আসামিপক্ষের আইনজীবীকে ‘শাসালেন’ চিফ প্রসিকিউটর তাজুল

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১–এ মেজর জেনারেল (বরখাস্ত) জিয়াউল আহসান-এর মামলার শুনানিতে প্রধান প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম আসামীপক্ষের আইনজীবী নাজনীন নাহারকে সতর্ক করে বলেন, “চুপ থাকুন, কথা বলবেন না। আপনিও আসামি হতে পারেন। বিভিন্ন জায়গা থেকে আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ আসছে।”
চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম ও আসামিপক্ষের আইনজীবী নাজনীন নাহার।

বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষের এক আইনজীবীকে শাসানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বরখাস্ত সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসানের মামলার শুনানিতে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম আসামির আইনজীবী নাজনীন নাহারকে উদ্দেশ করে বলতে থাকেন, “চুপ থাকুন, কথা বলবেন না। আপনিও আসামি হতে পারেন।”

বিভিন্ন জায়গা থেকে নাজনীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে বলেও সতর্ক করেন যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াত নেতাদের পক্ষে লড়া এই আইনজীবী।

রোববার (২৩ নভেম্বর) বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন দুই সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ ঘটনা ঘটে।

এরইমধ্যে গুমের অভিযোগের মামলায় ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন্স মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক জিয়াউল আহসানের জন্য বিদেশি আইনজীবী নিয়োগ চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।

মামলার শুনানিতে অংশ নিয়ে নাজনীন নাহার অভিযোগ করেন, তার ক্লায়েন্টের সেফ হাউসে জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাকে উপস্থিত থাকতে দেওয়া হয়নি, যদিও আইনে আইনজীবীর উপস্থিতির সুযোগ রয়েছে।

তিনি বলেন, “আমাকে জানানো হয়নি, আমাকে ঢুকতেও দেওয়া হয়নি।”

বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদার তখন চিফ প্রসিকিউটরকে মনে করিয়ে দেন যে নাজনীন একজন আইনজীবী হিসেবে উপস্থিত আছেন।

নাজনীন নাহার আরও অভিযোগ করেন, “জিয়াউর রহমানের জিজ্ঞাসাবাদ অবৈধভাবে ভিডিও করা হয়েছে, আমাকে (নাজনীন) কেবল দুপুরের খাবারের বিরতিতে ঢুকতে দেওয়া হয়।”

আদালতকে তিনি জানান, আইনে অনুমোদিত নন অথচ নিখোঁজ তদন্ত কমিশন (সিআইইডি)-এর সদস্য নাবিলা ইদ্রিস জিজ্ঞাসাবাদে অংশ নিয়েছিলেন।

“নাবিলা জিয়াউলকে ভয়ভীতি দেখিয়ে বলেন- জবাব না দিলে আপনার মেয়ে অনাথ হয়ে যাবে,” যোগ করেন তিনি।

অবশ্য প্রধান প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম এসব অভিযোগকে “মিথ্যা” ও “মৌলিকভাবে অগ্রহণযোগ্য” হিসেবে উল্লেখ করেন।

তিনি দাবি করেন, স্বচ্ছতার স্বার্থে ভিডিও রেকর্ডিং করা হয়েছে এবং সিআইইডি সদস্য বৈধভাবেই তদন্তে যুক্ত ছিলেন।

জিজ্ঞাসাবাদে তার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে নাজনীন ট্রাইব্যুনালে আবেদন করলে তাজুল বলেন, আবেদনটিতে সুর্নির্দিষ্ট আইনি উল্লেখ না থাকায় তা খারিজ করা উচিত।

তিনি আরও বলেন, “নাজনীন জিয়াউলের আত্মীয় এবং বিভিন্ন সমস্যা তৈরি করছেন।”

এ সময় আসামিপক্ষ আদালতকে জানায়, জেল কর্তৃপক্ষ জিয়াউলের স্বাক্ষর নিতে দিচ্ছে না, ফলে বিদেশি আইনজীবী নিয়োগের প্রক্রিয়া এগোচ্ছে না।

প্রসিকিউশন আপত্তি তুললেও ট্রাইব্যুনাল প্রয়োজনীয় আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণের শর্তে স্বাক্ষর সংগ্রহের অনুমতি দেয় এদিন।

এক পর্যায়ে দুপক্ষের মধ্যে উত্তপ্ত বাকবিনিময় হয়। তাজুল অনেকটা উচ্চস্বরে বলতে থাকেন, “আপনি সবসময় চিৎকার করেন। আপনার আচরণ আপত্তিকর।” জবাবে নাজনীন বলেন, “আপনিই আপত্তিকর কথা বলছেন।”

পরে বিচারপতির হস্তক্ষেপে উভয়পক্ষ শান্ত হয়।

এদিন আসামি পক্ষের আইনজীবী জিয়াউলের ব্যবহৃত দুটি নম্বরের কল রেকর্ড ও এসএমএস লগ চেয়ে আবেদন করলেও তাতে আপত্তি জানায় রাষ্ট্রপক্ষ।

যুক্তিতর্ক শেষে ট্রাইব্যুনাল জানিয়েছে, তদন্ত চলমান থাকায় এখন এসব তথ্য দেওয়া যাবে না; অভিযোগ গঠনের পর এ আবেদনের সুযোগ রয়েছে।

আরও পড়ুন