ঢাকায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে রোববার সকালে মারা গেছেন দেশের প্রথম সেনাপ্রধান ও মুক্তিযুদ্ধে তিন নম্বর সেক্টরের কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল কে এম সফিউল্লাহ।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সামি উদ দৌলা চৌধুরী জানিয়েছেন, ২ জানুয়ারি সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি তাকে ভর্তি করা হয়েছিল। সকাল পৌনে ৯টায় সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
৯০ বছর বয়সী কে এম সফিউল্লাহ ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, থাইরয়েড জটিলতা, ফ্যাটি লিভার, ডিমেনশিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত ছিলেন। দীর্ঘদিন তার চলাফেরা ছিল স্ট্রেচারে।
তার মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
১৯৯৬ সালে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে নারায়ণগঞ্জ-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সাবেক এই সেনাপ্রধান।
কে এম সফিউল্লাহর জন্ম ১৯৩৪ সালের ২ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জে। তিনি ১৯৭৫ সালের ২৪ আগস্ট পর্যন্ত সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৬ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত তিনি বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে কাজ করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে মালয়েশিয়া, কানাডা, সুইডেন আর ইংল্যান্ড।
প্রধান উপদেষ্টার শোক
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার কে এম সফিউল্লাহর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
বাসস তাদের এক খবরে জানিয়েছে, শোক বার্তায় মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে সেক্টর কমান্ডার হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন কে এম সফিউল্লাহ। তিনি ছিলেন জয়দেবপুরে দ্বিতীয় ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের দ্বিতীয় প্রধান। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় ‘এস’ ফোর্সের নেতৃত্ব দিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য ‘বীর উত্তম’ খেতাব পেয়েছেন তিনি।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন কে এম সফিউল্লাহ।
‘দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি তার অবদান আমরা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করি। বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষ তার বীরগাঁথা আজীবন চিরকৃতজ্ঞ চিত্তে স্মরণ করবে,’ বলেন প্রধান উপদেষ্টা।
প্রধান উপদেষ্টা মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার ও সাবেক সেনাপ্রধান কে এম সফিউল্লাহর আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। তিনি শোক-সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
গার্ড অব অনার পেয়েছেন?
এদিকে, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগ ঘরানার ও দলটির সঙ্গে সম্পৃক্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দেওয়ার ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের ‘অনীহার’ প্রেক্ষিতে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, কে এম সফিউল্লাহকে গার্ড অব অনার দেওয়া হবে কিনা?
লেখক ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক হাসান মোরশেদ ফেইসবুক পোস্টে লিখেছেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিয়া চৌধুরী, টাঙ্গাইলের বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান খান ফারুকের গার্ড অব অনার দেওযা হয়নি; সফিউল্লাহকে গার্ড অফ অনার দেওয়া হবে কিনা?
তিনি লিখেছেন, “বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিয়া চৌধুরী মারা যাবার পর রাষ্ট্রীয় সম্মান পাননি, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যা তাঁর আইনী অধিকার ছিল। এ নিয়ে সমালোচনার মুখে আমাদের প্রিয় প্রেস সচিব শফিকুল আলম তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে জানিয়েছিলেন- এসবে দু:খ পাওয়ার কিছু নেই। মতিয়া চৌধুরী ফ্যাসিবাদের দোসর ছিলেন, তাই সম্মান টম্মান হবে না।
“দুদিন পর মারা যান টাঙ্গাইলের বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান খান ফারুক। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্থানীয় নেতাগণ জেলা প্রশাসককে জানিয়ে দেন- এই লোকও ফ্যাসিবাদের দোসর। অতএব, তিনিও রাষ্ট্রীয় সম্মান পেলেন না।
“অবশ্য এই ফাঁকে শেষ বিদায়ে সম্মানটুকু পেলেন- স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী সুজেয় শ্যাম।
“আজ চলে গেলেন- মুক্তিযুদ্ধে ৩ নং সেক্টরের কমান্ডার, এস ফোর্সের প্রধান মেজর জেনারেল ( অব:) সফিউল্লাহ বীর উত্তম। আদি ফ্যাসিবাদী শেখ মুজিব তাঁকে স্বাধীন রাষ্ট্রের প্রথম সেনাপ্রধান বানিয়েছিলেন, পরের ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা দলীয় মনোনয়ন দিয়ে করেছিলেন সংসদ সদস্য।
“শফিক ভাই বা ছাত্রনেতারা কী বলেন? সফিউল্লাহকে গার্ড অফ অনার কি দিবেন, না দিবেন না? আপনাদের মর্জি।”