ফিনল্যান্ডে বেকারত্বের সংখ্যা বিগত যেকোনো সময়কে ছাড়িয়ে গেছে। একুশ শতকে এসে বেকারত্বের যে চিত্র ফুটে উঠেছে তাতে শিক্ষিত, বিশেষকরে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রিধারী বেকারের সংখ্যা আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি।
দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম উলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতবছর ছিল ফিনিশ শ্রমবাজারের জন্য সবচেয়ে কঠিন সময়।
আকাবা’র এক সমীক্ষায় উঠে এসেছে, গতবছর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে বের হওয়া স্নাতকোত্তর, প্রকৌশলী কিংবা অন্যান্য উচ্চ শিক্ষিত পেশাজীবীদের মধ্যেই এই বেকারত্বের হার অতি মাত্রায় বেড়েছে।
আকাবা’র প্রধান অর্থনীতিবিদ পাসি সরিওনেন বলেন, উচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তিদের জন্য বেকারত্বের এই পরিস্থিতি হতাশাজনক।
এমনকি গতবছর থেকে সেবিকা বা নার্সদের জন্যও ভালো চাকরির সম্ভাবনা সঙ্কুচিত হয়ে এসেছে। অথচ এই খাতে দীর্ঘদিন ধরে শ্রমিক ঘাটতি ছিল, এখন চাকরিরও অভাব দেখা দিয়েছে।
সামাজিক ও স্বাস্থ্য খাতে, নার্সদের পাশাপাশি, বেকার চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে সমাজকর্মী এবং ফিজিওথেরাপিস্টরাও রয়েছেন।
একই চিত্র দেখা যায়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে উচ্চ শিক্ষিত প্রকৌশলীদের মধ্যেও। কিছুদিন আগেও যাদের সামনে ছিল চাকরির সুবর্ণ সুযোগ, সেই আকর্ষণীয় খাতও এখন চাকরিশূন্য। এই খাতের কোম্পানিগুলিতে ছাঁটায়ের দর কষাকষির আলোচনায় পরিসংখ্যানের চিত্র স্পষ্ট।
করোনাভাইরাস মহামারির সময় নতুন স্নাতক সম্পন্ন করা শিক্ষার্থীরা যেমন সংগ্রাম করছিলেন, তেমনই সংগ্রাম করছেন এখন। সর্বশেষ স্নাতকদের জন্য প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই কাজ খুঁজে পাওয়া আরও কঠিন হয়ে পড়েছে।
পাসি সরিওনেন বলেন, শেষবার এমনটি দেখা গিয়েছিল ১৪ বছর আগে, তখনও চাকরির সুযোগ সীমিত ছিল স্নাতক সম্পন্ন করা শিক্ষার্থীদের জন্য।
“এই পরিস্থিতি করোনাকালীন সময়ের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। অবশ্য এখন সেই সময়ের চেয়ে খারাপ অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের। বাজারে চাকরির সুযোগ খুবই সীমিত,” যোগ করেন তিনি।
সদ্য স্নাতক ডিগ্রিধারীদের মধ্যে ভাষা, সামাজিক ও স্বাস্থ্যসেবা, সামাজিক বিজ্ঞান এবং কম্পিউটার বিজ্ঞান ও টেলিযোগাযোগে যারা পরাশোনা সম্পন্ন করে বেরিয়েছেন তাদের মধ্যেই বেকারত্বের হার বেশি বেড়েছে।
পাসি সরিওনেন বলেন, বেকারত্বের দৈর্ঘ্যেও চাকরির অভাব প্রতিফলিত হয়। অনেকেই এক বছরেরও বেশি সময় ধরে কাজ খুঁজছেন।
“উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন দীর্ঘমেয়াদী বেকারের সংখ্যা ২০১৫-২০১৬ সালের আগের সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছে,” সরিওনেন বলেন।
বর্তমানে প্রায় ১৭ হাজার বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রিধারী রয়েছেন, যারা এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বেকার।
“মনে হচ্ছে সংখ্যাটি সহজেই তা ছাড়িয়ে যাবে, সম্ভবত জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে,” বলেন তিনি।
পাসি সরিওনেন আশঙ্কা করছেন, এই বেকারত্ব দীর্ঘ সময়ের জন্য উচ্চমাত্রায় থাকতে পারে।
দেশটির অর্থনৈতিক বিষয়ক ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় গেল সপ্তাহে যে ‘এমপ্লয়মেন্ট বুলেটিন’ প্রকাশ করেছে তাতে দেখা গেছে, দেশটিতে একদিকে যেমন বাড়ছে দীর্ঘমেয়াদি বেকারত্ব, অন্যদিকে কমছে শূন্যপদের সংখ্যা।
প্রতি মাসের শেষে হালনাগাদ তথ্য তুলে ধরা হয় ওই বুলেটিনে; সর্বশেষ তথ্য ছিল ডিসেম্বর পর্যন্ত।
হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের নভেম্বরের তুলনায় ডিসেম্বরে ফিনল্যান্ডে বেকার চাকরিপ্রার্থী বেড়েছে ২৯ হাজার ৯০০ জন। এর বিপরীতে, নতুন শূন্যপদের সংখ্যা ছিল মাত্র ২২ হাজার ৮০০টি, যা আগের বছরের তুলনায় ২২ হাজার কম।
আর বছরের হিসেবে ২০২৪ সালে মোট শূন্যপদ ছিল ৪৩ হাজার ৪০০, যা তার আগের বছরের তুলনায় ৩৮ হাজার ৭০০ কম।
এ সম্পর্কিত আরও খবর:
শান্তির দেশ ফিনল্যান্ডে ‘বেকারত্বের অশান্তি’, নেই নতুন কর্মসংস্থান