অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড বন্যা পরিস্থিতির অবনতির ফলে বন্ধ হয়ে গেছে ওই অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক। জরুরি ভিত্তিতে হাজার হাজার বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। বাড়িঘর হয়ে পড়েছে বিদ্যুৎহীন।
এখন পর্যন্ত বন্যায় এক নারীর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
বন্যায় কুইন্সল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলের টাউনসভিল, ইংহাম এবং কার্ডওয়েলের বাসিন্দারা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
‘রেকর্ড’ ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে এ বন্যা দেখা দেয়। শনিবার থেকে এ পর্যন্ত ১ দশমিক ৩ মিটার (৪.২ ফুট) বৃষ্টিপাত হয়েছে। যার ফলে ওই অঞ্চলের নদী ও জলাধারগুলো উপচে পড়ছে।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ সোমবার এক ব্রিফিংয়ে বলেন, এ বিপর্যয় ‘অস্ট্রেলীয়দের সেরা দিকটি’ উন্মোচিত করেছে।
সোশাল মিডিয়ার এক্স হ্যান্ডলে তিনি লিখেন, “প্রয়োজনে অস্ট্রেলীয়রা একে অপরকে কীভাবে সহযোগিতা কর সেটাই দেখছি।”
বন্যার পানি আরও কয়েকদিন থাকবে বলেও এ পোস্টে তিনি জানান।
কুইন্সল্যান্ডের প্রধান সড়ক ‘ব্রুস হাইওয়ে’ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সবচেয়ে দুর্গত এলাকাগুলোতে সাহায্য প্রচেষ্টা ব্যাহত হচ্ছে।
কুইন্সল্যান্ড ট্রাকিং অ্যাসোসিয়েশন এবিসিকে জানিয়েছে, একটি সেতু আংশিক ধসে যাওয়ায় অতিরিক্ত ৭০০ কিলোমিটার পথ ঘুরে যেতে হচ্ছে। ফলে জরুরি সরবরাহ পৌঁছাতে বিলম্ব হতে পারে।
এদিকে ইংহামে রোববার উদ্ধারের সময় ইমার্জেন্সি সার্ভিসের (এসইএস) নৌকা ডুবে ৬৩ বছর বয়সী এক নারীর মৃত্যুর ঘটনায় সমবেদনা জানিয়েছেন রাজ্যের প্রিমিয়ার ডেভিড ক্রিসাফুলি।
সোমবার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “তাদের এ ক্ষতির জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত।”
এছাড়া রোজ নদী থেকে বন্যার হুমকি অব্যাহত থাকায় কথিত ‘ব্ল্যাক-জোন’ টাউনসভিলের ছয়টি অঞ্চলের বাসিন্দাদের এখনই বাড়ি না ফিরতে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
![](https://thesun24.com/wp-content/uploads/2025/02/Queensland-Flood-1.jpg)
অস্ট্রেলিয়ার ব্যুরো অফ মেটিওরোলজি জানিয়েছে, ওই অঞ্চলের ছয়মাসের বৃষ্টি গত তিনদিনে হয়েছে।
ওই অঞ্চলে মঙ্গলবার পর্যন্ত পানি সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছে আরও প্রায় দুই হাজার বাড়ি প্লাবিত করতে পারে বলে সতর্কতা এসেছে।
ইংহামের এক বাসিন্দা টাউনসভিল বুলেটিনকে জানান, তাদের বাড়ি প্লাবিত হওয়ার পর বৃদ্ধ মাকে নিয়ে জরুরি সেবার সহযোগিতার জন্য সাত ঘণ্টা অপেক্ষায় ছিলেন।
তিনি বলেন, “আতঙ্কিত হয়ে আমি কাঁদছিলাম। যখন জরুরি সেবা নম্বরে ফোন দিলাম কেউ ধরে ব্যস্ত আছে জানিয়ে কেটে দিল।”
বৃষ্টি কমলেও নদীর পার্শ্ববর্তী এলাকার বাসিন্দাদের জন্য বন্যা সতর্কতা এখনও বহাল আছে বলে জানান ওই নারী।
ক্রিসাফুলি জানিয়েছেন, হারবার্ট নদীর পানি যদি ১৫ দশমিক ২ মিটার উচ্চতা অতিক্রম করে তবে ইংহাম গত ৬০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার সম্মুখীন হবে।
জরুরি সেবার কর্মীরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। রোববার রাতেই তারা সাহায্য চেয়ে করা ৪৮০টি কল পেয়েছে। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ফলে অনেকে কল করে সাহায্যের আবেদনও জানাতে পারছে না বলে ধারণা তাদের।
এ অবস্থায় এসইএসের উপকমিশনার শেন চেলেপি মানুষকে সতর্ক থাকার এবং সম্ভব হলে প্রতিবেশীদের খোঁজ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
টাউনসভিল, ইংহাম এবং কার্ডওয়েলের বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে বর্তমানে প্রায় ৪০০ মানুষ আশ্রয় নিয়েছে বলেও জানান তিনি।
এছাড়া বন্যায় স্বাভাবিক আবাস্থল থেকে ভেসে আসা কুমির থেকেও স্থানীয় বাসিন্দাদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
উষ্ণমণ্ডলীয় অবস্থানের কারণে কুইন্সল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলে ঝড়, ঘূর্ণিঝড় এবং বন্যা সাধারণ ঘটনা।