প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে ফেডারেল সরকারের নীতি নির্ধারণে শীর্ষে থাকলেও ইলন মাস্ক আসলে কোন পদে আছেন সে বিষয়টি অজানাই মার্কিনিদের কাছে।
মাস্কের বিষয়ে তারা যা জানেন তা হলো মাস্ক বিশ্বের সেরা ধনী এবং ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারে অন্যতম বড় অর্থদাতা।
এছাড়া ইলন মাস্ক এমন একজন যার কোম্পানিগুলো সরকারি চুক্তি থেকে বিপুল পরিমাণ আয় করে আসছে বছরের পর বছর ধরে। আর তাই সরকারের কাজের ওপর তার আর্থিক স্বার্থ অন্য সাধারণ অভিবাসীর চেয়ে অনেক বেশি বলা যায়।
মাস্ক তার মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক্সে এক পোস্টে লিখেন, “এটা জনগণের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ!”
সেইসঙ্গে মানুষকে সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় এমন এনজিও ও অলাভজনক সংস্থায় ব্যয়ের বিরোধিতায় সোচ্চার হওয়ারও আহ্বান জানান তিনি।
ক্যাথলিক রিলিফ সার্ভিসেস, দ্য ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম এবং সেভ দ্য চিলড্রেনের মতো সংস্থাগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়ন করা উচিত কী অনুচিত তা নিয়ে বিতর্ক হতে পারেই। তবে মার্কিনিরা এও জানে তাদের সরকার স্বচ্ছতার সাথে এই সংস্থাগুলোতে অর্থায়ন করে আসছে। অবশ্য ইলন মাস্কের প্রশাসনিক কাজ দখলের পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে।
মাস্কের সহযোগীরা কারা কোথায়?
এ সপ্তাহে নিউ ইয়র্ক টাইমসসহ বেশ কয়েকটি সংবাদ মাধ্যম প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যে, মাস্কের তিনজন প্রাক্তন কর্মী ফেডারেল সরকারের অফিস অফ পারসোনেল ম্যানেজমেন্টের শীর্ষ পদে যোগ দিয়েছেন। যা ফেডারেল সরকারের যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল তা থেকে ভিন্ন, বলা যায় অপ্রকাশিত এইচআর বিভাগ।
এই ওপিএম প্রথমেই একটি ইমেইল সিস্টেম তৈরি করে, যা দিয়ে লাখ লাখ ফেডারেল কর্মচারীর কাছে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বেতনসহ পদত্যাগের প্রস্তাব পাঠানো হয়। ফেডারেল কর্মচারীদের অবাক করে দেওয়া এই প্রস্তাবকে অবৈধ আখ্যা দেয় ইউনিয়ন ও সরকারি পর্যবেক্ষকরা।
ওপিএমের চিফ অফ স্টাফ আমান্ডা স্কেলস ইলন মাস্কের এআই কোম্পানি এক্সএআইতে কাজ করতের বলে সিএনএন নিশ্চিত হয়েছে। এছাড়া সিনিয়র ডিরেক্টর ব্রায়ান জেলডের লিঙ্কডইন প্রোফাইলে এখনও তাকে স্পেসএক্সের কর্মী হিসেবে দেখাচ্ছে।
আরেক সিনিয়র ডিরেক্টর অ্যান্থনি আর্মস্ট্রং একজন ব্যাংকার, যিনি টুইটার কেনার সময় মাস্কের সঙ্গে কাজ করেছিলেন।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী মাস্কের সহযোগীরা ফেডারেল রিয়েল এস্টেট পর্যবেক্ষণকারী জেনারেল সার্ভিসেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনসহ অন্যান্য সংস্থায়ও রয়েছেন, যেখানে ফেডারেল কর্মীদের ফিরে আসতে উৎসাহিত করার পরও মাস্ক সরকারি রিয়েল এস্টেট বা লিজ বাদ দেওয়া এবং বাকি কর্মীদের দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়াকে ‘খরচ কমানোর’ কৌশল হিসেবে দেখছেন।
ফেডারেল কর্মীরা ৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে অফিসে না ফিরলে তাদের চাকরি থেকে বাদ দেওয়া হবে বলে এর আগেও দুইবার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ট্রাম্প। এ সপ্তাহে হোয়াইট হাউজে ভাষণেও একই কথা বলেন তিনি।
মাস্কের আসল ভূমিকা অস্পষ্ট
সংবাদ মাধ্যম ‘ওয়্যার্ড’ এক প্রতিবেদনে বলেছেন, মাস্ক তার বন্ধুদের জানিয়েছেন যে তিনি হোয়াইট হাউসের আইসেনহাওয়ার এক্সিকিউটিভ অফিস বিল্ডিংয়ে ঘুমাচ্ছেন। তবে সিএনএন এ তথ্যটির নিশ্চিত হতে না পারলেও বিষয়টি টুইটার বা টেসলার প্রাথমিক দিনগুলোর গল্পের সঙ্গে মিলে যায়। যখন তিনি কর্মীদের কাজের প্রতি তার একাগ্রতা দেখাতে অফিসে বা ফ্যাক্টরির মেঝেতে ঘুমাতেন। এটা হয় ঘরে বসে কাজ করার একাগ্রতা অথবা কাজের প্রতি একাগ্রতা।
এখন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে- তিনি কি শপথ নিয়েছেন যে, যেসব ফেডারেল কর্মী সংবিধান সমুন্নত রাখার শপথ নিয়েছিলেন তাদের তিনি বরখাস্ত করতে চান?
