অভিবাসীদের দেশ কানাডা এখন চাপ কমাতে অভিবাসী ঠেকাতে একের পর এক কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে, যার প্রভাব বাংলাদেশি অভিবাসন প্রত্যাশীদের ওপরও পড়ছে।
বিদেশি শিক্ষার্থী কমানোর পর অস্থায়ী বাসিন্দাও সীমিত রাখার সিদ্ধান্ত এর আগে নিয়েছিল জাস্টিন ট্রুডোর সরকার। এবার সেখানে গিয়ে স্থায়ী হওয়াদের বাবা-মা কিংবা দাদা-দাদি ও নানা-নানি নেওয়ার সুযোগ বন্ধ করেছে।
কানাডার অভিবাসনবিষয়ক নিউজ পোর্টাল সিআইসি নিউজ দেশটির কানাডার ফেডারেল সরকারের এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার খবর দিয়েছে।
এতদিন কেউ কানাডায় গিয়ে স্থায়ী হওয়ার পর নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে তাদের বাবা-মা, দাদা-দাদি ও নানা-নানির জন্য স্থায়ী আবাসনের (পিআর) ব্যবস্থা করতে পারত।
কানাডার অভিবাসন, শরণার্থী ও নাগরিকত্ব বিষয়ক দপ্তর আইআরসিসি জানিয়েছে, ২০২৫ সালে ফ্যামিলি স্পন্সরশিপের নতুন কোনো আবেদন তারা নেবে না। তারা এখন শুধু ২০২৪ সালে নেওয়া আবেদনগুলো নিষ্পত্তি করবে।
আইআরসিসি ২০২৫ সালে সব মিলিয়ে ১৫ হাজার স্পন্সরশিপ আবেদন নিষ্পত্তি করবে বলে জানিয়েছে সিআইসি নিউজ।
নিউজ পোর্টালটি জানিয়েছে, কানাডার নাগরিকত্ব পাওয়া কিংবা স্থায়ী বাসিন্দার স্বীকৃতি পাওয়া ব্যক্তিদের কেউ এখন চাইলে ‘সুপার ভিসা’র আওতায় তাদের বাবা-মা, দাদা-দাদি ও নানা-নানিদের সেদেশে নিতে পারবেন। তবে এই ভিসায় এক নাগাড়ে ৫ বছরের বেশি থাকা যায় না।
আগে তারা এই নিকটাত্মীয়দের কানাডায় স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য নিয়ে যেতে পারতেন।
কানাডা ২০২৪ সালে যত অভিবাসী নিয়েছিল, ২০২৫ সালে তা ২০ শতাংশ কমাতে চায়। সেই লক্ষ্য অর্জনে কোপ পড়ল পিজিপিতে (প্যারেন্টস অ্যান্ড গ্র্যান্ড প্যারেন্টস প্রোগ্রাম)। আগের আবেদন থেকে এ বছর সাড়ে ২৪ হাজার মানুষকে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ দেবে দেশটি।
উত্তর আমেরিকার দেশ কানাডা গড়েই উঠেছে অভিবাসীদের ওপর ভর করে। ইউরোপের ব্রিটিশ ও ফরাসিরা এদেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ। পরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে মানুষ গিয়ে দেশটির স্থায়ী বাসিন্দা হয়। এর মধ্যে বিপুল সংখ্যক ভারতীয় রয়েছে, আছে বাংলাদেশিও।
দেশটির জাতীয় ডেটা সংগ্রহ সংস্থা স্ট্যাটিটিক্স কানাডার পরিসংখ্যান বলছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কানাডায় আসা অস্থায়ী বাসিন্দার সংখ্যা ব্যাপক হারে বেড়েছে। গত বছর কানাডায় অস্থায়ী বাসিন্দার সংখ্যা ছিল ২৫ লাখ। ২০২১ সালের পর এই সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ বেড়েছে।
অভিবাসী বেড়ে যাওয়ায় দেশটিতে বাড়ির দাম চড়ে গেলে কানাডিয়ানদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। তার পরিপ্রেক্ষিতে ট্রুডোর উদার সরকারও কঠোর হতে বাধ্য হচ্ছে।
গত বছরের শুরুতেই বিদেশি শিক্ষার্থী কমিয়ে আনার পদক্ষেপ নেয় কানাডা সরকার। তাতে দুই বছরের জন্য স্টুডেন্ট ভিসা দেওয়া সীমিত করা হয়। এর কয়েক মাস পর অস্থায়ী বাসিন্দা সীমিত রাখতে অভিবাসন নীতিতে কড়াকড়ির ঘোষণা আসে।
কানাডার অভিবাসনমন্ত্রী মার্ক মিলার তখন বলেছিলেন, অস্থায়ী বাসিন্দাদের সংখ্যা ছয় দশমিক দুই শতাংশ থেকে কমিয়ে পাঁচ শতাংশে নিয়ে আসতে চাইছেন তারা।
বাংলাদেশিরা বিপাকে
অটোয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের সর্বশেষ তথ্যের বরাতে বার্তা সংস্থা ইউএনবি জানিয়েছে, বর্তমানে কানাডায় ১ লাখের বেশি বাংলাদেশি স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন।
গত শতকের ৬০ এর দশক থেকে কানাডায় বাংলাদেশি অভিবাসীদের বসবাস শুরু হলেও ৮০’র দশকের শেষের দিকে সংখ্যা বাড়তে থাকে। সর্বশেষ গত দুই দশকে কানাডায় বাংলাদেশির সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এর একটি বড় অংশ পড়াশোনার জন্য গিয়ে সেখানে থেকে গেছেন।
এতদিন কানাডায় বাংলাদেশিদের কাজ পাওয়া কিংবা পিআর সুবিধার জন্য কোনো বেগ পেতে না হলেও দিন দিন পরিস্থিতি কঠিন হয়ে উঠছে। এখন পিজিপি সুবিধা বন্ধ হওয়ায় যারা পিআর পেয়েছেন, পরিবার নিয়ে তারাও পড়েছেন বিপাকে।
ঢাকার কেরানীগঞ্জের বাসিন্দা প্রসেনজিৎ দাশ জয় (৩৫) পাঁচ বছর ধরে কানাডার একটি রেস্তোরাঁয় কাজ করছেন। নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে তিনি ইউএনবিকে বলেন, “বর্তমানে কানাডায় পিআর পাওয়া রীতিমতো দুরূহ হয়ে উঠেছে। পিআর পেতে সরকার-নির্ধারিত নির্দিষ্ট পয়েন্ট অর্জন করতে হয়, যার মান বাড়ানো হয়েছে সম্প্রতি। এতে যেসব বাংলাদেশি পিআর ছাড়া কানাডায় বাস করছেন, তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।”
কানাডায় এক দশক ধরে থাকা সালাহউদ্দিন বাচ্চু (৩৭) ইউএনবিকে বলেন, তার কানাডা যাওয়ার প্রথমদিকে চাইলে নিজ খরচে স্ত্রী-সন্তান ও বাবা-মাকে নিয়ে আসা যেত। দিন দিন এই অবস্থা কঠিন হয়েছে। প্রতি বছর অসংখ্য মানুষ পিজিপির আবেদন করছেন আর সুযোগ পাচ্ছেন লটারিতে নাম ওঠা হাতেগোনা কয়েকজন।