আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিনক্ষণ জানতে আগামী ১৬ই এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করবে বিএনপি।
নির্বাচনের রোডম্যাপসহ নানা বিষয়ে আলোচনার জন্য বিএনপি পক্ষ থেকে সময় চাওয়া হলে প্রধান উপদেষ্টা আগামী ১৬ এপ্রিল তাদের সময় দিয়েছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বুধবার বিবিসি বাংলাকে এই তথ্য জানিয়েছেন।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ মুহূর্তে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর রয়েছেন। আগামী ১৬ এপ্রিল তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সরকারের প্রকৃত মনোভাব কী, তা এখনো বুঝে উঠতে পারছে না বিএনপি। যতই দিন যাচ্ছে, নির্বাচন নিয়ে অস্পষ্টতা বাড়ছে বলে মনে করছে দলটি। এ বিষয়ে পরিস্কার ঘটনা জানতে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে।
গত সোমবার বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্ষদ জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় দলের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতের সিদ্ধান্ত হয়।
ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণার বিষয়ে আলোচনার জন্য প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে বিএনপি সময় চেয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।
বুধবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, “নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট ধোঁয়াশা কাটাতে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা জরুরি। তাই বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনার জন্য প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতের সময় চেয়েছে বিএনপি।”
ড. ইউনূসের সঙ্গে আলোচনার পরই পরবর্তী দল সিদ্ধান্ত নেবে বলেও জানান তিনি।
নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে হবে বলে মনে করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
বুধবার রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে আয়োজিত বিনিয়োগ সম্মেলন থেকে বের হয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদেরকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে এবং অবশ্যই সেটা একটা নির্বাচনের মাধ্যমে, নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে অব্যাহত রাখতে হবে।”
নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণার বিষয়ে সরকারের দিক থেকে ইতিবাচক অগ্রগতি না দেখলে দলটি ‘ভোটাধিকার’ প্রশ্নে সারা দেশে কর্মসূচি শুরু করবে বিএনপি। এর সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলোকেও সক্রিয় করা হবে।
সবার মূল লক্ষ্য থাকবে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা এবং নির্বাচন আয়োজনের জন্য রূপরেখা ঘোষণা করা। দ্রুততম সময়ে নির্বাচনের রূপরেখা দেওয়া না হলে আন্দোলন তীব্র করার পরিকল্পনাও রয়েছে।
গত বছর ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই বিএনপি নির্বাচন চেয়ে আসছে। দলটি ভোটকেন্দ্রিক জরুরি সংস্কার শেষে দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের দাবি করছে।
আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলনসহ কয়েকটি দলের অবস্থানকে কিছুটা প্রতিবন্ধকতা বলে মনে করছেন বিএনপির নেতাদের অনেকে। এই দলগুলো প্রয়োজনীয় সংস্কার এবং নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করে তারপর নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলছে।
বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, “বর্তমানে অনেক রাজনৈতিক দল মনে করছে নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপিকে হারিয়ে তারা সরকার গঠন করবে। তাহলে নির্বাচনের বিরোধিতা করেন কেন? নির্বাচন দেন। আপনারা বিজয়ী হলে সরকার গঠন করবেন। আমরা সাধুবাদ জানাবো।”
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “নির্বাচন হবে। নির্বাচন ঠেকানোর মতো সাহস কারো নেই। তবে এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন হতে হবে। এটা এখন আমরা দাবি করছি। কিন্তু আমরা প্রমাণ করে ছাড়বো ডিসেম্বরেই নির্বাচন দিতে হবে।”
দুদু বলেন, “নির্বাচনের জন্য সংস্কার প্রয়োজন। সেই নির্বাচনই যদি না হয় তাহলে সংস্কার কী কাজে লাগবে। বর্তমান সরকার যদি ভুল না করে, দেশকে বিপথে চালিত না করে তাহলে আগামীর বাংলাদেশ হবে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ।”
যদিও প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছেন, এ বছরের শেষ থেকে আগামী বছরের প্রথমার্ধে ভোট নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
গত মার্চ মাসে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ঢাকা সফরে এলে প্রধান উপদেষ্টা তাঁর সরকারের বিভিন্ন রকম সংস্কারের উদ্যোগ এবং আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কথা বলেন।
তখন জাতিসংঘের মহাসচিবকে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, রাজনৈতিক দলগুলো যদি ‘সংক্ষিপ্ত সংস্কার প্যাকেজ’ নিয়ে একমত হয়, তবে নির্বাচন ডিসেম্বরেই হতে পারে। তবে তারা যদি ‘বৃহৎ সংস্কার প্যাকেজ’ গ্রহণ করে, তাহলে নির্বাচন আগামী বছরের জুনে অনুষ্ঠিত হবে।
প্রধান উপদেষ্টার এমন বক্তব্যকে অস্পষ্ট মনে করছে বিএনপি। সে কারণেই তার সঙ্গে দেখা বৈঠক করতে চান বিএনপির নেতারা।
তথ্য সূত্র: বিবিসি বাংলা, প্রথম আলো এবং দ্য সান ২৪ প্রতিনিধি।