প্রধান উপদেষ্টার অনুদান চেয়ে আবেদন ঘিরে তীব্র প্রতিক্রিয়া

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।

মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বাংলাদেশ বিমানের একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান আঘাত হেনে বিধ্বস্তের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সাহায্যে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে একটি পোস্ট এসেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে, যা নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় চলছে তীব্র সমালোচনা।

সোমবারের ওই বিয়োগত্মক ঘটনায় এরই মধ্যে ৩১ জনের নিহতের তথ্য দিয়েছে সরকার, যার সঙ্গে মিলছে না প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ।

ঘটনাস্থলে ভিড় করে আছেন অসংখ্য মানুষ, যাদের বেশিরভাগ সেখানে গিয়েছেন স্বজনের খোঁজে। হাতে থাকা মোবাইল ফোনে নিখোঁজ শিশুর ছবি।

ওই ঘটনা নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে ওঠেছে তথ্য আড়ালের অভিযোগ, সরকারের দক্ষতা ও ব্যবস্থাপনা নিয়েও প্রশ্ন ওঠেছে। অবস্থা যখন এমনই বিরূপ সেই সময়ে মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেইসবুক পেজ থেকে পোস্ট দিয়ে অনুদান চাওয়া হয়।

পোস্টে বলা হয়, মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য যারা অর্থ সাহায্য করতে চান তারা উপরোক্ত ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলের উল্লিখিত নম্বরে তা জমা দিতে পারেন।

প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলের হিসাব নম্বর ও ব্যাংকের নামও উল্লেখ করা হয় ওই পোস্টে।

পোস্টটি আসার মুহূর্তের মধ্যে হাজার হাজার মন্তব্য জমা পড়ে ‘কমেন্ট বক্সে’। কেউ কেউ স্ক্রিনশট নিয়ে তা ফেইসবুকে শেয়ার করেছেন। বেশিরভাগ মন্তব্য ছিল নেতিবাচক।

জনপ্রিয় লেখক আখতারুজ্জামান আজাদ স্ক্রিনশট শেয়ার করে মুহাম্মদ ইউনূসের সমালোচনা করে বেশ বড় একটি লেখা দিয়েছেন নিজের ওয়ালে।

তিনি লিখেছেন, “জন্মের (১৯৮৮) পর থেকে কখনও শুনিনি দেশের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে মুহাম্মদ ইউনূস কোনো ত্রাণতহবিলে চার আনা দান করেছেন। দান দূরে থাক, কোনো দুর্যোগে ইউনূসকে কখনও একটা সান্ত্বনাবাণীও উচ্চারণ করতে শুনিনি বা দেখিনি। দেশ-বিদেশে ভদ্রলোক অনেক পদক পেয়েছেন, অসংখ্য ডিগ্রি অর্জন করেছেন, ক্ষুদ্রঋণব্যবসার মাধ্যমে কয়েক হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। কিন্তু দেশের কোনো সংকটকালে তাকে কিছুই খুলতে দেখিনি— মুখও না, হাতও না, ফতুয়াও না।”

ইউনূসকে একজন ব্যবসায়ী হিসেবে অভিহিত করে এর পরই লিখেছেন, “এই আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়ের জন্য বাংলাদেশ বরাবরই ছিল ব্যবসাক্ষেত্র। ইউনূসকে তৎপর হতে দেখেছি কেবল ওয়ান-ইলেভেনের সময়ে। ক্ষমতার জন্য তখন তিনি রাজনৈতিক দল গঠন করার উদ্যোগ নিয়ে আবার পাততাড়ি গুটিয়ে চলেও গিয়েছিলেন। এগুলো সবার জানা কথা। কিন্তু জানার আরও বাকি ছিল। সোনালি ব্যাংকের একটা অ্যাকাউন্ট নাম্বার দিয়ে ফেসবুক পেজে আজ তিনি লিখেছেন— ‘মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রশিক্ষণবিমান বিধ্বস্ত হয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য যারা অর্থসাহায্য করতে চান, তারা উপরোক্ত ত্রাণ ও কল্যাণতহবিলের উল্লেখিত নম্বরে তা জমা দিতে পারেন।’

ক্ষুদ্রঋণব্যবসার মাধ্যমে কয়েক হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। কিন্তু দেশের কোনো সংকটকালে তাকে কিছুই খুলতে দেখিনি— মুখও না, হাতও না, ফতুয়াও না। — লেখক আখতারুজ্জামান আজাদ

“ঘটনার জন্য দায়ী বিমানবাহিনী, বিমানবাহিনী প্রতিরক্ষামন্ত্রণালয়ের অধীনে, প্রতিরক্ষামন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ইউনূস নিজে। ঘটনার দায়ভার প্রতিরক্ষামন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা (এবং সরকারপ্রধান) হিশেবে ইউনূসের নিজের, ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসার দায়ভার সরকারের। এমন না যে, সরকার দেউলিয়া হয়ে গেছে, সেজন্য জনগণের কাছে সাহায্য চাইতে হবে। কিন্তু তিনি করলেনটা কী? অর্থসাহায্য চেয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে দিলেন।”

মুহাম্মদ ইউনূসকে “সুযোগসন্ধানী দুর্যোগব্যবসায়ীর” সঙ্গে তুলনা করে লেখক আজাদ আরও লিখেছেন, “দেশে কোনো অঘটন দেখা দিলেই ফেসবুকের কিছু সুযোগসন্ধানী দুর্যোগব্যবসায়ী যেভাবে চাঁদা তোলা শুরু করে, ইউনূস ঠিক সেই কাজই করে বসলেন। ইউনূস প্রমাণ রাখলেন যে, তিনি এনজিওরই লোক। এনজিওর লোক না হলে একজন সরকারপ্রধানের পক্ষে কোনোভাবেই এই কাজ করা সম্ভব না। এমন ক্রান্তিকালেও ইউনূসের মাথা থেকে ব্যবসার অভিসন্ধিটা গেল না।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক সাইফুল আলম চৌধুরীও মুহাম্মদ ইউনূসের দেওয়া পোস্টের স্ক্রিনশট শেয়ার করেছেন।

