ফ্যাক্টচেক: কারাগারে নয়, স্বাভাবিক মৃত্যু সাংসদ ইফতিকারের

সাধারণ মানুষের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় ছিলেন ইফতিকার উদ্দিন তালুকদার।
সাধারণ মানুষের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় ছিলেন ইফতিকার উদ্দিন তালুকদার।

সাবেক সংসদ সদস্য ইফতিকার উদ্দিন তালুকদারের (পিন্টু) কারাগারে মৃত্যুর খবরটি সঠিক নয়। তিনি নিকুঞ্জের একটি ভাড়া বাসায় মারা যান বলে তার স্বজনরা নিশ্চিত করেছেন।

২৮ জুলাই সোমবার এই সাবেক সংসদ সদস্য শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

এরপর মৃতদেহের একটি ছবিসহ সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে- কারাগারে আটক অবস্থায় নির্যাতনে তার মৃত্যু হয়েছে।

দ্য সান ২৪ খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছে, গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ইফতিকার উদ্দিনের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হলেও তিনি আটক হননি।

তার একজন ভাতিজা জানিয়েছেন, ৫ অগাস্টের পর গ্রেপ্তার এড়াতে বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনের বাসায় ঘুরে ঘুরে উনি থাকতে শুরু করেন। পরে নিকুঞ্জে বাসা ভাড়া করে একাই থাকছিলেন। সেখানেই তিনি মারা গেছেন।

এই আওয়ামী লীগ নেতা ২০০৯ সালে বিপুল ভোটে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৪ নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে লাখেরও বেশি ভোটে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো সংসদের টিকিট পান।

২০২৩ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়েন। দলটির কেন্দ্রীয় নেতা অসীম কুমার উকিলকে পরাজিত করে জয়ী হয়েছিলেন তিনি। নেত্রকোণায় তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়।

মঙ্গলবার দুই দফা জানাজা শেষে নিজ গ্রাম বলাইশিমুল ইউনিয়নের কচন্দরায় পারিবারিক কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।

পোস্ট দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর সেটি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।

এদিকে, এই সাবেক সংসদ সদস্যের মৃত্যুর খবরটি সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় একটি পোস্ট দিয়ে দাবি করেন, ইফতিকার উদ্দিন জেলখানায় নির্যাতনের শিকার হয়ে মারা গেছেন।

জয় লেখেন: “আরেকটা জেলহত্যার ঘটনা দেখলো জাতি। নেত্রকোনার এমপি ইফখারুল উদ্দিন পিন্টুকে জেলের ভেতর মধ্যযুগীয় কায়দায় নৃশংস নির্যাতন করে হ/ত্যা করেছে বর্তমান শাসনামলে জেলের ভেতর হত্যার সংখ্যা দাঁড়ালো ৩০।”

রাতে অবশ্য জয়ের পোস্টটি খুঁজে পাওয়া যায়নি। এর আগে প্রায় তিন হাজার চারশ’ মন্তব্য জমা পড়েছিল।

ইফতিকার উদ্দিনের কাছের আত্মীয় নবানুর হোসেন সাবিক জয়ের পোস্টের নিচে মৃত্যুর সঠিক তথ্য দিয়ে একটি মন্তব্য করেছিলেন।

তিনি লেখেন, “আলহাজ্ব ইফতেখার উদ্দিন তালুকদার পিন্টু সাহেব জেলে ছিলেন না। উনি নিকুঞ্জে একটি ভাড়া বাসায় একা ছিলেন। ওখানে মৃত্যুবরণ করেন। যদিও মৃত্যুটা রহস্যজনক। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের কেউ এই পরিবারের সাথে যোগাযোগ করেনি সহানুভূতি জানানোর জন্য।”

মৃত্যু ঘিরে গুজব ছড়ানো হচ্ছে দাবি করে কারা অধিদপ্তর থেকেও বৃহস্পতিবার বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়।

অধিদপ্তরের এআইজি স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নেত্রকোন-৩ আস‌নের সা‌বেক সংসদ সদস্য ইফ‌তিকার উদ্দিন তালুকদার পিন্টুর কারাগা‌রে মৃত্যু সংক্রান্ত সামা‌জিক যোগা‌যোগ মাধ্যমের খবর‌টি স‌ঠিক নয়। তি‌নি কারাগা‌রে আটক ছি‌লেন না। বিষয়‌টি এক‌টি গুজব।

নেত্রকোনা-৩ (কেন্দুয়া-আটপাড়া) আসনের এই সাবেক সংসদ সদস্য স্ত্রী, এক ছেলে, দুই মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী ও শুভাকাঙ্ক্ষী রেখে গেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৬২ বছর।

আরও পড়ুন