গ্রেপ্তারের ভয়ে সুনশান নীরবতা শিকাগোর রাস্তায়

গ্রেপ্তারের শঙ্কায় সুনশান নীরবতা শিকাগোর রাস্তায়। ছবি: স্কাই নিউজ।
গ্রেপ্তারের শঙ্কায় সুনশান নীরবতা শিকাগোর রাস্তায়। ছবি: স্কাই নিউজ।

শিকাগোতে এমন অনেক এলাকা আছে যেসব অঞ্চলের স্বাভাবিক চালচিত্র বদলে গেছে গত কয়েকদিনে। বিশেষ করে হোয়াইট হাউজের মসনদে ট্রাম্পের অভিষিক্ত হওয়ার পর থেকে।

স্কাই নিউজের সরেজমিন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে সেই চিত্র।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, আজকাল তেমন একটা বের হতে সাচ্ছন্দ বোধ করছেন না তারা। ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট বা আইসিই’র অভিযানে রীতিমত আতঙ্কগ্রস্ত স্থানীয় অভিবাসীরা।

প্রাথমিকভাবে নানা ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ডে যুক্ত অভিবাসীদের গ্রেপ্তারে এ অভিযান চললেও তাতে আস্থা রাখতে পারছেন অন্যরাও। বৈধ কাগজপত্র রয়েছে এমন লোকজনও গ্রেপ্তারের আশঙ্কাকে উড়িয়ে দিতে পারছেন না। তাই ঘরেই কাটছে তাদের ‘বন্দি’ জীবন।

স্টিভ নামে একজন অধিবাসী তার মায়ের উদ্বেগের কথা তুলে ধরেন স্কাই নিউজের এই প্রতিবেদকের কাছে।

তিনি জানান, বহু বছর আগে তিনি যখন ছোট সেইসময় তার মা মেক্সিকো থেকে পাড়ি দিয়েছিলেন শিকাগোতে। সেসময় তার কাছে উপযুক্ত কাগজপত্র ছিল না।

স্টিভের ভাষায়: “আমাদের জন্মের পর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে, আরো ভালো জীবনযাপন, উপযুক্ত শিক্ষা নিশ্চিতে আমার মা সীমান্ত পেরিয়ে এখানে এসেছিলেন। আজকাল তিনি বাইরে যেতে ভয় পান; তিনি শঙ্কিত, হয়তো তাকেই তুলে নেওয়া হবে।”

অভিবাসীদের সহায়তা দেওয়া হয় এমন একটি ‘কমিউনিটি সেন্টারে’ গিয়ে দেখা যায় সদর দরজায় ঝুলছে নোটিস, যাতে লেখা রয়েছে আইসিই যদি জেরা করে সেক্ষেত্রে কী করণীয় সেই নির্দেশনা।

প্রবেশপথের যে ফটকটি দিনরাত খোলা থাকতো কিছুদিন আগেও, সেটি ইদানিং বন্ধ রাখা হচ্ছে। ওই এলাকায় অভিযানের পর কর্মীরা বদলে ফেলেছেন তাদের দৈনন্দিন রুটিন, কাজের সময়ও।

তাদের সকাল শুরু হয় ভবনের চারপাশের রাস্তা ঘুরে দেখার মাধ্যমে, যাতে তারা ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের নজরে রাখতে পারেন।

ভেতরে অলিভার নামে একজন ভেনেজুয়েলার নাগরিকের সঙ্গে কথা হলো, যিনি বৈধভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকছেন, কাজের অনুমোদন রয়েছে এবং তিনি নির্মাণ কাজে যুক্ত।

বর্তমান পরিস্থিতিতে গ্রেপ্তারের ভয়ে তিনি তার কর্মস্থলে যেতে চাচ্ছেন না, যদিও তার সব ধরনের কাগজপত্রই রয়েছে।

অলিভার বলছিলেন, “আমি ভয়ে কুঁকড়ে থাকি। এখন আর আগের মতো বাইরে বের হই না তেমন। অথচ ক’দিন আগেও প্রতিদিন রাত পর্যন্ত বাইরে থাকতাম, যেকোনো সময় কাজে যেতাম, কিন্তু এখন আমি কোথাও যেতে পারছি না।”

“অভিবাসীদের সম্পর্কে গুজব রয়েছে। আমার ভয় ওরা যদি আমাকে ধরে দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেয় তাহলে কী হবে! আমার পরিবার আমার উপরই নির্ভরশীল,” যোগ করেন তিনি।

ইমিগ্রেশন এনফোর্সমেন্ট অফিসাররা দৈনিক গ্রেপ্তারের যে টালি প্রকাশ প্রকাশ করেছে তা জো বাইডেনের শেষ বছরে নির্বাসনের দৈনিক গড়ের চেয়ে অনেক বেশি।

হয়তো এই কঠোরতায় আমেরিকার বেশিরভাগ নাগরিকের প্রশংসা পাবে, শুধু এই অভিবাসীরাই থাকবে সেই প্রশংসা থেকে বহু দূরে, আতঙ্কে।

আরও পড়ুন