ফ্লোরিডা ইউনিভার্সিটিতে এলোপাথাড়ি গুলি, দু’জন নিহত

অভিযুক্ত ফিনিক্স ইকনার
অভিযুক্ত ফিনিক্স ইকনার

আবারও আক্রান্ত আমেরিকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এবার গুলিতে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল ফ্লোরিডা স্টেট ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাস। বন্দুকধারী এক ছাত্রের হামলায় দু’জন নিহত হয়েছে, তবে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নন। গুরুতরভাবে আহত হন অন্তত ৫ জন। ঘটনার পরপরই ক্যাম্পাসে জারি করা হয় জরুরি সতর্কতা।

স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়নের কাছাকাছি ঘটা এই ঘটনার সময় ক্যাম্পাসজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও এই ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ

বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল লাইব্রেরিতে সে সময়ে ছিলেন ২০ বছর বয়সী এক ছাত্র, জোশুয়া সর্ম্যান্স। তিনি বলেন, “হঠাৎ করে সাইরেন বেজে ওঠে, সকলে চিৎকার করতে থাকে। পুলিশ এসে আমাদের লাইব্রেরি থেকে হাত তুলে বের করে নিয়ে যায়।”

২১ বছর বয়সি আর এক ছাত্র রায়ান সিডারগ্রেন নামের এক কমিউনিকেশনস স্টুডেন্টের কথায়, “আমরা ৩০ জন একসঙ্গে স্টুডেন্ট ইউনিয়নের নীচতলায় আশ্রয় নেই। দেখলাম ছুটে পালাচ্ছে অনেকে। তখন শুধু বাঁচার কথা মাথায় ছিল।”

বন্দুকধারীর পরিচয়

পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তের নাম ফিনিক্স ইকনার। বয়স ২০। তিনি নিজেই ফ্লোরিডা স্টেট ইউনিভার্সিটির ছাত্র এবং লিওন কাউন্টি শেরিফের দপ্তরের একজন ডেপুটি শেরিফের ছেলে।

ফ্লোরিডা স্টেট ইউনিভার্সিটির পুলিশ জানিয়েছে, ইকনার তার মায়ের লাইসেন্সপ্রাপ্ত আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেই এই হামলা চালান। ঘটনাস্থল থেকে অস্ত্রটি উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়াও তার কাছে একটি শটগান পাওয়া গেছে, যদিও তা তিনি ব্যবহার করেছিলেন কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয়।

নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর খবরে জানা যায়, কিছু প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, প্রথমে ইকনার একটি রাইফেল ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করেন, তারপর সেটি ফেলে পিস্তল দিয়ে গুলি চালাতে থাকেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে জরুরি সতর্কতা

ঘটনার পরপরই ৪৪ হাজারেরও বেশি ছাত্রছাত্রীর এই ক্যাম্পাসে জরুরি লকডাউন জারি করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করে, ‘দয়া করে সব দরজা-জানালা বন্ধ করুন এবং নিরাপদ আশ্রয়ে থাকুন। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে গিয়েছে।’

একাধিক বার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সতর্কবার্তা পাঠানো হয়, যাতে কেউ ক্যাম্পাসে না আসেন এবং সবাই ঘরের মধ্যে থাকেন।

সেইদিনের সমস্ত ক্লাস ও অনুষ্ঠান বাতিল করে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। যারা ক্যাম্পাসে আসেননি, তাদের স্পষ্টভাবে জানানো হয় ক্যাম্পাস থেকে দূরে থাকতে। জরুরি অবস্থায় যোগাযোগের জন্য ৯১১ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করার নির্দেশও দেওয়া হয়।

সাম্প্রতিক ক্যাম্পাসে গুলি

আমেরিকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এ ধরনের গুলি চালানোর ঘটনা নতুন নয়। ২০০৭ সালে ভার্জিনিয়া টেকে ঘটা ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞে ৩২ জন নিহত হয়েছিলেন।

২০২৩ সালেও দুটি বড় কলেজে এমন ঘটনা ঘটে। একটি মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটিতে, ৩ জন ছাত্র নিহত হন, অপরটি ইউনিভার্সিটি অফ নেভাডা, লাস ভেগাসে, যেখানে ৩ জন অধ্যাপক প্রাণ হারান। স্কুলগুলোতেও এন ঘটনা নতুন নয়।

পরপর ঘটে যাওয়া এই ঘটনাগুলো মার্কিন সমাজে বন্দুক আইন এবং ক্যাম্পাস নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে প্রতিনিয়ত। তবে পরিস্থিতি যে এখনও অন্ধকারেই আছে, তা বারবারই প্রমাণ হয়ে যায় এই ধরনের ঘটনায়।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ads