গভর্নমেন্ট এথিকস অফিসের সাবেক পরিচালক ওয়াল্টার শাউব যিনি ট্রাম্প সম্পর্কে সতর্কতা এবং ডেমোক্র্যাটদের সমালোচনা করেছিলেন, সেই ওয়াল্টার শাউবকে ইলন মাস্কের ভূমিকার অস্বচ্ছতা এবং বিষয়টি নিয়ে আমেরিকানদের কেন উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত সে প্রশ্ন রেখেছিল সিএনএন।
জবাবে এক ইমেইলে তিনি বলেন, “স্বার্থের দ্বন্দ্ব কীভাবে পরিচালনা করবে ট্রাম্প প্রশাসনকে জনগণের কাছে সেই ব্যাখা দিতে হবে। সেইসঙ্গে মাস্কসহ অন্যরা ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্নমেন্ট ইফিসিয়েন্সিতে (ডিওজিই) স্বেচ্ছাসেবক, সাধারণ কর্মচারী বা বিশেষ কর্মচারী, কোন পর্যায়ে থেকে কাজ করছেন সেই ব্যাখ্যাও দিতে হবে।”
কারা আছেন সরকারে?
আর এসব কারণেই ট্রাম্প মনোনীত ব্যক্তিদের এজেন্সিগুলোর নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য ক্যাপিটল হিলে মনোনয়ন শুনানির মধ্য দিয়ে যেতে হবে। সেইসঙ্গে এসব শীর্ষ কর্মকর্তাদের তাদের আর্থিক স্বার্থ প্রকাশ করে অফিস অফ গভর্নমেন্ট এথিক্সে কাগজপত্র জমা দিয়ে নৈতিকভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।
জনগণের জানা উচিত তাদের সরকার কীভাবে অর্থ ব্যয় করছে এবং কার মাধ্যমে ব্যয় করছে। গণপদত্যাগের যে প্রস্তাব সবাইকে বিস্মিত করে তা ওপিএম পরিচালকের ক্ষমতার আওতায় করা হয়েছিল। যদিও এ কাজ পরিচালনার জন্য ট্রাম্পের মনোনীত স্কট কুপর এখনও অনুমোদন পায়নি।তাই সংস্থাটি এখনও একজন ভারপ্রাপ্ত পরিচালক দিয়ে চলছে।
এরপর কী?
ডিওজিইর সাবেক কর্মী ভিভেক রামাস্বামীর সঙ্গে কাজ করার সময় গত নভেম্বরে মাস্ক ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে কিছু ধারণা তুলে ধরেন। যে ধারণাগুলোর মধ্যে ‘ফেডারেল কর্মীদের পদত্যাগে উৎসাহিত করার’ প্রচেষ্টার আভাস দেওয়া হয়।
সেখানে বলা হয় পরবর্তী ধাপে ‘একটি সংস্থায় সংবিধানসিদ্ধ এবং আইনিভাবে নির্ধারিত কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় সর্বনিম্ন সংখ্যক কর্মী চিহ্নিত করা হবে’, আর এর পর ট্রাম্প কর্মী সুরক্ষা স্থগিত করে ‘ফেডারেল আমলাতন্ত্র থেকে কর্মীসংখ্যা কমাতে’ পারেন। এখন ভাবতে পারেন তাহলে এয়ার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের জন্য সেই সর্বনিম্ন সংখ্যাটি কত?
তারা সুপ্রিমকোর্টের সহায়তা নিয়ে ‘ইমপাউন্ডমেন্টে’ পাওয়ার আশা করছে যাতে করে কংগ্রেসকে উপেক্ষা এবং অর্থ ব্যয় না করার এ সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তারা সরকারি সম্প্রচার ও বিদেশি সাহায্য খাতগুলো থেকে ৫শ’ বিলিয়ন খরচ কমাতে চাইছে। তাদের এই পরিকল্পনার প্রমাণ ট্রাম্পের ফেডারেল অনুদান বন্ধের আদেশের মাধ্যমে ইতোমধ্যে পাওয়া গেছে।
ওই জার্নালে মেডিকেয়ারে ব্যয়ের ওপর কঠোর নজরের কথা লেখা থাকলেও যা লেখা হয়নি তা হলো সরকারি পরিকল্পনা বা সরকারের মধ্যে মাস্কের লোকদের তালিকা। আর এটা এমন একটা বিষয় যা আমেরিকানদের জানা উচিত।
সিএনএন অবলম্বনে