বিএনপি কি ড. ইউনূসকে প্রচ্ছন্ন হুমকিই দিল?

রাজনৈতিদ দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে মুহাম্মদ ইউনূসসহ ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরা।
রাজনৈতিদ দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে মুহাম্মদ ইউনূসসহ ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরা।

জুলাই সনদ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভেদ কাটেনি; তার মধ্যে অভ্যুত্থানকারীদের গড়া দল জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতারা গিয়ে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে চাপ দিয়ে আসেন। তারা বলেন, তাদের মতো করে জুলাই সনদ করতে হবে। তাতে তড়িঘড়ি করে রাজনৈতিক দলগুলোকে ডাকেন ইউনূস। সেই বৈঠকে বিএনপির সুর ছিল বেশ চড়া।

সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ জামানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের টানাপড়েনের খবর অনেকেরই জানা। এর মধ্যে গুমের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে ২৫ জন সাবেক ও বর্তমান সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর সেই বিরোধ আরো চরমে উঠেছে বলেই খবর পাওয়া যাচ্ছে। জেনারেল ওয়াকার এই কারণে তার সৌদি আরব সফর বাতিলও করেন।

দৃশ্যত সে বিষয়টির দিকে ইঙ্গিত করেই বুধবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ করে বলেন, “আমরা চাই না প্রতিরক্ষা বাহিনীগুলোর মধ্যে কোনো রকমের ভারসাম্য নষ্ট হোক। আমরা সেটি অ্যাফোর্ড (সামাল দেওয়া) করতে পারব না এই মুহূর্তে।”

সেনাপ্রধান এই বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন সম্ভব বলেছিলেন। কিন্তু ইউনূস বারবারই বলে আসছিলেন, আগামী বছরের জুনের মধ্যে হবে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন। শেষে বিএনপির চাপে তিনি এখন ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনের কথা বলছেন।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ।

নানা বিষয়েই জেনারেল ওয়াকারের সঙ্গে বিএনপির কথার মিল এখন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। সেখানে জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির সঙ্গে বিএনপির দূরত্ব বাড়ছে।

সালাহউদ্দিন বৈঠকে ইউনূসকে সতর্ক করে দেওয়ার সুরে বলেন, সেনাবাহিনীর সঙ্গে মতানৈক্য দেশকে অস্থিতিশীলতার ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিতে পারে।

তিনি বলেন, “আমরা চাই, আপনার সাথে প্রতিরক্ষা বাহিনীর সুসম্পর্ক বজায় থাকুক। রাষ্ট্র একটা ব্যালান্সড অবস্থায় থাকতে হবে। আমরা নির্বাচনকে সামনে রেখে কোনো রকমের ঝুঁকির মধ্যে যেতে চাই না।”

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য আরো বলেন, “মাননীয় উপদেষ্টা, আমাদের কন্টিনিউয়াস সমর্থন আপনার প্রতি ছিল, আছে। কিন্তু এটা কন্ডিশনাল (শর্তসাপেক্ষ)। আমাদের সমর্থন আরও অব্যাহত থাকবে, তবে এটা সীমাহীন নয়।”

নির্বাচন ব্যাহত হলে সমর্থনও যে থাকবে না, সেই হুঁশিয়ারি দিয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, “আমরা চাই, আপনার নেতৃত্বে একটা ঐতিহাসিক নির্বাচন—এটাই হচ্ছে কন্ডিশন (শর্ত)।

“আপনার প্রতি আমাদের সীমাহীন সমর্থন নয়, আমাদের সীমারেখা আছে। আমরা গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য এই সীমারেখার মধ্যে আপনাকে সমর্থন দিচ্ছি, আপনি দয়া করে এটা অনুধাবন করার চেষ্টা করবেন।”

আরও পড়ুন