নিউ ইয়র্কে ডিম কাণ্ডে ঢাকায় ধরপাকড়, চাঙ্গা আওয়ামী লীগ

গত কয়েকদিন নিয়মিতই দেখা মিলছে আওয়ামী লীগের এরকম মিছিল। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া।
গত কয়েকদিন নিয়মিতই দেখা মিলছে আওয়ামী লীগের এরকম মিছিল। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া।

নিউ ইয়র্কে এনসিপি নেতা আখতার হোসেনের ওপর নিক্ষেপ করা ডিম কিনতে অর্থায়ন হয়েছে বাংলাদেশ থেকে। আর সে অভিযোগে একজনকে গ্রেপ্তার করে ছয় দিনের রিমান্ডেও পাঠানো হয়েছে।

হ্যাঁ, এমন নজিরবিহীন অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের সভাপতি সত্তরোর্ধ্ব মোজাম্মেল হককে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুস সালাম রিমান্ড আবেদনের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন, “জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতারের ওপর নিউ ইয়র্কে ডিম নিক্ষেপে মোজাম্মেল হক বিকাশে টাকা দিয়েছেন। দেশকে অস্থিতিশীল, আইনশৃঙ্খলা বিঘ্ন ঘটাতে, দেশকে অস্থির করতে তারা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।”

ডিম কাণ্ডে ঢাকায় গ্রেপ্তার হওয়া বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের সভাপতি মোজাম্মেল হক।

এমন অভিযোগে গ্রেপ্তার এবং রিমান্ড মঞ্জুর করায় সোশাল মিডিয়া ব্যঙ্গাত্মক পোস্টে সয়লাব।

অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট আরিফ জেবতিক লিখেছেন, “বাংলাদেশে বসে ডিম ছুড়েছে, নিউইয়র্কে গিয়ে পিঠে লেগেছে! এরকম প্রতিভাবান লোককে জাতীয় দলের বোলিংয়ে না লাগিয়ে জেলে পুরে ফেলছে। দেশের ক্রিকেটের উন্নতি হবে কীভাবে!

“খবর পড়ে দেখি ডিম মারেনি, ডিম কেনার টাকা দিয়েছে। আমেরিকার লীগের লোকেরা নিজের পয়সায় এক হালি ডিমও কিনতে পারে না, হায় গরীবী, ইয়া হাবিবি!!”

এদিকে, দিন তিনেক আগে নিউ ইয়র্কের বিক্ষোভের ঘটনা গোটা বিশ্বে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে তুমুল উৎসাহ তৈরি হয়েছে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মিছিল করেছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। গ্রেপ্তারও হয়েছেন অনেকে।

কেউ কেউ এরইমধ্যে বলতে শুরু করেছেন লন্ডনে উপদেষ্টা মাহফুজ ও তার সঙ্গীদের ধাওয়া দেওয়ার ঘটনার পর নিউ ইয়র্কে আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ কর্মীদের মধ্যে চাঙ্গাভাব ফিরিয়ে এনেছে।

অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট অমি রহমান পিয়াল লিখেছেন, “৫০০ মানুষ গ্রেপ্তার মানে ৫০০০ মানুষকে রাস্তায় নামানো। এদের সরাসরি পরিবার এই মানুষগুলো। এভাবেই মিছিলের সারি বড় হয়!”

“নিউইয়র্কে দেখলাম বাদাম (উত্তম-মধ্যম) শুরু হইয়া গ্যাছে। একজন ইতোমধ্যেই কট। ইনুচের লোক পাইলেই বাদাম- এটাই হোক প্রতিরোধের ১ম ধাপ,” লিখেছেন সুশান্ত দাস গুপ্ত।

একইরকম অসংখ্য পোস্ট করেছেন আওয়ামী লীগের অনুসারী ও সমর্থকরা।

নিউ ইয়র্কে নামার পর এভাবে ডিম হামলার শিকার হন আখতার হোসেন।

আওয়ামী লীগের নির্ভরযোগ্য কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, নিউ ইয়র্কে বিক্ষোভ কর্মসূচি সমন্বয়ে পেছন থেকে কাজ করেছেন শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। তিনিই যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লিগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে বিক্ষোভের ছক তৈরি করে দিয়েছিলেন।

আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, গত বছর ৫ অগস্ট তার মায়ের সরকারের পতনের পর থেকেই দলের জন্য বাড়তি সময় দিচ্ছেন জয়। যদিও খাতায়কলমে তিনি আওয়ামী লীগের কোনও সাংগঠনিক পদে নেই।

নিউ ইয়র্কে বিক্ষোভের পর বিএনপিও আক্রমণ শানিয়েছে হাসিনা পুত্রকে।

দলটির নেতা মনিরুল ইসলাম অভিযোগ করেছেন, মুহাম্মদ ইউনূস ও তার সফরসঙ্গীদের বিরুদ্ধে তাণ্ডবের মূল হোতা সজীব ওয়াজেদ জয়। তিনি টাকা পয়সাও ঢেলেছেন।

ওই বিএনপি নেতার দাবি, জয় বাংলাদেশের কেউ নন। তিনি এখন মার্কিন নাগরিক। এমন ব্যক্তি কী করে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার বিরুদ্ধে বিক্ষোভের কলকাঠি নাড়ছে। বাংলাদেশ সরকারের উচিত পলাতক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মার্কিন প্রশাসনের উপর চাপ তৈরি করা।

বাংলাদেশ পুলিশের অনুসন্ধানে অবশ্য ডিম কেনার অর্থ জোগানদাতা মোজাম্মেল হক, যাকে গ্রেপ্তার করে এরই মধ্যে ছয়দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।

এনসিপি নেতা আখতারকে উদ্দেশ্য করে ডিম নিক্ষেপ করা হলেও বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছিলেন অক্ষত।

নিউইয়র্কের ঘটনা নিয়ে এক বিবৃতিতে নিউ ইয়র্কে বিক্ষোভ ও ডিম নিক্ষেপের ঘটনায় বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেলসহ সম্পূর্ণ ফরেন সার্ভিস টিমকে চাকরিচ্যুত করার দাবি জানিয়েছে এনসিপি ডায়াস্পোরা অ্যালায়েন্স।

সংগঠনটি বলছে, বিদেশের মাটিতে আওয়ামী লীগের এ ধরনের সন্ত্রাসী হামলা শুধু প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিরাপত্তার জন্য নয়, বরং বাংলাদেশের মর্যাদা ও গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের জন্যও হুমকিস্বরূপ। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই এবং অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ দাবি করছি।

এদিকে, নেতা ও কর্মীদের উপর অমানবিক নির্যাতন, মব সন্ত্রাস এবং গণগ্রেপ্তারের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে যুবলীগ।

সংগঠনের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ এবং সাধারণ সম্পাদক মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, “ফ্যাসিস্ট ইউনূস বাহিনী পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের নেতা ও কর্মীদের উপর অমানবিক নির্যাতন, মব সন্ত্রাস ও গণগ্রেফতারের মাধ্যমে দেশব্যাপী এক ভয়াবহ ও আতঙ্কজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড গণতন্ত্র, আইন এবং মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।”

অবিলম্বে গ্রেপ্তার করা সকল নেতাকর্মীর মুক্তি এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস বন্ধের জোর দাবি জানানো হয় ওই বিবৃতিতে।

আরও পড়ুন