চুক্তির মেয়াদ বাড়িয়ে আরও দুই বছরের জন্য প্রধান কোচ হিসেবে থেকে যাওয়া জেমস পিটার বাটলারের বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ এনেছেন নারী ফুটবলাররা। এর মধ্যে আছে ‘গালিগালাজ করা’, ‘বডি শেমিং’, ‘মানসিক নির্যাতন’ -এর মতো গুরুতর অভিযোগ।
ক’দিন ধরে চলা উত্তপ্ত পরিস্থিতির বিস্ফোরণ হলো বৃহস্পতিবার। সংবাদ সম্মেলনে এসে আনুষ্ঠানিকভাবে বাটলারের বিরুদ্ধে অভিযোগের ঢালি মেলে ধরলেন নারী ফুটবলাররা।
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন ভবনে বৃহস্পতিবার লিখিত বিবৃতি পরিস্থিতি ব্যখ্যা করেন সাবিনা-মনিকা-মারিয়ারা। “নারী জাতীয় ফুটবল দলের হেড কোচ পিটার বাটলার ইস্যু নিয়ে আমাদের অবস্থান, প্রশ্ন এবং যত অভিযোগ”- এই শিরোনামে তিন পাতার অনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে পিটারের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার পাশাপাশি কাঠগড়ায় তোলা হয়েছে বাফুফেকেও।
উইমেন’স সাফ জয়ী অধিনায়ক সাবিনা খাতুন, মাসুরা পারভীন, মারিয়া মান্দা, রূপনা চাকমা, মাতসুশিমা সুমাইয়াসহ মোট ১৮ জন বিবৃতিতে সাক্ষর করেন।
তারা দাবি করেন, গত অক্টোবরের শিরোপা ধরে রাখার অভিযানে বাংলাদেশকে ‘ডোবাতে চেয়েছিলেন’ পিটার।
বিবৃতিতে তারা বলেন, অপারগ হয়ে তারা কোচের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন। পাশাপাশি কবে থেকে বাটলারের সঙ্গে তাদের দূরত্ব তৈরি হয়েছে, কেন হয়েছে সেসব বিষয়েরও ব্যাখ্যা দেন টানা দুইবার সাফ শিরোপা এনে দেওয়া বাংলাদেশের নারী ফুটবলাররা।
তারা অভিযোগ করেন, কাঠমান্ডুতে অনুষ্ঠিত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ইচ্ছেমতো একাদশ গড়ে তাদের কোচ দলকে ডোবাতে চেয়েছিলেন।
“সিনিয়রদের বাদ দিয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে আসরে নিজেদের প্রথম ম্যাচের একাদশ সাজানো, পরে সিনিয়রদের ফিরিয়ে শক্তিশালী ভারতের বিপক্ষে ঘুরে দাঁড়ানো, এসব প্রসঙ্গ তুলে ধরা হয় বিবৃতিতে।
দেশের প্রয়োজনে সবটুকু নিংড়ে দিয়েও বাফুফের কাছ থেকে ‘প্রতিদান’ না পাওয়ার অভিযোগও আনা হয় বিবৃতিতে।
এতে তারা উল্লেখ করেন, “(সাফে) আমরা যদি ব্যর্থ হতাম, বাফুফে কর্তারা এবং দেশের মানুষের কাছে আমরা ভিলেন হয়ে যেতাম। ওই ম্যাচেই আমাদের ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যেত। এটা বুঝেও আমরা ঝুঁকি নিয়েছিলাম দেশের হয়ে লড়াই করার জন্য। দেশের জন্য আমাদের এই লড়াই ও আবেগ, ভালোবাসার মূল্য ফুটবল ফেডারেশন থেকে আশা করেছিলাম। সেটা হয়নি।”
ফুটবল কোচ বাটলারের চুক্তি নবায়নের প্রসঙ্গ টেনে বিবৃতিতে বলা হয়, তারা এ ধরনের সিদ্ধান্তের জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না।
“এই বিতর্কিত ব্যক্তির সঙ্গে আরও দুই বছরের চুক্তি নবায়ন করেছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। এই সিদ্ধান্তে মেয়েদের দাবি-দাওয়াকে সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করা হয়েছে।”
নেপালের ওই সব ঘটনা সমাধানে ইংলিশ কোচের কোনো প্রচেষ্টা না থাকা, সাফ চলাকালে জার্সি নাম্বার বলতে দেরি করায় কৃষ্ণা রানী সরকারের দিকে তেড়ে যাওয়া, মাঠ ও মাঠের বাইরেও প্রতিনিয়ত দুর্ব্যবহার এবং হাসি-ঠাট্টা করা, দলে সিনিয়র-জুনিয়রের কথা বলে বিভাজন সৃষ্টি, মেয়েদের পোশাক-আশাক নিয়ে বিরূপ মন্তব্যসহ বডি শেমিংও গালিগালাজ করার অভিযোগও করেন মেয়েরা।
এই পরিস্থিতিতে সাবিনারা তাকিয়ে আছেন বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়ালের দিকে। সমস্যার সমাধান না হলে পিটারের কোচিংয়ে কোনো অনুশীলন না করার বার্তা দিয়ে বিবৃতি শেষ করেছেন সাবিনারা।
কোচের অধীনে প্রশিক্ষণে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে তারা বলেন, “আমরা আশা করছি, বাফুফের মাননীয় সভাপতি বিষয়টি গুরুত্বসহকারে নিয়ে আশু সমাধানের ব্যবস্থা নেবেন। এর আগ পর্যন্ত আমরা পিটারের অধীনে কোন ট্রেনিং ক্যাম্পে অংশ নেব না।”
এর পেছনে যুক্তিও তুলে ধরেন বাংলাদেশের নারী ফুটবল দলের খেলোয়াড়েরা।
“যেহেতু গত অক্টোবরের পর কোনো ফুটবলারের সঙ্গে বাফুফে কোনো চুক্তি নবায়ন করেনি, তাই আইনত বাফুফে আমাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার অধিকার রাখে না। তারপরও যদি সেরকম কিছু করার সিদ্ধান্ত হয় এবং পিটার বাটলারকেই রেখে দেওয়ার সিদ্ধান্তে বাফুফে অনড় থাকে, তবে আমরা একযোগে পদত্যাগ করতে বাধ্য হব। ভেবে নেব, দেশের নারী ফুটবলে আমাদের প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে।”
মেয়েদের অভিযোগ প্রসঙ্গে পিটার বাটলার বেশি কিছু বলতে রাজি না হলেও সাবিনাদের ছাড়াই দল গঠন করা সম্ভব বলে আকারে ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দেন।
এ সম্পর্কিত আরও খবর: