জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও কলাম লেখক বিভুরঞ্জন সরকারের অস্বাভাবিক মৃত্যু শুধু গণমাধ্যম নয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তীব্র আলোচনার জন্ম দিয়েছে। নিখোঁজের একদিন পর মেঘনা নদী থেকে তার মরদেহ উদ্ধারের পাশাপাশি ‘শেষ লেখা’ নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক।
৭১ বছর বয়সী বিভুরঞ্জন সরকার বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে বাসা থেকে অফিসে যাওয়ার কথা বলে বের হয়েছিলেন। এরপর তিনি আর ফেরেননি। পরদিন বিকেলে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় মেঘনা নদী থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
মৃতদেহ শনাক্ত করেন তার ভাই চিররঞ্জন সরকার ও ছেলে ঋতু সরকার। তবে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে পরিবার কোনো মন্তব্য করতে চায়নি; এটি আত্মহত্যা নাকি পরিকল্পিত সে বিষয়েও তারা অনিশ্চিত।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম দাবি করেছে, ২১ অগাস্ট সকাল সোয়া ৯টায় তাদের কাছে একটি খোলা চিঠি পাঠিয়েছিলেন বিভুরঞ্জন, যেটির ফুটনোটে লেখা ছিল “জীবনের শেষ লেখা হিসেবে এটা ছাপতে পারেন।”
অর্থ্যাৎ বাসা থেকে বের হওয়ার আগেই ওই মেইলটি পাঠিয়েছিলেন বিভুরঞ্জন।
অনলাইন পত্রিকাটি দাবি করেছে, ওই খোলা চিঠির বিষয়টি বিভুরঞ্জনের পরিবারকে জানানো হয়েছিল। তবে এই জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকের ছেলে ঋতু সরকার গণমাধ্যমকর্মীদের জানিয়েছেন, ওই খোলা চিঠির ব্যাপারে তারা শুক্রবার জানতে পেরেছেন।
ঋতু সরকার সমকালকে বলেছেন, “বাবা বৃহস্পতিবার সকালে মাকে বলে গিয়েছিল বিকেল ৫টায় বাড়ি ফিরবে। প্রতিদিন বিকেলের দিকেই বাড়ি ফেরে। ওইদিন ফোন বাড়িতে রেখেছিল। মাঝে মধ্যে বাড়িতে ফোন রেখেই যান।”
“খোলা চিঠির ব্যাপারে আজই জানতে পারি। এ বিষয় আমাদের কারও জানা ছিল না,” যোগ করেন তিনি।
দুই পক্ষের ভিন্ন বক্তব্য নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় তৈরি হয়েছে নানা প্রশ্ন। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন- চিঠিটি সময়মতো প্রকাশ বা পরিবারকে অবহিত করা হয়নি কেন?
শহীদ আলতাফ মাহমুদের মেয়ে কলামিস্ট শাওন মাহমুদ লিখেছেন, “এমন একটি মেইল যার হাতে গিয়েছিল, সে কি মানুষ না এআই! তার কি একবারও মনে হয়নি যে বিভুদা শেষ কথা বলছেন! তিনি কেমন করে এইরকম একটি মেইল আজ প্রকাশ করলেন! গতকালকেই তো বিভুদার সহকর্মী বা পরিবারকে এই মেইলের কথা জানানো প্রয়োজন ছিল, তাই না! হয়তো বা মেইলটি পড়েও দেখেন নাই, সে ব্যক্তি, বিভুদার কলাম চলে না আজকাল, এই ভেবে!”
“আজ প্রকাশ করেছেন, মিলিয়ন মিলিয়ন হিট হবার আশায়, তাই না! ভাই আপনারা পারেন, আপনাদের দিয়েই হবে,” যোগ করেন তিনি।
৭১ বছর বয়সী বিভুরঞ্জন সরকার দৈনিক আজকের পত্রিকার জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক ছিলেন। নিয়মিত কলাম লিখতেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমেসহ বিভিন্ন পত্রিকায়।
এদিকে, শুক্রবার রাতে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে ভাইয়ের লাশ শনাক্ত করার পর বিভুরঞ্জনের ছোট ভাই চিররঞ্জন সরকার বলেছেন, “তিনি কীভাবে মারা গেলেন, সেটি আমরা জানি না। আমি শুধু এই টুকুই বলব, এমন পরিণতি যেন আর কারও না হয়।”
বিভুরঞ্জন সরকারের পরিবারের কারও সঙ্গে কোনো মনোমালিন্য ছিল না জানিয়ে তিনি বলেন, “কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীদের সঙ্গে কিছু ছিল কি না আমরা জানি না। এটি আত্মহত্যা, না খুন, না পরিকল্পিত কোনো ঘটনা, আমরা জানি না। এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।”
বৃহস্পতিবার সকালে অফিসে যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হওয়ার পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন তিনি।
শুক্রবার বিকেলে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় মেঘনা নদীতে একজনের মরদেহ ভাসতে দেখে ৯৯৯–এ ফোন করে বিষয়টি পুলিশকে জানায় স্থানীয়রা। পরে বিকেল পৌনে ৪টার দিকে লাশটি উদ্ধার করা হয়।
উদ্ধারের পর রাত পৌনে নয়টায় মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে গিয়ে মরদেহ শনাক্ত করেন বিভুরঞ্জনের ভাই চিররঞ্জন সরকার ও ছেলে ঋতু সরকার।
এ সম্পর্কিত আরও খবর: