আইসিসির পরোয়ানায় ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট দুতার্তে গ্রেপ্তার

ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তে। ছবি: এপি
ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তে। ছবি: এপি

ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মাদকবিরোধী অভিযান চালাতে গিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) জারি করা পরোয়ানার আওতায় মঙ্গলবার ফিলিপাইনের ম্যানিলা বিমানবন্দর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আইসিসির অভিযোগের বরাত দিয়ে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৭৯ বছর বয়সী দুতার্তে মাদকবিরোধী অভিযানের নামে হাজার হাজার মানুষকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন। ২০১৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার নেতৃত্বে এই অভিযানে প্রায় ৬ হাজার মানুষ নিহত হয়। তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়েও অনেক বেশি।

ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, ইন্টারপোল ম্যানিলা আইসিসির গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পেয়ে দুতার্তেকে আটক করেছে। প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সাবেক প্রেসিডেন্টের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল এবং সরকারি চিকিৎসকরা তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছেন।

দুতার্তে মাদকসংক্রান্ত অপরাধের সঙ্গে জড়িত এমন প্রমাণ ছাড়াই হাজার হাজার দরিদ্র মানুষকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। আইসিসির মতে, ফিলিপাইন আইসিসি থেকে সদস্যপদ প্রত্যাহার করলেও দেশটিতে সংঘটিত অপরাধের ক্ষেত্রে আদালতের এখতিয়ার রয়েছে।

দুতার্তের সাবেক মুখপাত্র সালভাদর পানেলো এই গ্রেপ্তারিকে ‘বেআইনি’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি দাবি করেন, ফিলিপাইন আইসিসি থেকে সরে আসায় এই আদালতের এখতিয়ার নেই।

আগামী ১২ মে মধ্যবর্তী নির্বাচনে তার দলের সিনেট প্রার্থীদের প্রচারণায় সহায়তা করতে সম্প্রতি হংকং গিয়েছিলেন দুতার্তে। সেখান থেকে ফেরার পরপরই মঙ্গলবার ম্যানিলা বিমানবন্দর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। স্থানীয় টেলিভিশনের ফুটেজে দেখা গেছে, তিনি লাঠি ব্যবহার করে বিমানবন্দর থেকে বের হচ্ছেন।

মধ্যবর্তী নির্বাচনে দলের সিনেট প্রার্থীদের প্রচারণায় সহায়তা করতে সম্প্রতি হংকং গিয়েছিলেন দুতার্তে। ছবি : এপি

দুতার্তে ফিলিপাইনের ইতিহাসে বিতর্কিত এক নেতা। ২০১৬ সালে তিনি মিন্দানাও দ্বীপের দক্ষিণাঞ্চল থেকে দেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন। তার কঠোর মাদকবিরোধী নীতি এবং উত্তেজনাপূর্ণ বক্তৃতা তাকে জনপ্রিয় করে তোলে। তবে সমালোচকরা বলেছেন, তার নীতি পুলিশি নির্যাতন এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকে উৎসাহিত করেছে।

তার মেয়ে সারা দুতার্তে বর্তমানে ফিলিপাইনের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং ২০২৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন। তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দুতার্তে পরিবারের সঙ্গে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়রের জোট প্রকাশ্যে ভেঙে পড়েছে।

দুতার্তেকে গ্রেপ্তারের খবরকে ফিলিপাইনের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার জোট (আইসিএইচআরপি) ‘ঐতিহাসিক মুহূর্ত’ বলে অভিহিত করেছে। সংস্থাটির চেয়ারপারসন পিটার মারফি বলেছেন, “ন্যায়বিচারের দিকে আজ এক ধাপ এগিয়েছে। দুতার্তের গ্রেপ্তার তার নৃশংস শাসনের সময়কার গণহত্যার জন্য জবাবদিহির সূচনা।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ads