পুরান ঢাকার নৃশংসতার ‘দায় নিল’ যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল? চারজনকে বহিষ্কার

প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যার পর এভাবে খোলা রাস্তায় ফেলে রাখা হয় ব্যবসায়ীর লাশ।
প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যার পর এভাবে খোলা রাস্তায় ফেলে রাখা হয় ব্যবসায়ীর লাশ।

পুরান ঢাকায় ভাঙারি ব্যবসায়ীকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনার সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশের পর চার জনকে আজীবনের জন্য বহিষ্কারের কথা জানিয়েছে বিএনপির সহযোগী সংগঠন যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল।

শুক্রবার সন্ধ্যায় পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল তাদের বহিষ্কারের কথা জানায়।

তারা হলেন যুবদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক জলবায়ুবিষয়ক সহসম্পাদক রজ্জব আলী (পিন্টু) ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সাবাহ করিম (লাকি), চকবাজার থানা ছাত্রদলের সদস্যসচিব অপু দাস ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কালু ওরফে স্বেচ্ছাসেবক কালু।

দেশের বেশিরভাগ গণমাধ্যম লাল চাঁদ ওরফে মো. সোহাগের হত্যার খবর শুরুতে দায়সারাভাবে প্রকাশ করলেও দ্য সান ২৪ শুক্রবার সর্ব প্রথম পুরান ঢাকায় যুবদলের নৃশংসতা: মৃত্যু নিশ্চিতে থেঁতলে দেওয়া হয় ব্যবসায়ীর শরীর শিরোনামে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যেখানে উঠে আসে হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া প্রত্যেকের নাম ও পরিচয়।

একই সঙ্গে সিসিটিভি ফুটেজও জুড়ে দেওয়া হয় দ্য সান ২৪-এর ওই প্রতিবেদনে। শুক্রবার দুপুরের পর এক এক করে প্রথম সারির সংবাদ মাধ্যমেও খবরটি আসতে থাকে।

বুধবার সন্ধ্যায় রজনী বোস লেনের ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে মো. সোহাগকে যেভাবে খুন করা হয়েছে তা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানায়। কুপিয়ে অর্ধমৃত অবস্থায় টেনেহিঁচড়ে মাঝ রাস্তায় ফেলে বড় বড় পাথর দিয়ে আঘাত করে মৃত্য নিশ্চিত করা হয় সোহাগের।

স্মরণকালের নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে পড়লে তোলপাড় শুরু হয় চারদিকে; তড়িঘড়ি করে দায় স্বীকার করে নেয় বিএনপির সহযোগী সংগঠনগুলো।

যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আবদুল মোনায়েম ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম এক বিবৃতিতে বলেছেন, বহিষ্কৃত নেতাদের কোনো ধরনের অপকর্মের দায়দায়িত্ব সংগঠন নেবে না।

যুবদলের সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের বহিষ্কৃত নেতাদের সঙ্গে কোনো ধরনের সাংগঠনিক সম্পর্ক না রাখারও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন সংগঠন থেকে বহিষ্কৃত নেতা অপু দাসের বিষয়ে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ এবং অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার অনুরোধ জানিয়েছেন।

বিএনপির টনক

এদিকে লাল চাঁদের হত্যাকাণ্ডকে রোমহর্ষক ও নৃশংসতম বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।

“দুষ্কৃতকারীর অপরাধের দায় তাদের দল নেবে না” জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক সাজা নিশ্চিত করার আহ্বান জানাচ্ছি।

“ঘটনার ভিডিও ফুটেজে যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের যাদের দেখা গেছে, তাদের এ মামলায় আসামি করা হয়েছে। তাদের সংগঠন থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।”

গ্রেপ্তার চার, পলাতক বেশিরভাগ

ঢাকা মহানগর পুলিশের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, নিহত সোহাগের বড় বোন কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। পুলিশ ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ভিডিও সংগ্রহ করে এবং বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে এজাহারভুক্ত আসামি মাহমুদুল হাসান মহিন (৪১) এবং তারেক রহমান রবিনকে (২২) গ্রেপ্তার করেছে। রবিনের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে।

এছাড়া একই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে আরও দুজনকে আটক করেছে র‌্যাব।

ঢাকা মহানগর পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মফিজুল ইসলাম বলেন, “আমাকে অনেকের কাছেই এই প্রশ্নের জবাব দিতে হচ্ছে যে কেন এই নৃশংসতা। আমি এই প্রশ্নের জবাব এখনো দিতে পারছি না।

“আমরা যাদের গ্রেপ্তার করেছি, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এখনো কনক্লুসিভলি বলার মত তথ্য আমাদের কাছে নেই। আমরা শুধু জানি যে সেখানে নৃশংস একটা ঘটনা ঘটেছে। অনেকের কাছে ভিডিওটা আছে। আমরা জানার চেষ্টা করছি এই হত্যার মোটিভটা কী, কেন এভাবে হত্যা করা হল।”

এ সংক্রান্ত আরও খবর:

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ads