নিজের ওয়ালে তিনি লিখেছেন, “পৃথিবীর সবচেয়ে বড় চাঁদাবাজ হলো এনজিওগুলো। ইউনূস প্রশাসন এটা আবারও প্রমাণ করলো। কত নিহত, কত আহত সেটার কোন হিসেব দিতে পারে না, চাঁদাবাজি শুরু করতে দেরি করলো না।”

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় চাঁদাবাজ হলো এনজিওগুলো। ইউনূস প্রশাসন এটা আবারও প্রমাণ করলো। — ঢাবি শিক্ষক সাইফুল আলম চৌধুরী

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক, যিনি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে গবেষণায় যুক্ত, নিলয় সরকার সমালোচনা করেছেন মুহাম্মদ ইউনূসের।

নিজের ওয়ালে তিনি লিখেছেন, “একটা অনিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের প্রতিটা সমাবেশের শুধু নিরাপত্তা দিতেই ব্যয় করা হচ্ছে ৮ কোটি টাকা। বাদবাকি হিসেব বাদই দিলাম! আর আমার ছোট পাখিদের জন্যে ভিক্ষার খাতা খুলেছেন রিজার্ভে স্বয়ংসম্পূর্ণ রাষ্ট্রপ্রধান।”

মুহাম্মদ ইউনূসের পোস্টটি এখন রীতিমত ভাইরাল। লেখক, সাংবাদিক, শিক্ষক, রাজনীতিক, ব্লগার ও অ্যাক্টিভিস্ট ছাড়াও সাধারণ মানুষ সমালোচনায় মুখর হয়েছেন ইউনূসের পোস্টটি ঘিরে।

সাংবাদিক প্রদীপ চৌধুরী মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারের সমালোচনা করে লিখেছেন, “মহাজন সরকার মাইলস্টোন স্কুলে বিমান দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ভিক্ষায় নেমেছে! তো রিজার্ভ নিয়ে এত বড় বড় বুলি শুনিয়ে এখন ভিক্ষায় নামতে হচ্ছে কেন? রাজকোষ কি ফাঁকা হয়ে গেল?

রিজার্ভ নিয়ে এত বড় বড় বুলি শুনিয়ে এখন ভিক্ষায় নামতে হচ্ছে কেন? — সাংবাদিক প্রদীপ চৌধুরী

“আর যে ঘটনার দায় রাষ্ট্রের কিছু দায়িত্বহীন ব্যক্তির, তাদের জন্য জনগণের কাছে হাত পাততে হবে কেন? রাষ্ট্রকেই নিহত-আহত এবং অন্যভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা দিতে হবে। কোনো এনজিওবাজি চলবে না।”

“দেশ-বিদেশে আজীবন ভিক্ষা করা লোকটা এখন রাষ্ট্র প্রধান!” ইউনূসের পোস্টের সমালোচনা করে লিখেছেন লেখক ও প্রকাশক রবিন আহসান

দেশ-বিদেশে আজীবন ভিক্ষা করা লোকটা এখন রাষ্ট্র প্রধান! — লেখক ও প্রকাশক রবিন আহসান

ঘণ্টা খানেকের মধ্যে হাজার হাজার নেতিবাচক মন্তব্যের তোপে পোস্ট সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, বা লুকিয়ে ফেলা হয়েছে।

অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী শাহ মাহবুব রাজি লিখেছেন, “কি পরিমাণ ইতর হলে এমনটা করতে পারে! তোর নিজের জানাজা, দাফন-কাফনের জন্যে ত্রাণ উঠানো শুরু কর তাড়াতাড়ি। তোর জায়গা হবে বঙ্গোপসাগরে। কতজন মারা গেছে তার এখন পর্যন্ত সুরাহা হয় নাই, তারমধ্যে দানবাক্স খুলে বসে আছে! যদিও পাবলিকের গালিগালাজের তোড়ে স্ট্যাটাস ডিলিট করছে।”

ফরিদুল ইসলাম নির্ঝর নামে একজন লিখেছেন, “এই শিক্ষার্থীদের জীবন আর রক্তের বিনিময়ে এই সরকার। বা * গুলোর ফাণ্ডে টাকা নাই, একটু সহযোগিতা আর এই বিপদে পাশে দাঁড়ানোর জন্য। নাটক কম করো।”

সাইনঠুস নামে একটি আইডি থেকে পোস্ট দেওয়া হয়, “আয়হায় খয়রাতি পোস্ট টা কই গেলো!

হতাহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকার দাবিতে বিক্ষোভের মধ্যেই দুর্ঘটনায় নিহতদের কবরস্থানের জন্য জায়গা নির্ধারণ করে দেওয়ার খবর জানিয়েও আরেকটি পোস্ট এসেছে প্রধান উপদেষ্টার ফেইসবুক পেজে, যা নিয়েও শুরু হয়েছে নতুন করে সমালোচনা।

মাইলস্টোন স্কুলের কাছে উত্তরা ১২ নম্বরের সিটি করপোরেশনের কবরস্থানে শিশুদের সমাহিত করার জন্য জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে বলে ফেইসবুকে এক পোস্টে জানানো হয়।

এ সংক্রান্ত আরও খবর:

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ads