ভারতে ধর্ষণ চেষ্টা মামলার রায় ঘিরে কেন এত বিতর্ক?

Allahabad High Court

ভারতে এক কিশোরীকে ধর্ষণ চেষ্টা মামলার রায় ঘিরে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে নারীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। সংসদ সদস্য থেকে ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও এই রায় নিয়ে মন্তব্য করেছেন। তারা বলছেন, এই রায় ভারতের নারীদের জন্য অসম্মান। এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ হওয়া উচিত।

ভারতের এলাহাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতি রাম মনোহর নারায়ণ মিশ্রা, ধর্ষণ চেষ্টা মামলার রায়ে বলেন, “স্তনে হাত দেওয়া এবং পায়জামার দড়ি খুলে ফেলা ধর্ষণ কিংবা ধর্ষণের চেষ্টা নয়, সেটা শারীরিক নিগ্রহ। ”

সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশের কাসগঞ্জের একটি মামলার শুনানি হয় ইলাহাবাদ হাইকোর্টে। দুই যুবকের বিরুদ্ধে এক কিশোরীর স্তনে হাত দেওয়া এবং পায়জামার দড়ি খুলে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। কাসগঞ্জ আদালতের নির্দেশে দুই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে পকসো আইনে মামলা রুজু হয়। মামলাটি নিম্ন আদালত থেকে ইলাহাবাদ হাইকোর্টে পৌঁছায়। সেখানেই শুনানিতে বিচারপতি জানান, স্তনে হাত দেওয়া, পায়জামার দড়ি খুলে দেওয়া ধর্ষণ বা ধর্ষণের চেষ্টার শামিল নয়।

বিচারপতি রামমনোহর নারায়ণ মিশ্রের বেঞ্চ জানায়, দুই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে, তাতে ধর্ষণ বা ধর্ষণের চেষ্টার মামলা খাটে না। তবে এটি অবশ্যই যৌন হেনস্থার ঘটনা। ধর্ষণের চেষ্টার মামলা দায়ের করতে গেলে সরকারি আইনজীবীকে প্রমাণ দিতে হবে যে, ঘটনাটি ধর্ষণের দিকেই এগোচ্ছিল। অপরাধ ঘটানোর প্রস্তুতি এবং প্রকৃত প্রচেষ্টার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।

আদালত আরও জানায় যে, সাক্ষীরা এটাও বলেননি যে, নির্যাতিতাকে বিবস্ত্র করা হয়। অভিযুক্তেরা নির্যাতিতাকে ধর্ষণে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন, এমন কোনও ধারণা মেলেনি রেকর্ডে থাকা তথ্য থেকে।

ঘটনাটি ২০২১ সালের। কিশোরীকে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার নামে গাড়িতে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ দায়ের হয় কাসগঞ্জ থানায়। ওই কিশোরীকে একটি কালভার্টের নীচে টেনে নিয়ে যায় অভিযুক্তেরা। স্থানীয়রা সেই ঘটনা দেখে ফেলতেই কিশোরীকে ফেলে পালিয়ে যায় দুই অভিযুক্ত।

কাশগঞ্জ নিম্ন আদালতের নির্দেশে দুই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ধর্ষণ এবং পকসো ধারায় মামলা হয়েছিল। যদিও এলাহাবাদ হাইকোর্ট তা বাতিল করে।

বিচারপতি রাম মনোহর নারায়ণ মিশ্রার বেঞ্চের নির্দেশে ৩৫৪-বি ধারায় অপরাধমূলক বলপ্রয়োগ এবং ৯/১০ পকসো ধারায় শারীরিক নির্যাতনের মামলা দায়ের হয়। বিচারপতি মিশ্রার সেই সিদ্ধান্তে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। নানা মহলে বিচারপতির সমালোচনাও করা হচ্ছে।

এ বার ওই রায়কে ‘ভুল’ বলছেন ভারতের কেন্দ্রীয় নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী অন্নপূর্ণা দেবী।

শুক্রবার তিনি শুধু ওই রায়ের নিন্দাই করেননি, বিষয়টিতে নজর দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের কাছে। একই সঙ্গে মন্ত্রী বলেছেন, “এই রায়ের ফলে সমাজে ভুল বার্তা যাচ্ছে।”

এদিকে পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূলর সংসদ সদস্য জুন মালিয়া বলেছেন, “এটা গোটা দেশের নারীদের অসম্মান। এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ হওয়া উচিত।”

দিল্লির আম আদমি পার্টির সাংসদ স্বাতী মালিওয়াল বলছেন, “এটা দুর্ভাগ্যজনক। এই ধরনের মন্তব্য কোনও বিচারক করতে পারেন ভেবেই আমি স্তম্ভিত হয়ে যাচ্ছি।”

আরও পড়ুন