যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সোমবার বাংলাদেশ সময় রাত ১১টার দিকে ওয়াশিংটন ডিসির কংগ্রেস ভবনের ভেতরে ক্যাপিটল রোটুন্ডায় তিনি শপথ নেন।
ট্রাম্পের আগে শপথ নেন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স।
ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন উপস্থিত ছিলেন।
ট্রাম্প অনুষ্ঠানস্থলে আসার আগে সেখানে উপস্থিত হন দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, সাবেক ফার্স্ট লেডি ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন, সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ও সাবেক ফার্স্ট লেডি লরা বুশ এবং সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। উপস্থিত ছিলেন ট্রাম্পের স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্প, ছোট ছেলে ব্যারন ট্রাম্প, টিফানি ট্রাম্প, লারা ট্রাম্প, এরিক ট্রাম্প, জ্যারেড কুশনার, ইভাঙ্কা ট্রাম্প ও ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র।
বিদেশি অতিথি হিসেবে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের মিলেইসহ অনেকে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
প্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তাদের মধ্যে স্পেসএক্স ও টেসলার সিইও ইলন মাস্ক, গুগলের সিইও সুন্দর পিচাই, মেটার সিইও মার্ক জাকারবার্গ, অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
দ্বিতীয় মেয়াদে অভিষেকের দিনেই প্রায় ১০০টি নির্বাহী আদেশ দিতে চান ডনাল্ড ট্রাম্প, যেমনটি তিনি রোববারও বলেছেন।
ওয়াশিংটর ডিসিতে ওই বিজয় শোভাযাত্রায় অভিষেকের প্রস্তুতি নেন ট্রাম্প। শোভাযাত্রা শেষ হয় চমৎকার এক প্রদর্শনীর মাধ্যমে, যেখানে তিনি তাদের রাজনৈতিক সংগীত গত শতকের ৭০ দশকের জনপ্রিয় গান ওয়াইএমসিএর সঙ্গে গ্রামের লোকদের নিয়ে ‘ড্যাড ড্যান্স’ করেন।
এই আড়ম্বরহীনতার মধ্য দিয়েই সাবেক রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী, ট্যাবলয়েড খলনায়ক এবং রিয়ালিটি শো ‘তারকা’ লক্ষ লক্ষ ভক্তের মধ্যে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বেও যেন পরিণত হয়েছেন।
দুইবার হত্যার প্রচেষ্টা থেকে বেঁচে যাওয়া, দুটি অভিশংসন, চারটি ফৌজদারি অভিযোগ এবং একটি দণ্ডের পরেও তার মধ্যে ‘মেইক আমেরিকা গ্রেইট এগেইন (এমএজিএ) দৃঢ়তা অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে ট্রাম্পকে।
তার এই প্রত্যাবর্তন মার্কিন ইতিহাসের অন্যতম চমকপ্রদ দ্বিতীয় অধ্যায়ের একটি।
ট্রাম্প জনবাদী বা জাতীয়তাবাদী নেতা নন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী তার পূর্বসূরীরা বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে যে ধারণায় পরিচালিত ছিলেন তাদের থেকেও ব্যতিক্রম তিনি। নভেম্বরের নির্বাচনে তার বিজয়ে তিনি দ্বিতীয় কোনো প্রেসিডেন্ট যিনি ধারাবাহিক মেয়াদে জয়ী হননি। এরকম অনেক কিছুই তাকে ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে।
দায়িত্ব নেয়ার আগেই তার মুকুটে সাফল্যের দুটি পালক যোগ হয়ে গেছে। প্রথমটি রোববারের গাজার যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় তিন জিম্মির মুক্তি, যা ট্রাম্পের দায়িত্ব নেয়ার আগ মুহূর্তের কৃতিত্ব হিসেবে ধরা হচ্ছে। এরপর ফেডারেল নিষেধাজ্ঞা মেনে বন্ধ করে দেয়া টিকটককে আপাতত রক্ষা করা।
প্রতিটি অর্জন ট্রাম্পের কূটনৈতিক দক্ষতা এবং প্রেসিডেন্ট হিসেবে ব্যক্তিগত ও তাৎক্ষণিক ক্ষমতা ব্যবহারে তার মুনশিয়ানাকে প্রকাশ করে।
এছাড়া নভেম্বরের নির্বাচনে জয়ের পর থেকে অভ্যন্তরীণ এবং বৈশ্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি পরিবর্তন করেছেন তিনি; যেখানে ধীরে ধীরে দৃশ্যপট থেকে ম্লান হয়ে যাচ্ছিলেন প্রবীণ প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
তবে টিকটক ও মধ্যপ্রাচ্যের এই জয়ের কারণে তার দূরদৃষ্টি ও কৌশলী প্রজ্ঞার গভীরতা প্রমাণ করে, যা তার প্রথম মেয়াদে দেখা যায়নি।
দায়িত্বের চেয়েও এগিয়ে
মহামারিতে বিধ্বস্ত এবং একটি অসন্তুষ্ট জাতিকে পুনরুদ্ধারে ব্যর্থ হওয়ায় তাকে দপ্তর থেকে সরানো হয়েছিল। এর চার বছর পর তিনি আবার যখন জয়ী হলেন তখন ভোটারদের একটি অংশ মূল্যস্ফীতি এবং সীমান্ত সংকটে প্রচণ্ড বিরক্ত, যেসব এড়িয়ে যাওয়ায় আস্থা হারিয়েছিলেন বাইডেন।
এই অস্থির জনগোষ্ঠী হয়তো ট্রাম্পকে বেশি সময় দেবে না। তার দ্বিতীয় মেয়াদের সাফল্য বা ব্যর্থতা মৌলিক সামগ্রীর দাম কমানোর মতো প্রথমিক বিষয়গুলোর ওপর নির্ভর করতে পারে। যা কঠিন হতে পারে বলে তিনি ইতোমধ্যে স্বীকারও করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে সংবিধানে নিষেধাজ্ঞা থাকায় আর কখনও প্রেসিডেন্ট হতে না পারলেও এই মেয়াদে ডনাল্ড ট্রাম্প রকেটের গতিতে ছুটবেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
ওয়াশিংটনের ক্যাপিটাল ওয়ান অ্যারেনায় বিজয় উদযাপন পার্টিতে তিনি বলেন,“কাল থেকে, আমি ঐতিহাসিক গতি এবং শক্তির সাথে কাজ করব এবং আমাদের দেশের প্রতিটি সঙ্কট সমাধান করব।”
এ সম্পর্কিত সংবাদ:
মার্কিন প্রেসিডেন্টের শপথ অনুষ্ঠানের খুঁটিনাটি
ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রভাব যেসব কারণে ‘গভীর’ হতে পারে