্টে স্পষ্ট।

তিনি লিখেছেন, গত আগস্টে দায়িত্ব নেওয়ার পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কোনো বিক্ষোভ বন্ধ বা নিষিদ্ধ করেনি। তবে আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রে বিষয়টি ভিন্ন।

কিন্তু নির্বাচন নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের তরজা ভিন্ন ইঙ্গিত দিচ্ছে।

মির্জা ফখরুল সম্প্রতি বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতাদের রাজনৈতিক দল গঠনের প্রয়াসে সরকার নিরপেক্ষতা হারাবে বলে মন্তব্য করেছিলেন।

তার জবাবে তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেছিলেন, মির্জা ফখরুল ২০০৭ সালের ওয়ান-ইলেভেনের মতো সরকার আনতে চাইছেন।

তার ভাষ্যে, “১/১১ এর বন্দোবস্ত থেকেই আওয়ামী ফ্যাসিজমের উত্থান ঘটেছিল। বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্যে সামনে আরেকটা ১/১১ সরকার, সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা ও নতজানু পররাষ্ট্রনীতির ধারাবাহিকতা এবং গুম-খুন ও জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়ার আলামত রয়েছে।”

অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতাদের নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা চলার কথাও বলেন নাহিদ।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বিএনপিকে আক্রমণ করে তখন ফেইসবুকে লেখেন, “বিএনপি একথা ভুলে গেল, গণ-অভ্যুত্থানের ফলে গঠিত হওয়া সরকারের ম্যান্ডেট ষাট-সত্তরভাগ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হওয়া রাজনৈতিক দলের চেয়েও বেশি।”

হাসনাত আগেও একবার রাজনৈতিক দলগুলোকে সতর্ক করেছিলেন। ফখরুলের বক্তব্যের জবাবে তিনি যা বলেছেন, তাতে এটা বোঝা যাচ্ছে, অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘সঠিক’ পথে আনতে গিয়ে আন্দোলনে নেমে যদি বিএনপি ‘বেপথে’ যায়, তবে তাদেরও ছেড়ে কথা কইবে না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

আরও পড়ুন