নাটোরের স্থানীয় দৈনিক পত্রিকা প্রান্তজন-এর সম্পাদক সাজেদুল ইসলাম সেলিমকে বেধড়ক পিটিয়ে দুই হাত ভেঙে দিয়েছে বিএনপির কর্মীরা। হামলার পর তাকে নাটোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন নাটোরের লেখক, কবি, সাংস্কৃতিককর্মী, সাংবাদিকেরা।
রোববার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে কলেজ থেকে ফেরার পথে সদর উপজেলার চন্দ্রকলা বাজারে এ ঘটনা ঘটে বলে জানান নাটোর সদর থানার ওসি মাহাবুর রহমান।
আহত সেলিম (৪৫) নাটোর সদরের পন্ডিতগ্রাম এলাকার বাসিন্দা। তিনি চন্দ্রকলা বঙ্গবন্ধু কলেজের প্রভাষক।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্মীরা জানান, দুপুর সোয়া ১২টার দিকে কলেজ থেকে বাড়ি ফেরার পথে চন্দ্রকলা বাজারে স্থানীয় বিএনপি কর্মী আব্দুল ওহাবের নেতৃত্বে ৮-১০ জন বিএনপি কর্মী সাজেদুল ইসলাম সেলিমের পথরোধ করে পাশের একটি চায়ের দোকানে নিয়ে যায়। এ সময় তার মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে হকিস্টিক ও বাটাম দিয়ে ব্যাপক মারপিট করে ফেলে রেখে যায়। এ সময় তার মোটরসাইকেলও ভাঙচুর করা হয়।
এসময় বিএনপি কর্মীরা সেলিমকে কলেজে আর না আসার জন্য শাসিয়ে চলে যায়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় সেলিমকে নাটোর সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।

সাজেদুর রহমান সেলিম দ্য সান ২৪ কে বলেন, “কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই বিএনপির সন্ত্রাসীরা আমার ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এর ভেতরে একজনকে চিনতে পেরেছি, তার নাম ওহাব। সে স্থানীয় বিএনপির কর্মী। তারা আমার মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়।”
তিনি আরও বলেন, “কলেজে কমিটি নিয়ে ঝামেলায় বিএনপির একটা পক্ষ আমাকে জড়ানোর চেষ্টা করছিল। অথচ কমিটির বিষয়ে তো আমার কিছু করার নেই।”
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক রহিম নেওয়াজ সাংবাদিকদের বলেন, “কেউ যদি অপরাধ করে তার জন্য আইন আছে। কোনো মারধরকেই আমরা সমর্থন করি না।”
নাটোর সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ পলাশ কুমার সাহা জানান, মারপিটে সেলিমে দুই হাত ভেঙে গেছে। এছাড়া শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করা হয়েছে। তাকে বর্তমানে অক্সিজেন দিয়ে সদর হাসপাতালে রাখা হয়েছে।
নাটোর সদর থানার ওসি মাহবুর রহমান বলেন, “সাজেদুল ইসলাম সেলিমের ওপর হামলা হয়েছে শুনেছি। এ বিষয়ে এখনও কেউ লিখিত কোনো অভিযোগ করেননি। পুলিশ ঘটনাটি তদন্তে কাজ শুরু করেছে। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

সাংবাদিকের ওপর এমন হামলার ঘটনায় ব্যাপক নিন্দা জানিয়েছেন নাটোরের লেখক, কবি, সাংস্কৃতিককর্মী ও সাংবাদিকেরা। হাসপাতালে ছুটে গিয়ে তারা সাজেদুর রহমান সেলিমের উপর সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানান এবং হামলাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দাবি করেন।
কবি আশীক রহমান বলেন, “সেলিম নাটোরের একটা দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক, লেখলিখি করে। তাকে আজ কিছু লোক মেরে হাত দুইটা ভেঙে দিয়েছে। তাদের পরিচয় কি নিশ্চিত নই, স্বাভাবিকভাবেই মানুষ মনে করছে এই কাজ বিএনপির মানুষের। আমি এই হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি আর দুর্বৃত্তদের অনতিবিলম্বে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাই।”
কথাসাহিত্যিক জাকির তালুকদার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, “মোহাম্মদ সেলিমের পরিবারের কোনো কোনো সদস্য আওয়ামী লীগ করলেও সেলিম কোনোদিন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেয়নি, সেকথা নাটোরবাসী জানে। তাই ৫ই আগস্টের পর সেলিমকে পালাতে হয়নি। সে নিয়মিত কলেজে ক্লাস নেয়। সাহিত্যের কাজ করে। পত্রিকা চালিয়ে যায়। অথচ আজ তার ওপর হামলা হলো। খবরটি জানার পর নাটোরের সর্বস্তরের মানুষ দুর্বৃত্তদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করছে।”
ইউনাইটেড প্রেস ক্লাবে সাবেক সভাপতি রেজাউল করিম রেজা লিখেছেন, “পেশায় একজন সাংবাদিক ও একটি কলেজের প্রভাষক। একজন টগবগে তরুণ। নাটোর থেকে প্রকাশিত দৈনিক প্রান্তজন পত্রিকার সম্পাদক, কবি ও লেখক। দুর্বৃত্তরা পিটিয়ে তার দুই হাত ভেঙে দিয়েছে। শরীরে অসংখ্য ক্ষত চিহ্ন। এর নিন্দা জানানোর ভাষা আমার জানা নেই। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশার বাণী শোনানো হয়েছে ।পুলিশ ও সেনাবাহিনী খোঁজখবর নিয়েছেন।আমরা আশা করছি দ্রুত এই ঘটনার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা হবে।”
ইউনিক প্রেসক্লাবের উপদেষ্টা নবীউর রহমান পিপলু লিখেছেন, “শিক্ষক- সাংবাদিক সাজেদুর রহমান সেলিম এর ওপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তারসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।”
ইউনিক প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক বুলবুল আহমেদ লিখেছেন, “নাটোরে সাংবাদিক ও কলেজ শিক্ষক সাজেদুর রহমান সেলিম ভাইয়ের ওপর হামলার নিন্দা এবং হামলাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।”
নাটোর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসান লিখেছেন, “নাটোর থেকে প্রকাশিত দৈনিক প্রান্তজনের সম্পাদক, কবি ও শিক্ষক সাজেদুর রহমান সেলিমের ওপর হামলা চালিয়ে দুই হাত ভেঙে দিয়েছে সন্ত্রাসীরা। চন্দ্রকলা বাজারে স্থানীয় বিএনপি কর্মী আব্দুল ওহাবের নেতৃত্বে ৮/১০জন বিএনপি কর্মী এই সন্ত্রাসী হামলা চালায় বলে অভিযোগ করেছেন আহত প্রান্তজন সম্পাদক সাজেদুর রহমান সেলিম । এই হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। অবিলম্বে হামলাকারীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি জানাই।”