ফিনল্যান্ডের ডায়েরি: শীত বলছে যাবো যাবো

শীতের দিনগুলোতে সাগরের পানিও এভাবে বরফে পরিণত হয় ফিনল্যান্ডে, সাগরের বুকে পোষা কুকুর নিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন একজন স্থানীয় অধিবাসী। ছবি: দ্য সান ২৪
শীতের দিনগুলোতে সাগরের পানিও এভাবে বরফে পরিণত হয় ফিনল্যান্ডে, সাগরের বুকে পোষা কুকুর নিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন একজন স্থানীয় অধিবাসী। ছবি: দ্য সান ২৪

এখানে শীত যাবো যাবো করছে। রোদ ঝলমলে সকাল। অবশ্য চারপাশে এখনও বরফের স্তূপ। গতকাল রাতেও তুষারপাত হয়েছে। ফিনিশরা বলে এটা নাকি শীতের বিদায়বার্তা। আর যাই হোক এখানকার রোদমাখা সকাল মনটা অসম্ভব ভালো করে দেয়। মুহূর্তে আমরা ভুলে যাই প্রায় ছয় মাসের ধকল।

আমি প্রায় সময় ভাবি, আমরা যেটাকে প্রকৃতির বিরূপতা বলছি সেটাতো তার স্বাভাবিক আচরণ। মানব সভ্যতার শুরু থেকেই মানুষ প্রকৃতিকে বশ করতে চেয়েছে, নিজেদের অনুকূলে আনার প্রয়াস জারি রেখেছে। পেরেছে কি? কতটুকু পেরেছে বিজ্ঞান!

এসব ভিন্ন প্রসঙ্গ। বরং যুদ্ধের কথা বলি। ফিনল্যান্ডের সঙ্গে রাশিয়ার সীমান্ত প্রায় সাড়ে ১৩শ’ কিলোমিটার। যুদ্ধের আঁচ তাই ভালো করেই অনুভূত হয়। নিত্যপণ্যের দাম তো বেড়েছেই, উৎকণ্ঠাও কম নেই। দিনকয়েক আগে আমাদেরকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে জরুরি অবস্থায় কোথায় কীভাবে আশ্রয় নিতে হবে।

বলে রাখি এই দেশটার জ্বালানির প্রায় পঁচাত্তর ভাগ রাশিয়ার উপর নির্ভরশীল। কোনো মারণাস্ত্র ব্যবহার করতে হবে না, ওরা চাইলে আমরা অন্ধকারে থাকবো, শীতে কাহিল হবো! এদিকে থেকে ফিনিশদের অবস্থা খানিকটা বাংলাদেশের মতো। চীন এবং ভারতের সঙ্গে ভারসাম্য যেমন রক্ষা করতে হয়, তেমনি গ্লোবাল মোড়লের তুষ্টি ছাড়াও বাঁচা দায় বাংলাদেশের।

ভাবতে ভালোই লাগে, বাংলাদেশ বিদ্যুতে স্বনির্ভর হতে চলেছে। মরা গঙ্গা জেগে উঠছে। নদীর তীরে নয়নাভিরাম ‘ওয়াক ওয়ে’ ঘিরে ফেলছে আমাদের রাজধানী। আমাদের মানসিকতা মেট্রোর উপযোগী হোক বা না হোক আকাশছোঁয়া রেল যোগাযোগ স্থাপিত হতে চলেছে। দূষিত বায়ু কিংবা শব্দ দূষণে আমরা শীর্ষে থাকতে পারি, পৃথিবীর সবচেয়ে ‘সুখি’ দেশেও এমন অনেক অপূর্ণতা আছে যা খবরের কাগজে আসে না। তাই তারা আপেক্ষিক ভাবে সুখি!

সুখি বা দুঃখির কথা বলে লেখা দীর্ঘ করবো না। তাও বলি, এখানে চাল-নুনের দাম বাড়লেও কেউ উচ্চবাচ্য করে না, জ্বালানির দাম বাড়লে পেট্রল পাম্প অবরোধ হয় না। কারণ বাজার তদারকি ব্যবস্থা খুবই শক্তিশালী। যুদ্ধকালীন সময়ে কাঁচামালের অভাব পড়লেও যেন খাদ্যমান বজায় রাখা যায় সেই ডিক্রি জারি করে দিয়েছে এরই মধ্যে। মোদ্দাকথা হলো, কিছু না থাকুক সব কিছু নিয়মের মধ্যে চালানোর বাধ্যকতা রয়েছে। আমার কাছে এখানকার এই বিষয়টি বেশ ভালো লাগে। নিত্যপণ্যের দাম ৩ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ার পূর্বাভাস অন্তত ছয় মাস আগেই ঘোষণা এসেছিল ব্রেক্সিটের ফলস্বরূপ। অবশ্য জ্বালানি তেলের দাম নিয়ে এরকম কোনো আভাস পাইনি আগে।

যাইহোক, গতকাল সময় বদলে গেছে এখানে। এখন আমরা বাংলাদেশ থেকে তিন ঘণ্টার দুরত্বে, অবশ্য সেটা সময়ের মানদণ্ডে! সন্ধ্যা ছয়টায় রোদের হাতছানি। জানালার পর্দা গলে ছুঁয়ে যায় মিষ্টি রোদ। ভালো লাগে। এইসব বেশ লাগে। আজকের মতো এখানেই ইতি। শুভ অপরাহ্ন। সুন্দর থাকুন সবাই।

আরও পড়ুন