ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলার প্রতিবাদে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থী, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ।
গাজায় চলমান গণহত্যা অবিলম্বে বন্ধের দাবিতে কয়েকটি জায়গায় মানববন্ধন করে এবং কোথাও কোথাও মিছিল বের করা হয়েছে।
সোমবারের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থলে ধর্মঘট এবং রাজধানীসহ অন্যান্য শহরে বিক্ষোভ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য ও অপরাজেয় বাংলার সামনে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন।
এ সময় তাঁদের হাতে ‘বয়কট ট্রাম্প, সেভ ফিলিস্তিন’, ‘বয়কট ইউএসএ’ লেখা বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।
রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ চলাকালে সরকারি বিজ্ঞান কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী রাফিউল আজম সিফাত বলেb, “গাজায় এমন নির্মম গণহত্যার দৃশ্য দেখার পর থেকে আর স্হির থাকতে পারছি না। আজকে বিশ্বব্যাপী কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে আমরা আমাদের ক্লাস বাতিল করেছি। আমরা ফিলিস্তিনি মানুষের মুক্তি চাই। স্বাধীন ফিলিস্তিন চাই।”
স্বাধীন ফিলিস্তিন ও গণহত্যা বন্ধের দাবিতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। তাঁদের হাতে ‘শো ইসরায়েল দ্য রেড কার্ড’ প্ল্যাকার্ড ছিল।
বিশ্বব্যাপী চলমান ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে নিজ ক্যাম্পাসের সামনে বিক্ষোভ করেছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। নর্থসাউথ ও ইস্ট-ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরাও নিজ নিজ ক্যাম্পাস এলাকায় বিক্ষোভ করছেন।
সায়েন্সল্যাব, বসিলা ও উত্তরাসহ রাজধানীর বিভিন্ন মোড়ে বিক্ষোভ করেছেন বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানে কর্মরতরাও।
অনেককে মিছিল নিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের দিকে যেতে দেখা গেছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ (ঢামেক) বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সেখানে বিক্ষোভ করছেন। বিভিন্ন সংগঠন আজ দিনভর সেখানে নানা কর্মসূচি পালন করবে।

শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ এমনকি শিশুরাও টিএসসির সামনে জড়ো হয়ে ফিলিস্তিনে চলমান ইসরায়েলি গণহত্যার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছেন। তারা ইসরাইলি বাহিনীর আগ্রাসনের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। অনেকের হাতে ফিলিস্তিনের পতাকা ছিল।
কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া একজন বলেন, ‘বিশ্ব নেতারা ফিলিস্তিনের জনগণকে ভুলে যাওয়ায় আমরা রাস্তায় নেমেছি। আমরা ফিলিস্তিনিদের মুক্তি চাই, যুদ্ধাপরাধের জন্য ইসরায়েলি নেতাদের বিচার চাই।’
রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল করেন বেসরকারি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি (এনএসইউ), ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ (আইইউবি), আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ (এআইইউবি) ও ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক ও কর্মকর্তারা।
বিজয় নগর এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদ। ইসরাইলি আগ্রাসনের নিন্দা, ফিলিস্তিনের নাগরিকদের উপর চালানো গণহত্যার প্রতিবাদ ও স্বাধীন ফিলিস্তিনের দাবি উঠে আসে তাদের স্লোগানে।
ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বিক্ষোভকারীদের হাতে ছিল নানা কথায় লেখা প্ল্যাকার্ড।

কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে সামনে কর্মসূচি পালন করছে ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বাড্ডায় ‘নো ওয়ার্ক নো স্কুল’ কর্মসূচি পালন করছে ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
এ সময় শিক্ষার্থীরা দ্রুত ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করার দাবি জানিয়ে স্লোগান তোলেন।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গুলশানে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস এলাকায় মিছিল বের করে একদল শিক্ষার্থী। নতুন বাজরের কাছে মার্কিন দূতাবাসের সামনে মহাসড়কে অবস্থান নেন তারা। সেখানে ঘণ্টাখানেক অবস্থানের পরে নতুন বাজারের মূল সড়কের একপাশ খুলে দেওয়া হয়।
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির আট নম্বর গেট এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিল বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা প্রদক্ষিণ করে আবারও একই জায়গায় এসে শেষ হয়। এতে কয়েক শ শিক্ষার্থী অংশ নেন। মিছিলে ‘ফ্রি ফ্রি প্যালেস্টাইন’, ‘বয়কট ইসরায়েল’, ‘ইসরায়েলের কালো হাত-ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’, ‘ইসরায়েল উইল বি সি, প্যালেস্টাইন উইল বি ফ্রি’ স্লোগান দেওয়া হয়।

ঢাকার মোহাম্মদপুরে দুপুরে গাজায় হামলার প্রতিবাদে বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিবাদ সমাবেশ ও মিছিল করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিভিন্ন পেশাজীবীদের বিক্ষোভ মিছিল বের হয়েছে। এ সময় অ্যাপ্রন পরে চিকিৎসকদের মিছিলে অংশ নিতে দেখা যায়। দেখা গেছে শিশুদেরও। ‘সেভ গাজা’, ‘স্টপ জেনোসাইড টু গাজা’ লেখা প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার নিয়ে বিক্ষোভকারীরা মিছিলে অংশ নেন।
গাজায় গণহত্যা বন্ধ না করা পর্যন্ত ‘গ্লোবাল স্ট্রাইক ফর গাজা’ নামে বিশ্বজুড়ে শিক্ষাঙ্গনে ‘ধর্মঘটের’ কর্মসূচি ফিলিস্তিনের বিভিন্ন সংগঠন ও মাঠপর্যায়ের কর্মীরা।‘নো ওয়ার্ক, নো স্কুল’ কর্মসূচির ঘোষণা আসে রোববার।