শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আমদানি কার্গো কমপ্লেক্সে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের মধ্যেও অক্ষত ছিল স্ট্রং রুমের ভল্ট। কিন্তু সেই ভল্ট থেকেই চুরি হয়েছে সাতটি আগ্নেয়াস্ত্র। সোনা, হীরা ও অন্যান্য মূল্যবান জিনিস অক্ষত থাকলেও ‘উধাও’ কেবল অস্ত্র।
গত রোববার নিয়মিত পরিদর্শনের সময় অস্ত্র চুরির বিষয়টি ধরা পড়ে। চুরি হওয়া অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এম৪ কারবাইন রাইফেল ও ব্রাজিলের টরাস পিস্তল। তবে ঠিক কোন ধরনের অস্ত্র কতটি খোয়া গেছে, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
সুরক্ষিত ওই ভল্ট ভেঙে অস্ত্র চুরির ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে এবং বিষয়টি পুলিশ সদর দপ্তরেও জানানো হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার মহিদুল ইসলাম বলেন, ভল্ট ভাঙা নিয়ে বিমানবন্দর থানায় জিডি হয়েছে, তবে কতটি অস্ত্রের উল্লেখ আছে তা তিনি নিশ্চিত নন।
গত ১৮ অক্টোবর বিকেলে আমদানি কার্গো কমপ্লেক্সে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যায় বিপুল পরিমাণ আমদানি পণ্য।
ব্যবসায়ীদের দাবি, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা। তবে আগুনে কিছুটা তাপ লাগলেও অক্ষত ছিল স্ট্রং রুমের ভল্ট, যেখানে সোনা, হীরা, গুরুত্বপূর্ণ নথি ও আগ্নেয়াস্ত্র রাখা ছিল।
২৪ অক্টোবর প্রথম দফায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) ও একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি ওই ভল্ট পরিদর্শন করেন। তারা তখন লক খোলা এবং ট্রাংক ভাঙা অবস্থায় দেখতে পান। ২১টি আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে তিনটি আংশিক পোড়া এবং ১৮টি অক্ষত অবস্থায় ছিল। পরে ভল্ট মেরামত করে পুনরায় সিলগালা করে দেওয়া হয়।
অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে ভল্টের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। সংস্থাটির সহকারী ব্যবস্থাপক (নিরাপত্তা) মো. জামাল হোসেন ২৮ অক্টোবর বিমানবন্দর থানায় জিডি করেন। ঘটনাস্থল থেকে তালা কাটার সরঞ্জামসহ আলামত সংগ্রহ করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফরেনসিক দল।
বিমানবন্দর নিরাপত্তা সূত্র জানায়, ভল্টে মূলত বাংলাদেশ পুলিশের জন্য এবং বৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ীদের আমদানি করা আগ্নেয়াস্ত্র সংরক্ষিত ছিল। তবে অগ্নিকাণ্ডে নথিপত্র পুড়ে যাওয়ায় অস্ত্রের সঠিক সংখ্যা নিশ্চিত করা যায়নি। দ্বিতীয় দফায় পরিদর্শনে দেখা যায়, ২১টির মধ্যে সাতটি অস্ত্র নেই। এরপর অবশিষ্ট ১৪টি অস্ত্র থানায় সরিয়ে নেওয়া হয়।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, ভল্টে সোনা ও হীরা থাকলেও শুধু আগ্নেয়াস্ত্র চুরি রহস্যজনক। তাদের ধারণা, এটি পরিকল্পিত কাজ হতে পারে।
বিমানবন্দর থানার উপপরিদর্শক মাইনুল ইসলাম জানান, তদন্ত চলছে। কার্গো কমপ্লেক্সের আশপাশের সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো আগুনে পুড়ে যাওয়ায় কোনো ফুটেজ পাওয়া যায়নি। কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানা যাবে।
এদিকে, বিমানবন্দরের ক্ষতিগ্রস্ত সিসিটিভি ক্যামেরা এখনো সচল করা হয়নি, নতুন ক্যামেরাও বসানো হয়নি। ফলে ফুটেজের মাধ্যমে চোর শনাক্তের সুযোগ নেই।
এ ঘটনায় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
ঘটনাটির পর নিরাপত্তা সংস্থা ও গোয়েন্দা বিভাগগুলোর মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। তদন্তকারীরা বলছেন, সোনা ও হীরার মতো মূল্যবান জিনিসপত্র যেখানে খোয়া গেল না, সেখানে নাই হয়ে গেল কেবল কেবল অস্ত্র! এখনও ওই দুর্ঘটনার পেছনে অন্য কোনো পরিকল্পনা ছিল কিনা তা নিয়েই তাদের ভাবাচ্ছে।



