কুমিল্লায় শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানকে বিএনপি নেতার হুমকি-ধমকি, অডিও ভাইরাল

কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর শামছুল ইসলাম (বামে) ও অভিযুক্ত আব্দুল গফুর ভূইয়া (ডানে)।
কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর শামছুল ইসলাম (বামে) ও অভিযুক্ত আব্দুল গফুর ভূইয়া (ডানে)।

কুমিল্লায় একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির পদে নিজের নাম না থাকায় শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন সাবেক এমপি ও উপজেলা বিএনপির সদস্য আবদুল গফুর ভূঁইয়া। 

একটি ভাইরাল হওয়া অডিওতে শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক শামসুল আলমকে শাসাতে শোনা যায় ওই বিএনপি নেতাকে।

তাকে বলতে শোনা যায়, “আপনাকে এ চেয়ারে কে বসাইছে, তার কতো বড় কলিজা? তার কলিজা খুলব, আপনার কলিজাও খুলব। আমি অফিসে এসে আপনাকে অপমান করব। আপনার বিরুদ্ধে মামলা করব। আপনাকে দেখে নেব।”

প্রায় দুই মিনিটের কথোপকথনের পুরো সময়ই তিনি বোর্ড চেয়ারম্যানকে শাসাতে থাকেন। কথোপকথন মে মাসের হলেও সম্প্রতি তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়।  

অবশ্য গফুর ভূঁইয়ার দাবি, তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে অডিওটি সম্পাদনা করে খণ্ডিত অংশ প্রকাশ করেছে তার বিরোধীপক্ষের লোকজন।  

আবদুল গফুর ভূঁইয়া ২০০১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তৎকালীন কুমিল্লা-১১ (নাঙ্গলকোট) আসন থেকে বিএনপির মনোনয়নে সংসদের টিকিট পেয়েছিলেন। বর্তমানে উপজেলা বিএনপির সদস্য পদে আছেন তিনি। 

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবস্থাপনা কমিটিতে নিজেদের নাম ঢোকাতে বিএনপিসহ স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে তোরজোর শুরু হয়।

গত ১৭ মে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক আমিরুল কায়ছার স্বাক্ষরিত একটি চিঠি শিক্ষা বোর্ডে পাঠানো হয়। সেখানে নাঙ্গলকোট উপজেলার ভোলাইন বাজার উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের সভাপতি হিসেবে সাবেক এমপি আবদুল গফুর ভূঁইয়া, বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদারের বড় ভাই মীর আবু সালেহ শামসুদ্দীন এবং ইসরাত সুলতানা সুমীর নাম প্রস্তাব করা ছিল।

তবে পরে বোর্ড থেকে তাদের তিনজনের মধ্যে মীর আবু সালেহ শামসুদ্দীনকে সভাপতি করা হয়।

মূলত এ খবর পেয়েই পরদিন ক্ষিপ্ত হয়ে ফোনে শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানকে গালাগাল ও নানা হুমকি দেন গফুর ভূঁইয়া।  

ওই ফোনালাপে গফুর ভূঁইয়াকে বলতে শোনা যায়: “বেয়াদবিরও একটা সীমা আছে। সে (দিদার) বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য এখন নেই।”

উত্তরে বোর্ড চেয়ারম্যানকে বলেন: “সে আমার কাছে পরিচয় দিয়েছে।”

তাৎক্ষণিকভাবে গফুর ভুঁইয়া বলেন: “পরিচয় দেক, পরিচয় দিলেও একজন সংসদ সদস্যকে আপনি অপমান করতে পারেন না। আমি আপনার অফিসে আছি, আপনাকে অপমান করব। আপনি ভেজাল লাগাইছেন। আপনারে এটার দায়-দায়িত্ব নিতে হবে। আমি কালকে আপনার বিরুদ্ধে মামলা করব। কত বড় সাহস, আপনারে আমি দেখে নেব। আপনাকে আমি বলছি, আপনি এটা (কমিটি) সুন্দরভাবে যদি না করেন তা হলে কিন্তু ক্ষতি হবে। আপনি অপমানিত হবেন। আমি আপনাকে দেখে নেব। আমি টোকাই না। আই ওয়াজ ল্য মেকার, আই নো ল্য।” 

অবশ্য এরই মধ্যে মীর আবু সালেহ শামসুদ্দীন সভাপতি পদ থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন বলে জানা গেছে। তার স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে গফুর ভূঁইয়াকে। ২২ মে বোর্ড থেকে এ সংক্রান্ত চিঠিও দেওয়া হয়। 

এ বিষয়ে ভোলাইন বাজার উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মহিন উদ্দিন সমকালকে বলেন, “সাবেক এমপি গফুর ভূঁইয়াকে সভাপতি না করায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়। পরে ওই সাবেক এমপিকে সভাপতি করায় বিষয়টি সমাধান হয়েছে। তবে বোর্ড চেয়ারম্যানের সঙ্গে সাবেক ওই সাংসদের কী কথা হয়েছে আমি জানি না।”

বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার বলেন, “এই লোক (গফুর ভূঁইয়া) ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রশাসনের লোকজনকে হেনস্তা ও হুমকি দেন। তিনি এলাকায় আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনেরও দায়িত্ব নিয়েছেন। বোর্ড থেকে একটি চিঠি ইস্যু করার পর হুমকি দিয়ে আবার নিজের নামে চিঠি করিয়ে নিয়েছেন।” 

ভাইরাল হওয়া অডিও নিয়ে অধ্যাপক শামসুল আলমের মন্তব্য চাওয়া হলেও এ বিষয়ে কথা বলতে তিনি রাজি হননি।

আবদুল গফুর ভূঁইয়া দাবি করেছেন, তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। “অডিওটি এডিট করা। এ বিষয়ে আমি আর কিছু বলতে চাই না।” 

এদিকে এ ধরনের ঘটনাকে ‘দুঃখজনক’ অভিহিত করে মন্তব্য করা থেকে বিরত থেকেছেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাকারিয়া তাহের সুমন।

তিনি বলেন, বোর্ড চেয়ারম্যানের সঙ্গে সাবেক এমপির অডিও ভাইরাল হওয়া নিয়ে এখনই মন্তব্য করার সুযোগ নেই। তবে বিষয়টি দুঃখজনক।

আরও পড়ুন