জাতিসংঘের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে ২০২২ সালের ঘোষণায় লিঙ্গবৈষম্যহীন একটি বিশ্ব কল্পনা করতে বলা হয়েছিল যেখানে থাকবে না কোন ধরনের পক্ষপাত, স্টেরিওটাইপ এবং বৈষম্য, বিশ্ব হবে বৈচিত্র্যময়, সমতাপূর্ণ এবং সবার সমান অন্তর্ভুক্তি যেখানে নিশ্চিত হবে, যে বিশ্বে ভিন্নতা, পার্থক্যকে মূল্যায়ন করা হবে, উদযাপন করা হবে। বলা হয়েছিল, রুখে দাও ‘পক্ষপাত’, সমতাপূর্ণ বিশ্বের এই হোক মূলমন্ত্র।
আবার ২০২৩ সালে বলা হয়েছে, জেন্ডার সমতার লক্ষ্যে উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি। সারাবিশ্বে এই খাতে নারীর অংশগ্রহণ শতকরা মাত্র ২২ ভাগ বলেই নারীকে উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় শামিল করাই ছিল এই উদ্যোগের লক্ষ্য।
ঠিক এর পরের বছরই নারীর প্রতি বিনিয়োগ বাড়ানোর কথা বলা হলো যেন উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়।
মূলত প্রতিটি ঘোষণা এবং উদ্যোগই নারীর ক্ষমতায়ণ ও অগ্রগতি সাধনের লক্ষ্যে। কোন সন্দেহ নেই এতে। একসাথে মিলে আমরাই পারি নারীর জন্য সমতাপূর্ণ এমন একটি বিশ্ব তৈরি করতে। এবং সবাই মিলেই এই পক্ষপাতদুষ্ট সিস্টেমকে বদলে দিতে।
স্বতঃস্ফূর্ত হোক অথবা অসচেতনতার কারণেই হোক, পক্ষপাত যে কাউকে, বিশেষ করে নারীর সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথটাকে কঠিন করে তোলে!
স্বতঃস্ফূর্ত হোক অথবা অসচেতনতার কারণেই হোক, পক্ষপাত যে কাউকে, বিশেষ করে নারীর সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথটাকে কঠিন করে তোলে, কখনও কখনও তা অতিক্রম করা অসম্ভব হয়ে উঠে নারীর জন্য, সেই প্রতিবন্ধকতাগুলোকে চিহ্নিত করে উপড়ে ফেলতে না পারলে আমরা মুখে যতোই নারীর অগ্রযাত্রা আর সাম্যের গান গাই না কেন, খুব বেশিদূর নারীর পক্ষে হাঁটা সম্ভব হয় না। সমাজে, রাষ্ট্রে বৈষম্য, পক্ষপাত আছে, এটা জানাও বড় কথা নয়, একটা লেভেল-প্লেয়িং ফিল্ড গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতেই হবে, এর বিকল্প নেই আর।
আমরা আমাদের কর্মক্ষেত্রগুলোতে প্রতিদিনই নানারকম পক্ষপাতের মুখোমুখি হচ্ছি, প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ছি, কখনও কখনও রুখে দাঁড়ালেও সম্মিলিত প্রয়াসের অভাবে তা মূলত কাজে আসে না, উপরন্তু চাকরিচ্যুতি থেকে শুরু করে নানারকম হয়রানির শিকার হতে হয় আমাদের। তাই সংঘবদ্ধ হওয়ার কোন বিকল্প নেই। তথ্য প্রযুক্তির এই বিকাশমান ধারায় নারীর এগিয়ে যাওয়ার বিকল্পও নেই। নারী এগিয়ে যাচ্ছেও। যদিও সেই সংখ্যাটা আনুপাতিক হারে এখনও তেমন উল্লেখযোগ্য নয়।
আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো প্রতিনিয়তই এই সংঘবদ্ধ হয়ে কাজ করাকে উৎসাহিত করে যাচ্ছে। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশে তাদের কার্যক্রম আছে। তারপরও কেন নারীদের সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ এতোটা পক্ষপাতদুষ্ট? এমনকি ছোটবেলা থেকে স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব পক্ষপাতের সম্মুখীন আমরা হই, তার প্রতিও সরব হওয়া প্রয়োজন থাকলেও কেন আমরা তা পারছি না?
পথ একটাই সামনে। নারীর অর্জনকে উদযাপন করা জানতে হবে, করতে হবে। যেকোনো ধরনের পক্ষপাত ও বৈষম্যমূলক আচরণের বিরোধিতা করতে হবে, সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। সমতাপূর্ণ বিশ্ব তৈরির লক্ষ্যে কাজ করে যেতে হবে, পদক্ষেপ নিতে হবে। এভাবেই একদিন পক্ষপাতের চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়তে বাধ্য।
সুপ্রীতি ধর, সাংবাদিক, লেখক এবং অধিকারকর্মী