তবে কি আওয়ামী লীগকে নিয়েই নির্বাচনের পরিকল্পনা?

অভ্যুত্থানের পর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।
অভ্যুত্থানের পর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।

ক্ষমতা থেকে উৎখাত হওয়া আওয়ামী লীগকে নির্বাচনের বাইরে রাখতে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে আসছে অভ্যুত্থানকারীরা। কিন্তু সেনাপ্রধানের পর এবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কণ্ঠেও শোনা গেল ভিন্ন সুর।

সেনাপ্রধান জেনারে ওয়াকার-উজ জামান সবাইকে নিয়ে নির্বাচনের কথা বলার পর বিবিসি বাংলাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মুহাম্মদ ইউনূসের কথায়ও পাওয়া গেল একই ইঙ্গিত।

সোমবার এই সাক্ষাৎকার প্রকাশের পর এই কথাই উঠছে যে তবে কি আওয়ামী লীগকে রেখে নির্বাচনের দিকে এগোতে চাইছে অন্তর্বর্তী সরকার।

আওয়ামী লীগ রাজনীতি ও নির্বাচনে অংশ নেবে কি, না কি নিষিদ্ধ করা হবে- এই প্রশ্ন করা হয়েছিল ইউনূসকে।

জবাবে তিনি বলেন, “আমি অত ডিটেইলসে যাচ্ছি না। আমার বরাবরই পজিশন হলো যে আমরা সবাই এই দেশের নাগরিক। আমাদের এই দেশের ওপরে সমান অধিকার। আমরা সব ভাই ভাই। আমাদেরকে এই দেশেই বাঁচতে হবে। এ দেশকেই বড় করতে হবে।

“কাজেই যে মত-দল করবে, তার মতো করে, সবকিছু করবে। এই দেশ থেকে কারও অধিকার কেড়ে নেওয়ার কোনো উপায় নাই। কিন্তু যে অন্যায় করেছে, যার বিচার হওয়া উচিৎ, তার বিচার হতে হবে। এটুকুই শুধু।”

যার অর্থ দাঁড়ায়, জুলাই অভ্যুত্থানে হতাহতের ঘটনায় বিচার হলেও দল হিসাবে আওয়াসী লীগকে নিষিদ্ধ করতে চায় না অন্তর্বর্তী সরকার। 

তাহলে নিষিদ্ধের দাবির বিষয়ে কী হবে- সেই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “ওই যে ঐকমত্য। আমরা বরাবরই ফিরে যাচ্ছি ঐকমত্যে। সবাই মিলে যা ঠিক করবে, আমরা তাই করব।”

অর্থাৎ এখানে এককভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না সরকার। আর আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার প্রশ্নে এখনও রাজনৈতিক মতৈক্য হয়নি।

এর আগে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার গত ২৫ ফেব্রুয়ারি এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন ইনক্লুসিভ বা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা।

সেদিন তার বক্তব্য ছিল, “আমি যতবারই ড. ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেছি, তিনি সর্ম্পূণভাবে আমার সঙ্গে একমত হয়েছেন। দেয়ার শুড বি ফ্রি ফেয়ার অ্যান্ড ইনক্লুসিভ ইলেকশন।”

ওই ভাষণে সেনাপ্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে সতর্ক করার পাশাপাশি চলতি বছরের ডিসেম্বরে নির্বাচনের কথাও বলেছিলেন। তার সেদিনের কথা ছিল যেমন সোজাসাপ্টা, শরীরী ভাষাও ছিল বেশ কঠোর।

তারপর প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসও ডিসেম্বরে সংসদ নির্বাচন আয়োজনের কথা বলেছিলেন। অথচ তার আগে তিনি বলে আসছিলেন, নির্বাচন ডিসেম্বরে হতে পারে, আবার আগামী বছরের জুনের মধ্যেও হতে পারে।

সেনাপ্রধানের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, জেনারেল ওয়াকারের বক্তব্য নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির কিছু নেই। এই বক্তব্য তার ভালোই লেগেছে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের দাবি তুলেছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

সেই চাপে ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ করলেও আওয়ামী লীগ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি অন্তর্বর্তী সরকার। কারণ বিএনপিসহ অপরাপর রাজনৈতিক দলগুলো তার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল।

সর্বশেষ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভায়ও অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণরা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি তোলে। কিন্তু তাতেও অন্য সব দলগুলোর সমর্থন পায়নি।

মুহাম্মদ ইউনূস বিবিসি বাংলাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এবিষয়ে মতৈক্য হলে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলেছেন। কিন্তু বড় দল বিএনপি যে এবিষয়ে একমত নয়, তা বরাবরই দেখা যাচ্ছে।

বিএনপি নেতারা বারবারই বলে আসছেন, কোনো দল নিষিদ্ধের পক্ষে নন তারা। নির্বাচনের মাধ্যমে জনরায়ই বলে দেবে, জনগণ কাকে চায়, আর কাকে চায় না।

ক্ষমতা হারিয়ে আওয়ামী লীগ এখন তাদের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিপর্যয়ের মুখোমুখি। দলের সভাপতি শেখ হাসিনা আশ্রয় নিয়ে আছেন ভারতে। শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা যারা দেশে ছিলেন, তারা গ্রেপ্তার হয়ে রয়েছেন কারাগারে। অন্যরা বিদেশে পালিয়ে আছেন।

এর মধ্যে আওয়ামী লীগ দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানিয়ে এলেও দেশে কীভাবে দল পরিচালিত হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ads